Monday, 9 July 2018

পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারীনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন।”


জান্নাতি নারীর গুণাবলী


নারীর জান্নাত যে পথে

প্রেক্ষাপট________________-

চারদিক থেকে ভেসে আসছে নির্দয় ও পাষণ্ড স্বামী নামের হিংস্র পশুগুলোর আক্রমণের
শিকার অসহায় ও অবলা নারীর করুণ বিলাপ। অহরহ ঘটছে দায়ের কোপ, লাথির আঘাত,
অ্যাসিডে ঝলসানো, আগুনে পুড়ানো, বিষ প্রয়োগ এবং বালিশ চাপাসহ নানা দুঃসহ
কায়দায় নারী মৃত্যুর ঘটনা। কারণ তাদের পাঠ্য সূচি থেকে ওঠে গেছে বিশ্ব নবির বাণী“তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও।” “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীরনিকট উত্তম, আমি আমার স্ত্রীদের নিকট উত্তম।”


অপর দিকে চারদিক বিষিয়ে তুলছে, তাগুতি আইনের দোহাই পেড়ে পতিভক্তিশূন্য, মায়া-
ভালোবাসাহীন স্ত্রী নামের ডাইনীগুলোর অবজ্ঞার পাত্র, অসহায় স্বামীর ক্ষোভ ও
ক্রোধে ভরা আর্তনাদ। কারণ, তারা রাসূলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত “আল্লাহ ব্যতীত কাউকে
সেজদা করার অনুমতি থাকলে, আমি নারীদের নির্দেশ দিতাম তোমরা স্বামীদের সেজদা
কর।           ” মান-অভিমানের ছলনা আর সামান্য
তুচ্ছ ঘটনার ফলে সাজানো-গোছানো, সুখের সংসার, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও তছনছ হয়ে
যাচ্ছে মুহূর্তে। ক্ষণিকেই বিস্মৃতির আস্তাকুরে পর্যবসিত হচ্ছে পূর্বের সব
মিষ্টি-মধুর স্মৃতি, আনন্দঘন-মুহূর্ত। দায়ী কখনো স্বামী, কখনো স্ত্রী। আরো দায়ী
বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বিদ্যমান
ধর্মহীন, পাশ্চাত্যপন্থী সিলেবাস। যা তৈরি করেছে ইংরেজ ও এদেশের এমন
শিক্ষিত সমাজ, যারা রঙে বর্ণে বাঙালী হলেও চিন্তা চেতনা ও মন-মানসিকতায়
ইংরেজ। মায়ের উদর থেকে অসহায় অবস্থায় জন্ম গ্রহণকারী মানুষের তৈরি এ সিলেবাস
অসম্পূর্ণ, যা সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ। যে সিলেবাসে শিক্ষিত হয়ে স্ত্রী স্বামীর অধিকার
সম্পর্কে জানে না, স্বামীও থাকে স্ত্রীর প্রাপ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। একজন অপর
জনের প্রতি থাকে বীতশ্রদ্ধ। ফলে পরস্পরের মাঝে বিরাজ করে সমঝোতা ও
সমন্বয়ের সংকট। সম্পূরকের পরিবর্তে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে একে
অপরকে।
আস্থা রাখতে পারছে না কেউ কারো ওপর। তাই স্বনির্ভরতার জন্য নারী-পুরুষ
সবাই অসম প্রতিযোগিতার ময়দানে ঝাঁপ দিচ্ছে। মূলত হয়ে পড়ছে পরনির্ভর, খাবার-
দাবার, পরিচ্ছন্নতা-পবিত্রতা এবং সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রেও ঝি-চাকর কিংবা
শিশু আশ্রমের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে… 

পক্ষান্তরে আসল শিক্ষা
ও মানব জাতির সঠিক পাথেয় আল-কুরআনের
দিকনির্দেশনা পরিত্যক্ত ও সংকুচিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে কুঁড়ে ঘরে, কর্তৃত্বশূন্য কিছু
মানবের হৃদয়ে। তাই, স্বভাবতই মানব জাতি অন্ধকারাচ্ছন্ন, সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত,
কিংকর্তব্যবিমূঢ় নিজদের সমস্যা নিয়ে। দোদুল্যমান স্বীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে।
আমাদের প্রয়াস এ ক্রান্তিকালে নারী- পুরুষের বিশেষ অধ্যায়, তথা দাম্পত্য জীবনের
জন্য কুরআন-হাদিস সিঞ্চিত একটি আলোকবর্তিকা পেশ করা, যা দাম্পত্য জীবনে
বিশ্বস্ততা ও সহনশীলতার আবহ সৃষ্টি করবে।
কলহ, অসহিষ্ণুতা ও অশান্তি বিদায়
দেবে চিরতরে। উপহার দেবে সুখ ও শান্তিময়
অভিভাবকপূর্ণ নিরাপদ পরিবার।

আল্লাহ
তা’আলা বলেন :
ﺎَﻣَﻭ ٍﻦِﻣْﺆُﻤِﻟ َﻥﺎَﻛ ﺎَﻟَﻭ ٍﺔَﻨِﻣْﺆُﻣ ﺍَﺫِﺇ ﻰَﻀَﻗ
ُﻪَّﻠﻟﺍ ُﻪُﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ﺍًﺮْﻣَﺃ ْﻥَﺃ َﻥﻮُﻜَﻳ ُﻢُﻬَﻟ
ُﺓَﺮَﻴِﺨْﻟﺍ ْﻦِﻣ ْﻢِﻫِﺮْﻣَﺃ ْﻦَﻣَﻭ ِﺺْﻌَﻳ َﻪَّﻠﻟﺍ
ُﻪَﻟﻮُﺳَﺭَﻭ ْﺪَﻘَﻓ َّﻞَﺿ ﺎًﻨﻴِﺒُﻣ ﺎًﻟﺎَﻠَﺿ ﴿
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ:৩৬﴾
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের
ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে
অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে।”[১]
রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন :
ﻞﻛ ﻥﻮﻠﺧﺪﻳ ﻲﺘﻣﺃ ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻻﺇ ﻦﻣ ،ﻰﺑﺃ
ﺍﻮﻟﺎﻗ : ﺎﻳ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ؟ﻰﺑﺄﻳ ﻦﻣﻭ
: ﻝﺎﻗ ﻲﻨﻋﺎﻃﺃ ﻦﻣ ﻞﺧﺩ ،ﺔﻨﺠﻟﺍ ﻦﻣﻭ
ﻲﻧﺎﺼﻋ ﺪﻘﻓ .ﻰﺑﺃ ،ﻱﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﻩﺍﻭﺭ ﺢﺘﻓ
ﻱﺭﺎﺒﻟﺍ (১৩/২৪৯)
“আমার প্রত্যেক উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যে অস্বীকার করবে। সাহাবারা
প্রশ্ন করলেন, কে অস্বীকার করবে হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যে আমার
অনুসরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হল, সে অস্বীকার করল।”[২]


নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব______________

আল্লাহ তাআলা বলেন :
َﻥﻮُﻣﺍَّﻮَﻗ ُﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ ﺎَﻤِﺑ
ُﻪَّﻠﻟﺍ َﻞَّﻀَﻓ ْﻢُﻬَﻀْﻌَﺑ ﻰَﻠَﻋ ٍﺾْﻌَﺑ ﺎَﻤِﺑَﻭ
ﺍﻮُﻘَﻔْﻧَﺃ ْﻢِﻬِﻟﺍَﻮْﻣَﺃ ْﻦِﻣ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ﴿ :৩৪﴾
“পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব
দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদথেকে ব্যয় করে।”[৩]
হাফেজ ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন, “পুরুষ নারীর তত্ত্বাবধায়ক। অর্থাৎ
সে তার গার্জিয়ান, অভিভাবক, তার উপর কর্তৃত্বকারী ও তাকে সংশোধনকারী, যদি সে
বিপদগামী বা লাইনচ্যুত হয়।”[৪]


এ ব্যাখ্যা রাসূলের হাদিস দ্বারাও সমর্থিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, আমি যদি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে নারীদের
আদেশ করতাম স্বামীদের সেজদার করার জন্য। সে আল্লাহর শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার
জীবন, নারী তার স্বামীর সব হক আদায় করা ব্যতীত, আল্লাহর হক আদায়কারী হিসেবে
গণ্য হবে না। এমনকি স্বামী যদি তাকে বাচ্চা প্রসবস্থান থেকে তলব করে, সে তাকে
নিষেধ করবে না।”[৫]


আল্লাহ তা’আলা বলেন :
ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺐﻴﻐﻠﻟ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
“সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযতকারীনী ঐ
বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন।”[৬]
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এ আয়াতের তাফসিরে
বলেন, ‘সুতরাং নেককার নারী সে, যে আনুগত্যশীল। অর্থাৎ যে নারী সর্বদা
স্বামীর আনুগত্য করে… নারীর জন্য আল্লাহ এবং তার রাসূলের হকের পর স্বামীর হকের
মত অবশ্য কর্তব্য কোন হক নেই।'[৭]


হে নারীগণ, তোমরা এর প্রতি সজাগ দৃষ্টি

রাখ। বিশেষ করে সে সকল নারী, যারা সীমালঙ্ঘনে অভ্যস্ত, স্বেচ্ছাচার প্রিয়,
স্বামীর অবাধ্য ও পুরুষের আকৃতি ধারণ করে। স্বাধীনতা ও নারী অধিকারের নামে কোন
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, যখন ইচ্ছা বাইরে যাচ্ছে আর ঘরে ফিরছে। যখন যা মন
চাচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। তারাই দুনিয়া এবং দুনিয়ার চাকচিক্যের বিনিময়ে আখেরাত
বিক্রি করে দিয়েছে। হে বোন, সতর্ক হও, চৈতন্যতায় ফিরে আস, তাদের পথ ও সঙ্গ
ত্যাগ করে। তোমার পশ্চাতে এমন দিন ধাবমান যার বিভীষিকা বাচ্চাদের পৌঁছে
দিবে বার্ধক্যে।

নারীদের উপর পুরুষের কর্তৃত্বের কারণ :_________

পুরুষরা নারীদের অভিভাবক ও তাদের উপর কর্তৃত্বশীল। যার মূল কারণ উভয়ের
শারীরিক গঠন, প্রাকৃতিক স্বভাব, যোগ্যতা ও শক্তির পার্থক্য। আল্লাহ তা’আলা নারী-
পুরুষকে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য এবং ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও অবয়বে সৃষ্টি করেছেন।
দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ নেককার স্ত্রী
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“পুরো দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর সবচে’ উপভোগ্য সম্পদ হল নেককার নারী।”[৮]
বুখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“চারটি গুণ দেখে নারীদের বিবাহ করা হয়-
সম্পদ, বংশ মর্যাদা, সৌন্দর্য ও দীনদারি।
তবে ধার্মিকতার দিক প্রাধান্য দিয়েই তুমি কামিয়াব হও নয়তো তোমার হাত ধুলি
ধুসরিত হবে।”[৯]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“চারটি বস্তু শুভ লক্ষণ। যথা :
১. নেককার নারী,
২. প্রশস্ত ঘর,
৩. সৎ প্রতিবেশী,
৪. সহজ প্রকৃতির আনুগত্যশীল-পোষ্য
বাহন।
পক্ষান্তরে অপর চারটি বস্তু কুলক্ষণা। তার
মধ্যে একজন বদকার নারী।”[১০]
এসব আয়াত ও হাদিস পুরুষদের যেমন নেককার
নারী গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে, তেমনি উৎসাহ দেয় নারীদেরকে আদর্শ
নারীর সকল গুনাবলী অর্জনের প্রতি। যাতে তারা আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় নেককার নারী
হিসেবে গণ্য হতে পারে।


প্রিয় মুসলিম বোন, তোমার সামনে সে

উদ্দেশেই নেককার নারীদের গুণাবলী পেশ করা হচ্ছে। যা চয়ন করা হয়েছে কুরআন, হাদিস ও
পথিকৃৎ আদর্শবান নেককার আলেমদের বাণী ও উপদেশ থেকে। তুমি এগুলো শিখার ব্রত
গ্রহণ কর। সঠিক রূপে এর অনুশীলন আরম্ভ
কর।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, “ইলম আসে শিক্ষার
মাধ্যমে। শিষ্টচার আসে সহনশীলতার
মাধ্যমে। যে কল্যাণ অনুসন্ধান করে, আল্লাহ
তাকে সুপথ দেখান।”[১১]

নেককার নারীর গুণাবলি_______________-

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ ﺐﻴﻐﻠﻟ ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺎﻤﺑ ﻆﻔﺣ .ﻪﻠﻟﺍ ﺀﺎﺴﻨﻟﺍ :৩৪)
ইবনে কাসির রহ. লিখেন,ﺕﺎﺤﻟﺎﺼﻟﺎﻓ
শব্দের অর্থ নেককার নারী, ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য মুফাসসিরের মতে ﺕﺎﺘﻧﺎﻗ শব্দের
অর্থ স্বামীদের আনুগত্যশীল নারী, আল্লামা সুদ্দি ও অন্যান্য মুফাসসির বলেন ﺕﺎﻈﻓﺎﺣ
ﺐﻴﻐﻠﻟ শব্দের অর্থ স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের সতীত্ব ও স্বামীর সম্পদ রক্ষাকারী
নারী।”[১২]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের রোজা রাখে, আপন লজ্জাস্থান হেফাজত করে
এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।
“[১৩]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“তোমাদের সেসব স্ত্রী জান্নাতি, যারা মমতাময়ী, অধিক সন্তান প্রসবকারী, পতি-
সঙ্গ প্রিয়- যে স্বামী গোস্বা করলে সে তার হাতে হাত রেখে বলে, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া
পর্যন্ত, আমি দুনিয়ার কোন স্বাদ গ্রহণ করব না।”[১৪]


সুনানে নাসায়িতে আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহ
আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে একদা জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল, কোন নারী সব চেয়ে ভাল?
তিনি বললেন, “যে নারী স্বামীকে আনন্দিত করে, যখন স্বামী তার দিকে দৃষ্টি দেয়। যে
নারী স্বামীর আনুগত্য করে, যখন স্বামী তাকে নির্দেশ দেয়, যে নারী স্বামীর সম্পদ
ও নিজ নফসের ব্যাপারে, এমন কোনো কর্মে লিপ্ত হয় না, যা স্বামীর অপছন্দ।”[১৫]


হে মুসলিম নারী, নিজকে একবার পরখ কর,

ভেবে দেখ এর সাথে তোমার মিল আছে কতটুকু।
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পথ অনুসরণ কর। দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের শপথ
গ্রহণ কর। নিজ স্বামী ও সন্তানের ব্যাপারে যত্নশীল হও।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার
কি স্বামী আছে? সে বলল হ্যাঁ, রাসূল বললেন,
তুমি তার কাছে কেমন? সে বলল, আমি তার সন্তুষ্টি অর্জনে কোন ত্রুটি করি না, তবে
আমার সাধ্যের বাইরে হলে ভিন্ন কথা। রাসূল বললেন, লক্ষ্য রেখ, সে-ই তোমার জান্নাত বা
জাহান্নাম।”[১৬]


উপরের আলোচনার আলোকে নেককার নারীর
গুণাবলি :______________ 

১. নেককার : ভাল কাজ সম্পাদনকারী ও নিজ
রবের হক আদায়কারী নারী।
২. আনুগত্যশীল : বৈধ কাজে স্বামীর
আনুগত্যশীল নারী।
৩. সতী : নিজ নফসের হেফাজতকারী নারী,
বিশেষ করে স্বামীর অবর্তমানে।
৪. হেফাজতকারী : স্বামীর সম্পদ ও নিজ
সন্তান হেফাজতকারী নারী।
৫. আগ্রহী : স্বামীর পছন্দের পোশাক ও সাজ
গ্রহণে আগ্রহী নারী।
৬. সচেষ্ট : স্বামীর গোস্বা নিবারণে
সচেষ্ট নারী। কারণ হাদিসে এসেছে, স্বামী
নারীর জান্নাত বা জাহান্নাম।
৭. সচেতন : স্বামীর চাহিদার প্রতি সচেতন
নারী। স্বামীর বাসনা পূর্ণকারী।


যে নারীর মধ্যে এসব গুণ বিদ্যমান, সে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের ভাষ্য মতে জান্নাতী। তিনি
বলেছেন, “যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,
রমজানের রোজা রাখে, নিজ সতীত্ব হেফাজত
করে ও স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে,
যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।
“[১৭]


আনুগত্যপরায়ন নেককার নারীর উদাহরণ

শাবি বর্ণনা করেন, একদিন আমাকে শুরাই বলেন, “শাবি, তুমি তামিম বংশের মেয়েদের
বিয়ে কর। তামিম বংশের মেয়েরা খুব বুদ্ধিমতী। আমি বললাম, আপনি কীভাবে
জানেন তারা বুদ্ধিমতী? তিনি বললেন, আমি কোনো জানাজা থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, পথের
পাশেই ছিল তাদের কারো বাড়ি। লক্ষ্য করলাম, জনৈক বৃদ্ধ মহিলা একটি ঘরের
দরজায় বসে আছে, তার পাশেই রয়েছে সুন্দরী এক যুবতী। মনে হল, এমন রূপসী মেয়ে আমি
আর কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে মেয়েটি কেটে পড়ল। আমি পানি চাইলাম, অথচ আমার
তৃষ্ণা ছিল না। সে বলল, তুমি কেমন পানি পছন্দ কর, আমি বললাম যা উপস্থিত আছে।
মহিলা মেয়েকে ডেকে বলল, দুধ নিয়ে আস, মনে হচ্ছে সে বহিরাগত। আমি বললাম, এ মেয়ে
কে? সে বলল, জারিরের মেয়ে জয়নব। হানজালা
বংশের ও। বললাম, বিবাহিতা না
অবিবাহিতা? সে বলল, না, অবিবাহিতা। আমি
বললাম, আমার কাছে তাকে বিয়ে দিয়ে দাও। সে বলল, তুমি যদি তার কুফু হও, দিতে পারি।


আমি বাড়িতে পৌঁছে দুপুরে সামান্য বিশ্রাম
নিতে শোবার ঘরে গেলাম, কোনো মতে চোখে ঘুম ধরল না। জোহর নামাজ পড়লাম। অতঃপর
আমার গণ্যমান্য কয়েকজন বন্ধু, যেমন- আলকামা, আসওয়াদ, মুসাইয়্যেব এবং মুসা ইবনে
আরফাতাকে সাথে করে মেয়ের চাচার বাড়িতে গেলাম। সে আমাদের সাদরে গ্রহণ করল।
অতঃপর বলল, আবু উমাইয়্যা, কি উদ্দেশ্যে
আসা? আমি বললাম, আপনার ভাতিজি জয়নবের উদ্দেশ্যে। সে বলল, তোমার ব্যাপারে তার
কোন আগ্রহ নেই! অতঃপর সে আমার কাছে তাকে বিয়ে দিল। মেয়েটি আমার জালে আবদ্ধ
হয়ে খুবই লজ্জা বোধ করল। আমি বললাম,
আমি তামিম বংশের নারীদের কী সর্বনাশ করেছি? তারা কেন আমার উপর অসন্তুষ্ট?
পরক্ষণই তাদের কঠোর স্বভাবের কথা আমার
মনে পড়ল। ভাবলাম, তালাক দিয়ে দেব। পুনরায় ভাবলাম, না, আমিই তাকে আপন করে
নিব। যদি আমার মনপুত হয়, ভাল, অন্যথায় তালাকই দিয়ে দেব। শাবি, সে রাতের
মুহূর্তগুলো এতো আনন্দের ছিল, যা ভোগ না
করলে অনুধাবন করার জো নেই। খুবই চমৎকার ছিল সে সময়টা, যখন তামিম বংশের মেয়েরা
তাকে নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমার মনে পড়ল, রাসূলের সুন্নতের কথা। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“স্ত্রী প্রথম ঘরে প্রবেশ করলে স্বামীর
কর্তব্য, দু’রাকাত নামাজ পড়া, স্ত্রীর মধ্যে
সুপ্ত মঙ্গল কামনা করা এবং তার মধ্যে লুকিত
অমঙ্গল থেকে পানাহ চাওয়া।” আমি নামাজশেষে পিছনে তাকিয়ে দেখলাম, সে আমার সাথে
নামাজ পড়ছে। যখন নামাজ শেষ করলাম,
মেয়েরা আমার কাছে উপস্থিত হল। আমার কাপড় পালটে সুগন্ধি মাখা কম্বল আমার উপর
টেনে দিল। যখন সবাই চলে গেল, আমি তার নিকটবর্তী হলাম ও তার শরীরের এক পাশে
হাত বাড়ালাম। সে বলল, আবু উমাইয়্যা, রাখ।
অতঃপর বলল,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ﻭ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﺪﻤﺤﻣ ﻪﻟﺁﻭ …
“আমি একজন অভিজ্ঞতা শূন্য অপরিচিত নারী। তোমার পছন্দ অপছন্দ আর স্বভাব
রীতির ব্যাপারে কিছুই জানি না আমি। আরো বলল, তোমার বংশীয় একজন নারী তোমার
বিবাহে আবদ্ধ ছিল, আমার বংশেও সে রূপ
বিবাহিতা নারী বিদ্যমান আছে, কিন্তু
আল্লাহর সিদ্ধান্তই সিদ্ধান্ত। তুমি আমার মালিক হয়েছ, এখন আল্লাহর নির্দেশ
মোতাবেক আমার সাথে ব্যবহার কর। হয়তো
ভালভাবে রাখ, নায়তো সুন্দরভাবে আমাকে বিদায় দাও। এটাই আমার কথা, আল্লাহর
নিকট তোমার ও আমার জন্য মাগফিরাত
কামনা করছি।”
শুরাই বলল, শাবি, সে মুহূর্তেও আমি মেয়েটির কারণে খুতবা দিতে বাধ্য হয়েছি। অতঃপর
আমি বললাম,
ﺪﻤﺤﻟﺍ ،ﻪﻠﻟ ﻩﺪﻤﺣﺃ ،ﻪﻨﻴﻌﺘﺳﺃﻭ
ﻲﻠﺻﺃﻭ ﻰﻠﻋ ﻲﺒﻨﻟﺍ ،ﻢﻠﺳﺃﻭ ﻪﻟﺁﻭ
ﺪﻌﺑﻭ…
তুমি এমন কিছু কথা বলেছ, যদি তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাক, তোমার কপাল ভাল। আর
যদি পরিত্যাগ কর, তোমার কপাল মন্দ।
আমার পছন্দ… আমার অপছন্দ… আমরা দু’জনে
একজন। আমার মধ্যে ভাল দেখলে প্রচার করবে, আর মন্দ কিছু দৃষ্টিগোচর হলে গোপন
রাখবে।
সে আরো কিছু কথা বলেছে, যা আমি ভুলে
গেছি। সে বলেছে, আমার আত্মীয় স্বজনের আসা-যাওয়া তুমি কোন দৃষ্টিতে দেখ? আমি
বললাম, ঘনঘন আসা-যাওয়ার মাধ্যমে বিরক্ত
করা পছন্দ করি না। সে বলল, তুমি পাড়া- প্রতিবেশীর মধ্যে যার ব্যাপারে অনুমতি
দেবে, তাকে আমি ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি
দেব। যার ব্যাপারে নিষেধ করবে, তাকে আমি অনুমতি দেব না। আমি বললাম, এরা ভাল, ওরা
ভাল না।
শুরাই বলল, শাবি, আমার জীবনের সব চেয়ে
আনন্দদায়ক অধ্যায় হচ্ছে, সে রাতের
মুহূর্তগুলো। পূর্ণ একটি বছর গত হল, আমি তার মধ্যে আপত্তিকর কিছু দেখিনি।


একদিনের ঘটনা, ‘দারুল কাজা’ থেকে বাড়ি
ফিরে দেখি, ঘরের ভেতর একজন মহিলা তাকে উপদেশ দিচ্ছে; আদেশ দিচ্ছে আর নিষেধ
করছে। আমি বললাম সে কে? বলল, তোমার শ্বশুর বাড়ির অমুক বৃদ্ধ। আমার অন্তরের
সন্দেহ দূর হল। আমি বসার পর, মহিলা আমার
সামনে এসে হাজির হল। বলল, আসসালামু আলাইকুম, আবু উমাইয়্যা। আমি বললাম, ওয়া
লাইকুমুসসালাম, আপনি কে? বলল, আমি অমুক;
তোমার শ্বশুর বাড়ির লোক। বললাম, আল্লাহ তোমাকে কবুল করুন। সে বলল, তোমার স্ত্রী
কেমন পেয়েছ? বললাম, খুব সুন্দর। বলল, আবু উমাইয়্যা, নারীরা দু’সময় অহংকারের শিকার
হয়। পুত্র সন্তান প্রসব করলে আর স্বামীর
কাছে খুব প্রিয় হলে। কোন ব্যাপারে তোমার সন্দেহ হলে লাঠি দিয়ে সোজা করে দেবে। মনে
রাখবে, পুরুষের ঘরে আহ্লাদি নারীর ন্যায় খারাপ আর কোন বস্তু নেই। বললাম, তুমি
তাকে সুন্দর আদব শিক্ষা দিয়েছ, ভাল জিনিসের অভ্যাস গড়ে দিয়েছ তার মধ্যে। সে
বলল, শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আসা-যাওয়া তোমার কেমন লাগে? বললাম, যখন ইচ্ছে তারা
আসতে পারে। শুরাই বলল, অতঃপর সে মহিলা
প্রতি বছর একবার করে আসত আর আমাকে উপদেশ দিয়ে যেত। সে মেয়েটি বিশ বছর
আমার সংসার করেছে, একবার ব্যতীত কখনো তিরস্কার করার প্রয়োজন হয়নি। তবে ভুল
সেবার আমারই ছিল।


ঘটনাটি এমন, ফজরের দু-রাকাত সুন্নত পড়ে আমি ঘরে বসে আছি, মুয়াজ্জিন একামত দিতে
শুরু করল। আমি তখন গ্রামের মসজিদের ইমাম। দেখলাম, একটা বিচ্ছু হাঁটাচলা করছে,
আমি একটা পাত্র উঠিয়ে তার উপর রেখে
দিলাম। বললাম, জয়নাব, আমার আসা পর্যন্ত তুমি নড়াচড়া করবে না। শাবি, তুমি যদি সে
মুহূর্তটা দেখতে! নামাজ শেষে ঘরে ফিরে
দেখি, বিচ্ছু সেখান থেকে বের হয়ে তাকে দংশন করেছে। আমি তৎক্ষণাৎ লবণ ও সাক্ত তলব
করে, তার আঙুলের উপর মালিশ করলাম।
সূরায়ে ফাতেহা, সূরায়ে নাস ও সূরায়ে ফালাক
পড়ে তার উপর দম করলাম।”[১৮]


দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য_______________ 

১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তিনজন ব্যক্তির নামাজ তাদের মাথার উপরে
উঠে না।
(ক). পলাতক গোলামের নামাজ, যতক্ষণ না সে
মনিবের নিকট ফিরে আসে।
(খ). সে নারীর নামাজ, যে নিজ স্বামীকে
রাগান্বিত রেখে রাত যাপন করে।
(গ). সে আমিরের নামাজ, যার উপর তার
অধীনরা অসন্তুষ্ট।”[১৯]

২. স্বামীকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
ইমাম আহমদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস বর্ণনা
করেন,
“দুনিয়াতে যে নারী তার স্বামীকে কষ্ট দেয়,
জান্নাতে তার হুরগণ (স্ত্রীগণ) সে নারীকে
লক্ষ্য করে বলে, তাকে কষ্ট দিয়ো না, আল্লাহ
তোমার সর্বনাশ করুন। সে তো তোমার কাছে
ক’দিনের মেহমান মাত্র, অতি শীঘ্রই
তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে।”[২০]

৩. স্বামীর অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“আল্লাহ তা’আলা সে নারীর দিকে দৃষ্টি
দেবেন না, যে নিজ স্বামীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার
করে না, অথচ সে স্বামী ব্যতীত স্বয়ংসম্পূর্ণ
নয়।”[২১]
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“আমি জাহান্নাম কয়েক বার দেখেছি, কিন্তু
আজকের ন্যায় ভয়ানক দৃশ্য আর কোন দিন দেখিনি। তার মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশী
দেখেছি। তারা বলল, আল্লাহর রাসূল কেন?
তিনি বললেন, তাদের না শুকরির কারণে।
জিজ্ঞাসা করা হল, তারা কি আল্লাহর না
শুকরি করে? বললেন, না, তারা স্বামীর না
শুকরি করে, তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না।
তুমি যদি তাদের কারো উপর যুগ-যুগ ধরে
ইহসান কর, অতঃপর কোন দিন তোমার কাছে
তার বাসনা পূণ না হলে সে বলবে, আজ পর্যন্ত
তোমার কাছে কোন কল্যাণই পেলাম না।”[২২]


৪. কারণ ছাড়া তালাক তলব না করা।
ইমাম তিরমিজি, আবু দাউদ প্রমুখগণ সওবান
রাদিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
“যে নারী কোন কারণ ছাড়া স্বামীর কাছে
তালাক তলব করল, তার উপর জান্নাতের ঘ্রাণ
পর্যন্ত হারাম।”

৫. অবৈধ ক্ষেত্রে স্বামীর আনুগত্য না করা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“আল্লাহর অবাধ্যতায় মানুষের আনুগত্য করা
যাবে না।”[২৩]
এখানে নারীদের শয়তানের একটি ধোঁকা থেকে
সতর্ক করছি, দোয়া করি আল্লাহ তাদের সুপথ
দান করুন। কারণ দেখা যায় স্বামী যখন তাকে
কোন জিনিসের হুকুম করে, সে এ হাদিসের
দোহাই দিয়ে বলে এটা হারাম, এটা নাজায়েজ,
এটা জরুরি নয়। উদ্দেশ্য স্বামীর নির্দেশ
উপেক্ষা করা। আমি তাদেরকে আল্লাহর
নিম্নোক্ত বাণীটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি,
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে,
কিয়ামতের দিন তাদের চেহারা কালো
দেখবেন।”[২৪]
হাসান বসরি রহ. বলেন, “হালাল ও হারামের
ব্যাপারে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর মিথ্যা
বলা নিরেট কুফরি।”


৬. স্বামীর বর্তমানে তার অনুমতি ব্যতীত
রোজা না রাখা।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “কোন নারী স্বামীর উপস্থিতিতে
তার অনুমতি ব্যতীত রোজা রাখবে না।”[২৫]
যেহেতু স্ত্রীর রোজার কারণে স্বামী নিজ
প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকে, যা
কখনো গুনার কারণ হতে পারে। এখানে রোজা
দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই নফল রোজা উদ্দেশ্য।
কারণ ফরজ রোজা আল্লাহর অধিকার,
আল্লাহর অধিকার স্বামীর অধিকারের চেয়ে
বড়।


৭. স্বামীর ডাকে সাড়া না দেওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কোন পুরুষ যখন তার স্ত্রীকে নিজের
বিছানায় ডাকে, আর স্ত্রী তার ডাকে সাড়া না
দেয়, এভাবেই স্বামী রাত যাপন করে, সে
স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা সকাল পর্যন্ত
অভিসম্পাত করে।”[২৬]


৮. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপনীয়তা
প্রকাশ না করা :
আসমা বিনতে ইয়াজিদ থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“কিছু পুরুষ আছে যারা নিজ স্ত্রীর সাথে কৃত
আচরণের কথা বলে বেড়ায়, তদ্রুপ কিছু নারীও
আছে যারা আপন স্বামীর গোপন ব্যাপারগুলো
প্রচার করে বেড়ায়?! এ কথা শুনে সবাই চুপ
হয়ে গেল, কেউ কোন শব্দ করল না। আমি
বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! নারী-
পুরুষেরা এমন করে থাকে। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
এমন করো না। এটা তো শয়তানের মতো যে
রাস্তার মাঝে নারী শয়তানের সাক্ষাৎ পেল,
আর অমনি তাকে জড়িয়ে ধরল, এদিকে লোকজন
তাদের দিকে তাকিয়ে আছে!”[২৭]


৯. স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও বিবস্ত্র
না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
যে নারী স্বামীর ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও
বিবস্ত্র হল, আল্লাহ তার গোপনীয়তা নষ্ট
করে দেবেন।”[২৮]


১০. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাউকে তার
ঘরে ঢুকতে না দেয়া।
বুখারিতে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“নারী তার স্বামীর উপস্থিতিতে অনুমিত
ছাড়া রোজা রাখবে না এবং তার অনুমতি ছাড়া
তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করতে দেবে না।”[২৯]


১১. স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না
হওয়া।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমরা ঘরে অবস্থান
কর” ইবনে কাসির রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন,
“তোমরা ঘরকে আঁকড়িয়ে ধর, কোন প্রয়োজন
ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ো না।”[৩০] 

নারীর
জন্য স্বামীর আনুগত্য যেমন ওয়াজিব, তেমন
ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য তার অনুমতি ওয়াজিব। স্বামীর খেদমতের উদাহরণ:
মুসলিম বোন! স্বামীর খেদমতের ব্যাপারে
একজন সাহাবির স্ত্রীর একটি ঘটনার উল্লেখ যথেষ্ট হবে বলে আমার ধারণা। তারা
কীভাবে স্বামীর খেদমত করেছেন, স্বামীর
কাজে সহযোগিতার স্বাক্ষর রেখেছেন- ইত্যাদি বিষয় বুঝার জন্য দীর্ঘ
উপস্থাপনার পরিবর্তে একটি উদাহরণই যথেষ্ট হবে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আসমা বিনতে আবু বকর থেকে সহিহ মুসলিমে
বর্ণিত, তিনি বলেন, জুবায়ের আমাকে যখন বিয়ে করে, দুনিয়াতে তখন তার ব্যবহারের
ঘোড়া ব্যতীত ধন-সম্পদ বলতে আর কিছু ছিল
না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়ার ঘাস সংগ্রহ করতাম, ঘোড়া মাঠে চরাতাম, পানি
পান করানোর জন্য খেজুর আঁটি পিষতাম,
পানি পান করাতাম, পানির বালতিতে দানা ভিজাতাম। তার সব কাজ আমি নিজেই আঞ্জাম
দিতাম। আমি ভাল করে রুটি বানাতে জানতাম
না, আনসারদের কিছু মেয়েরা আমাকে এ জন্য সাহায্য করত। তারা আমার প্রকৃত বান্ধবী
ছিল। সে বলল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান করা জুবায়েরের
জমি থেকে মাথায় করে শস্য আনতাম, যা প্রায়
এক মাইল দূরত্বে ছিল।” [৩১]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
যদি নারীরা পুরুষের অধিকার সম্পর্কে
জানত, দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সময় হলে,
তাদের খানা না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিত
না।”[৩২]


বিয়ের পর মেয়েকে উদ্দেশ্য করে উম্মে
আকেলার উপদেশ:_______________-

 আদরের মেয়ে, যেখানে তুমি
বড় হয়েছ, যারা তোমার আপন জন ছিল, তাদের
ছেড়ে একজন অপরিচিত লোকের কাছে যাচ্ছ,
যার স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে তুমি কিছু জান
না। তুমি যদি তার দাসী হতে পার, সে তোমার
দাস হবে। আর দশটি বিষয়ের প্রতি খুব নজর
রাখবে।

১-২. অল্পতে তুষ্টি থাকবে। তার তার
অনুসরণ করবে ও তার সাথে বিনয়ী থাকবে।
৩-৪. তার চোখ ও নাকের আবেদন পূর্ণ করবে।
তার অপছন্দ হালতে থাকবে না, তার অপ্রিয়
গন্ধ শরীরে রাখবে না।

৫-৬. তার ঘুম ও খাবারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি
রাখবে। মনে রাখবে, ক্ষুধার তাড়নায় গোস্বার
উদ্রেক হয়, ঘুমের স্বল্পতার কারণে
বিষণ্নতার সৃষ্টি হয়।

৭-৮. তার সম্পদ হেফাজত করবে, তার সন্তান
ও বৃদ্ধ আত্মীয়দের সেবা করবে। মনে রাখবে,
সব কিছুর মূল হচ্ছে সম্পদের সঠিক ব্যবহার,
সন্তানদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।



পুরুষদের উদ্দেশে দুটি কথা____________ 

উপরের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ
তাআলার কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতের আলোকে
মুসলমান বোনদের জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করার চেষ্টা করেছি
মাত্র। তবে এর অর্থ এ নয় যে, কোন স্ত্রী
এ সবগুণের বিপরীত করলে, তাকে শান্তি দেওয়া স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,____________
“কোন মোমিন ব্যক্তি কোন মোমিন নারীকে
বিবাহ বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন করবে না, তার
একটি অভ্যাস মন্দ হলে, অপর আচরণে তার
উপর সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।”[৩৩]


তুমি যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ অথবা তার
কোন মন্দ স্বভাব প্রত্যক্ষ কর, তবে তোমার
সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাকে উপদেশ দেয়া,
নসিহত করা, আল্লাহ এবং তার শাস্তির কথা
স্মরণ করিয়ে দেয়া। তার পরেও যদি সে
অনুগত না হয়, বদ অভ্যাস ত্যাগ না করে, তবে
প্রাথমিক পর্যায়ে তার থেকে বিছানা আলাদা
করে নাও। খবরদার! ঘর থেকে বের করবে না।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও স্ত্রীকে
পরিত্যাগ কর না।” এতে যদি সে শুধরে যায়,
ভাল। অন্যথায় তাকে আবার নসিহত কর, তার
থেকে বিছানা আলাদা কর।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“যে নারীদের নাফরমানির আশঙ্কা কর,
তাদের উপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর,
প্রহার কর, যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তবে
অন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না।”[৩৪]


“তাদের প্রহার কর” এর ব্যাখ্যায় ইবনে

কাসির রহ. বলেন, যদি তাদের উপদেশ দেওয়া
ও তাদের থেকে বিছানা আলাদা করার পরও
তারা নিজ অবস্থান থেকে সরে না আসে, তখন
তোমাদের অধিকার রয়েছে তাদের হালকা
প্রহার করা, যেন শরীরের কোন স্থানে দাগ
না পড়ে।

জাবের রাদিআল্লাহ আনহু থেকে সহিহ
মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন,“তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর,
তারা তোমাদের কাছে মাঝামাঝি অবস্থানে
রয়েছে। তোমরা তাদের মালিক নও, আবার তারা তোমাদের থেকে মুক্তও নয়। তাদের
কর্তব্য, তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে জায়গা না দেয়া, যাদের তোমরা অপছন্দ কর।
যদি এর বিপরীত করে, এমনভাবে তাদের
প্রহার কর, যাতে শরীরের কোন স্থানে দাগ না পড়ে। তোমাদের কর্তব্য সাধ্য মোতাবেক
তাদের ভরন-পোষণের ব্যবস্থা করা।”


প্রহারের সংজ্ঞায় ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য মুফাসসির দাগ বিহীন প্রহার বলেছেন।
হাসান বসরিও তাই বলেছেন। অর্থাৎ যে
প্রহারের কারণে শরীরে দাগ পড়ে না।”[৩৫]


চেহারাতে প্রহার করবে না।
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
চেহারায় আঘাত করবে না।
স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার
স্বামী যেমন কামনা করে, স্ত্রী তার সব
দায়িত্ব পালন করবে, তার সব হক আদায় করবে,
তদ্রুপ স্ত্রীও কামনা করে। তাই স্বামীর
কর্তব্য স্ত্রীর সব হক আদায় করা, তাকে কষ্ট
না দেয়া, তার অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন
আচরণ থেকে বিরত থাকা।


মুসনাদে আহমদে বর্ণিত,
হাকিম বিন মুয়াবিয়া তার পিতা থেকে বর্ণনা
করেন, আমি বললাম, “আল্লাহর রাসূল, আমাদের
উপর স্ত্রীদের কী কী অধিকার রয়েছে?
তিনি বললেন, তুমি যখন খাবে, তাকেও খেতে
দেবে। যখন তুমি পরিধান করবে, তাকেও
পরিধান করতে দেবে। চেহারায় প্রহার করবে
না। নিজ ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও তার
বিছানা আলাদা করে দেবে না।” অন্য বর্ণনায়
আছে, “তার শ্রী বিনষ্ট করিও না।”[৩৬]


বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য হাদিসের
কিতাবে
আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “হে আব্দুল্লাহ, আমি জানতে পারলাম,
তুমি দিনে রোজা রাখ, রাতে নামাজ পড়, এ
খবর কি ঠিক? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহর
রাসূল। তিনি বলেন, এমন কর না। রোজা
রাখ, রোজা ভাঙ্গো। নামাজ পড়, ঘুমাও। কারণ
তোমার উপর শরীরের হক রয়েছে, চোখের হক
রয়েছে, স্ত্রীরও হক রয়েছে।”[৩৭]


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আরো বলেছেন,
যার দু’জন স্ত্রী রয়েছে, আর সে একজনের
প্রতি বেশি ঝুঁকে গেল, কিয়ামতের দিন সে
একপাশে কাত অবস্থায় উপস্থিত হবে।”[৩৮]


সম্মানিত পাঠক! আমাদের আলোচনা সংক্ষেপ
হলেও তার আবেদন কিন্তু ব্যাপক। 

এখন আমরা
আল্লাহর দরবারে তার সুন্দর সুন্দর নাম,
মহিমান্বিত গুণসমূহের ওসিলা দিয়ে
প্রার্থনা করি, তিনি আমাকে এবং সমস্ত
মুসলমান ভাই-বোনকে এ কিতাব দ্বারা উপকৃত
হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমরা এমন না
হয়ে যাই, যারা নিজ দায়িত্ব আদায় না করে,
স্ত্রীর হক উশুল করতে চায়।
আমাদের
উদ্দেশ্য কারো অনিয়মকে সমর্থন না করা
এবং এক পক্ষের অপরাধের ফলে অপর পক্ষের
অপরাধকে বৈধতা না দেয়া। বরং আমাদের
উদ্দেশ্য প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্বের
ব্যাপারে আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য
সচেতন করা।



পরিসমাপ্তি

পরিশেষে স্বামীদের উদ্দেশে বলি, আপনারা
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন, তাদের
কল্যাণকামী হোন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও। কারণ,
তাদের পাঁজরের হাড্ডি দ্বারা সৃষ্টি করা
হয়েছে, পাঁজরের হাড্ডির ভেতর উপরেরটি
সবচে’ বেশি বাঁকা। (যার মাধ্যমে তাদের
সৃষ্টি করা হয়েছে।) যদি সোজা করতে চাও,
ভেঙে ফেলবে। আর রেখে দিলেও তার বক্রতা দূর
হবে না, তোমরা নারীদের কল্যাণকামী হও।
“[৩৯]


নারীদের সাথে কল্যাণ কামনার অর্থ, তাদের
সাথে উত্তম ব্যবহার করা, ইসলাম শিক্ষা
দেয়া, এ জন্য ধৈর্য ধারণ করা; আল্লাহ এবং
তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়া,
হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকার উপদেশ
দেয়া।
আশা করি, এ পদ্ধতির ফলে তাদের
জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হবে। দরুদ ও
সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ও তার বংশধরের উপর। আমাদের
সর্বশেষ কথা, “আল্লাহর জন্য সমস্ত
প্রশংসা। তিনি দু-জাহানের পালনকর্তা।”


মুসলিম নারীর পর্দার জরুরি শর্তসমূহ

১. সমস্ত শরীর ঢাকা :
আল্লাহ তাআলা বলেন,
ْﻞُﻗَﻭ ِﺕﺎَﻨِﻣْﺆُﻤْﻠِﻟ َﻦْﻀُﻀْﻐَﻳ َّﻦِﻫِﺭﺎَﺼْﺑَﺃ ْﻦِﻣ
َّﻦُﻬَﺟﻭُﺮُﻓ َﻦْﻈَﻔْﺤَﻳَﻭ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ
ﺎَّﻟِﺇ ﺎَﻣ َﺮَﻬَﻇ َّﻦِﻫِﺮُﻤُﺨِﺑ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻴْﻟَﻭ ﺎَﻬْﻨِﻣ
َّﻦِﻬِﺑﻮُﻴُﺟ ﻰَﻠَﻋ ﺎَﻟَﻭ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ ﺎَّﻟِﺇ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺒِﻟ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺋﺎَﺑَﺁ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﺑَﺁ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﺋﺎَﻨْﺑَﺃ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ِﺀﺎَﻨْﺑَﺃ
َّﻦِﻬِﺘَﻟﻮُﻌُﺑ َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ ْﻭَﺃ ﻲِﻨَﺑ
َّﻦِﻬِﻧﺍَﻮْﺧِﺇ ْﻭَﺃ َّﻦِﻬِﺗﺍَﻮَﺧَﺃ ﻲِﻨَﺑ ْﻭَﺃ
َّﻦِﻬِﺋﺎَﺴِﻧ ْﻭَﺃ ﺎَﻣ َّﻦُﻬُﻧﺎَﻤْﻳَﺃ ْﺖَﻜَﻠَﻣ ِﻭَﺃ
َﻦﻴِﻌِﺑﺎَّﺘﻟﺍ ِﺮْﻴَﻏ ِﺔَﺑْﺭِﺈْﻟﺍ ﻲِﻟﻭُﺃ َﻦِﻣ
ِﻝﺎَﺟِّﺮﻟﺍ ِﻭَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻟﺍ ِﻞْﻔِّﻄﻟﺍ ﺍﻭُﺮَﻬْﻈَﻳ ْﻢَﻟ
ِﺕﺍَﺭْﻮَﻋ ﻰَﻠَﻋ ِﺀﺎَﺴِّﻨﻟﺍ َﻦْﺑِﺮْﻀَﻳ ﺎَﻟَﻭ
َﻢَﻠْﻌُﻴِﻟ َّﻦِﻬِﻠُﺟْﺭَﺄِﺑ َﻦﻴِﻔْﺨُﻳ ﺎَﻣ ْﻦِﻣ
ﺍﻮُﺑﻮُﺗَﻭ َّﻦِﻬِﺘَﻨﻳِﺯ ﻰَﻟِﺇ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻌﻴِﻤَﺟ
ﺎَﻬُّﻳَﺃ َﻥﻮُﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َﻥﻮُﺤِﻠْﻔُﺗ ْﻢُﻜَّﻠَﻌَﻟ ﴿৩১
﴾( ﺭﻮﻨﻟﺍ-৩১)
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের
দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের
হেফাজত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায়
তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে
না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে
ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী,
পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে,
ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন
নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে,
অধীন যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের
গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো
কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর
তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ
করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে
মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট
তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
“[৪০]

অন্যত্র বলেন,
ﺎَﻳ ُّﻲِﺒَّﻨﻟﺍ ﺎَﻬُّﻳَﺃ ْﻞُﻗ َﻚِﺗﺎَﻨَﺑَﻭ َﻚِﺟﺍَﻭْﺯَﺄِﻟ
ِﺀﺎَﺴِﻧَﻭ َﻦﻴِﻧْﺪُﻳ َﻦﻴِﻨِﻣْﺆُﻤْﻟﺍ َّﻦِﻬْﻴَﻠَﻋ ْﻦِﻣ
َّﻦِﻬِﺒﻴِﺑﺎَﻠَﺟ َﻚِﻟَﺫ ﻰَﻧْﺩَﺃ ْﻥَﺃ َﻦْﻓَﺮْﻌُﻳ ﺎَﻠَﻓ
َﻥﺎَﻛَﻭ َﻦْﻳَﺫْﺆُﻳ ُﻪَّﻠﻟﺍ ﺎًﻤﻴِﺣَﺭ ﺍًﺭﻮُﻔَﻏ ﴿
৫৯﴾
“হে নবি, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে,
কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা
যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের
উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে
এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে
তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ
অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[৪১]



২. কারুকার্য ও নকশা বিহীন পর্দা ব্যবহার
করা :
তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত-
ﺎَﻟَﻭ َﻦﻳِﺪْﺒُﻳ َّﻦُﻬَﺘَﻨﻳِﺯ “তারা স্বীয় রূপ-
লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এ
আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও
অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ তাআলা যে
সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে
সৌন্দর্যকে আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত
করাও নিষেধের আওতায় আসে। তদ্রুপ সে সকল
নকশাও নিষিদ্ধ, যা পর্দার বিভিন্ন
জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা নারীরা মাথার উপর
আলাদাভাবে বা শরীরের কোন জায়গায় যুক্ত
করে রাখে।

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
َﻥْﺮَﻗَﻭ َّﻦُﻜِﺗﻮُﻴُﺑ ﻲِﻓ ﺎَﻟَﻭ َﺝُّﺮَﺒَﺗ َﻦْﺟَّﺮَﺒَﺗ
ِﺔَّﻴِﻠِﻫﺎَﺠْﻟﺍ ﻰَﻟﻭُﺄْﻟﺍ ﴿৩৩﴾ (
ﺏﺍﺰﺣﻷﺍ-৩৩)

“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং

প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন
করো না।”[৪২]
ﺝﺮﺒﺘﻟﺍ অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও
রূপ-লাবণ্য প্রকাশ করা, যা পুরুষের যৌন
উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এ রূপ
অশ্লীলতা প্রদর্শন করা কবিরা গুনা।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
“তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে
জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস
হবে।) যথা :
ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের
হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ
পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল,
আর সে এ অবস্থায় মারা গেল।
খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে
পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল।
গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে
স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল।”[৪৩]

৩. পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে প্রচুর হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যার
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার
করে নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম।
সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণ
স্বরূপ, রাসূলের একটি হাদিস উল্লেখ করছি,
তিনি বলেন,
“যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের
হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম
করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে
নারী ব্যভিচারিণী।”[৪৪]

৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এমন
পাতলা ও সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া।
ইমাম আহমদ রহ. উসামা বিন জায়েদের সূত্রে
বর্ণনা করেন,
“দিহইয়া কালবির উপহার দেয়া, ঘন বুননের
একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পরিধান করতে
দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
একদিন আমাকে বলেন, কি ব্যাপার, কাপড়
পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহর
রাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি।
তিনি বললেন, তাকে বল, এর নীচে যেন সে
সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ
কাপড় তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দেবে।
“[৪৫]

৫. পর্দা শরীরের রং প্রকাশ করে দেয় এমন
পাতলা না হওয়া।
সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
জাহান্নামের দু’ প্রকার লোক আমি এখনো
দেখিনি :
(ক). সে সব লোক যারা গরুর লেজের মত বেত
বহন করে চলবে, আর মানুষদের প্রহার করবে।
(খ). সে সব নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও
বিবস্ত্র থাকবে, অন্যদের আকৃষ্ট করবে এবং
তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে
ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।

৬. নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় না
হওয়া।
ইমাম বুখারি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা
করেন,
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী
এবং নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের
উপর অভিসম্পাত করেছেন।”[৪৬]

৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা
মানুষ যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, পর্দা
এমন কাপড়ের না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন
“যে ব্যক্তি সুনাম সুখ্যাতির পোশাক
পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন
অনুরূপ কাপড় পরিধান করাবেন, অতঃপর
জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ
করবেন।”
সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে কাপড়
পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে
প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন উৎকৃষ্ট
ও দামি কাপড়। যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-
ভোগ ও চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী
ব্যক্তিরাই পরিধান করে। এ হুকুম নারী-
পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ
ধরনের কাপড় অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে,
কঠোর হুমকির সম্মুখীন হবে, যদি তওবা না
করে মারা যায়।

. পর্দা বিজাতীয়দের পোশাক সাদৃশ্য না
হওয়া।
ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ
ও অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন,
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল
রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে
গণ্য।” এরশাদ হচ্ছে,
ْﻢَﻟَﺃ َﻦﻳِﺬَّﻠِﻟ ِﻥْﺄَﻳ ﺍﻮُﻨَﻣَﺁ ْﻥَﺃ َﻊَﺸْﺨَﺗ
ْﻢُﻬُﺑﻮُﻠُﻗ ِﺮْﻛِﺬِﻟ ِﻪَّﻠﻟﺍ ﺎَﻣَﻭ َﻝَﺰَﻧ َﻦِﻣ ِّﻖَﺤْﻟﺍ
َﻦﻳِﺬَّﻟﺎَﻛ ﺍﻮُﻧﻮُﻜَﻳ ﺎَﻟَﻭ َﺏﺎَﺘِﻜْﻟﺍ ﺍﻮُﺗﻭُﺃ
ْﻦِﻣ ُﻞْﺒَﻗ ﴿১৬﴾ ( ﺪﻳﺪﺤﻟﺍ:১৬)
“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর
স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার
কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর
তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে
ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল।”[৪৭]
ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন,
“এ জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে
মৌলিক কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে
তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন।
ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ
অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও
সব ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা
যাবে না।”[৪৮]

সমাপ্ত

_________________________________________
_________________________________________ _____
[১] আহযাব:৩৬
[২] বুখারী
[৩] নিসা : ৩৪
[৪] ইবনে কাসির : ১/৭২১
[৫] সহিহ আল-জামে আল-সাগির : ৫২৯৫
[৬] নিসা : ৩৪
[৭] ফতওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ : ৩২/২৭৫
[৮] মুসলিম
[৯] মুসলিম : ১০/৩০৫
[১০] হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৮৮৭
[১১] দারে কুতনি
[১২] ইবনে কাসির : ১ : ৭৪৩
[১৩] ইবনে হিব্বান, সহিহ আল-জামে : ৬৬০
[১৪] আলবানির সহিহ হাদীস সংকলন : ২৮৭
[১৫] সহিহ সুনানে নাসায়ী : ৩০৩০
[১৬] আহমাদ : ৪ : ৩৪১
[১৭] ইবনে হিব্বান, আল-জামে : ৬৬০
[১৮] ইবনে আবদে রব্বিহি আন্দালুসি রচিত :
তাবায়েউন্নিসা নামক গ্রন্থ থেকে সংকলিত।
[১৯] তিরমিজি : ২৯৫
[২০] আহমদ, তিরমিজি, সহিহ আল-জামে :
৭১৯২
[২১] নাসায়ী
[২২] মুসলিম : ৬ : ৪৬৫
[২৩] আহমদ, হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৭৫২০
[২৪] জুমার : ৬০
[২৫] মুসলিম : ৭ : ১২০
[২৬] মুসলিম : ১০ : ২৫৯
[২৭] ইমাম আহমদ
[২৮] ইমাম আহমদ, সহিহ আল-জামে : ৭
[২৯] ফতাহুল বারি : ৯ : ২৯৫
[৩০] ইবনে কাসির : ৩ : ৭৬৮
[৩১] মুসলিম : ২১৮২
[৩২] তাবরানি, সহিহ আল-জামে : ৫২৫৯
[৩৩] মুসলিম : ১০:৩১২
[৩৪] নিসা : ৩৪
[৩৫] ইবনে কাসির : ১ : ৭৪৩
[৩৬] মুসনাদে আহমদ : ৫ : ৩
[৩৭] ফাতহুল বারি : ৯ : ২৯৯
[৩৮] আবু দাউদ, তিরমিজি
[৩৯] বর্ণনায় বুখারী, মুসলিম, বায়হাকি ও
আরো অনেকে
[৪০] নূর : ৩১
[৪১] আহজাব : ৫৯
[৪২] আহজাব : ৩৩
[৪৩] হাকেম, সহিহ আল-জামে : ৩০৫৮
[৪৪] আহমদ, সহিহ আল-জামে : ২৭০১
[৪৫] আহমদ, বায়হাকি
[৪৬] বুখারী, ফাতহুল বারি : ১০ : ৩৩২
[৪৭] হাদিদ : ১৬
[৪৮] ইবনে কাসির : ৪ : ৪৮৪
_________________________________________
________________________________________

লেখক : সানাউল্লাহ বিন নজির আহমদ



Monday, 25 June 2018

রুপ চর্চায় মসুর ডাল ----- মসুর ডাল ও মধুর প্যাক:মসুর ডাল, টক দই আর বেসনের উপটান:দুধ ও মসুর ডালের এক্সফলিয়েটরমসুর ডালের হেয়ার রিমুভাল প্যাক: : মসুর ডাল, লেবু, চিনির প্যাক:মসুর ডাল ও গাঁদা ফুলের প্যাক:

প্রায় ৮০০০ বছর আগে থেকেই মধ্য এশিয়ার বাসিন্দারা মসুর ডাল খাওয়া শুরু

 করেছিলেন। কারণ সেই সময়ই তারা বুঝে গিয়েছিল যে প্রাকৃতিক উপাদানটি

 কাজে লাগিয়ে শরীরকে চাঙ্গা রাখা সম্ভব।

মসুর ডাল একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল। প্রাচীন কাল থেকে মসুর ডাল তাই 
খাবারের পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।
একটা সময় আমাদের দাদি নানিরা এই ডাল দিয়েই সারতেন তাদের রুপচর্চা। 
আর তাদের স্কিন ও ছিল কিন্তু দেখার মতন। কারণ তারা আমাদের মতো এটা
 সেটা আর কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতেন না। তারা প্রাকৃতিক 
উপাদানগুলোকে বেছে নিয়ে ছিলেন তাদের টানটান উজ্জ্বল ত্বকের হাতিয়ার হিসেবে।
নিয়মিত মসুর ডাল দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক মুখে লাগাতে শুরু করলে ত্বকের 
ভেতরের প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। ফলে স্কিনের ডালনেস কমতে শুরু করে। 
সেই সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠতেও সময় লাগে না।

মসুর ডাল আরো নানাভাবে ত্বকের উপকারে লেগে থাকে।

 যেমন- মসুর ডাল 
দিয়ে বানানো প্যাক মুখে লাগাতে শুরু করলে স্কিনের উপরিঅংশে 
জমে থাকা মৃত 
কোষের স্তর সরে যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে,
 সেই সঙ্গে 
বলিরেখা কমে, কালো ছোপ ছোপ দাগ কমতে শুরু করে এবং মুখের উপর থাকা 
অতিরিক্ত চুল ঝরে যায়।
মসুরেরর ডালে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান ষখন ত্বকের
 ভেতরে প্রবেশ করে, তখন এমন কারিশমা দেখায় যে ত্বকের টোনই বদলে 
যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বক এমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে 
যে সৌন্দর্য আকাশ ছুঁতে সময় লাগে না।

ব্যাবহার বিধি -----------------

মসুর ডালের যেকোনো প্যাক বানানোর আগে অবশ্যই ডাল সারারাত 
ভিজিয়ে বেটে নিতে হবে অথবা ডাল গুড়ো করে নিতে হবে

(১) মসুর ডাল ও মধুর প্যাক:
আমাদের মধ্যে যাদের স্কিন ড্রাই মসুর ডাল তাদের জন্য হতে পারে
 দারুণ একটা সমাধান। মসুর ডাল আর মধু স্কিনের মৃতকোষ দূর 
করে স্কিনে সফটনেস আনবে খুব এফেক্টিভভাবে। মধু আর মসুর ডাল 
এই উভয় উপাদান স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুন কাজ করে। ফলে স্কিনের 
মসৃণতা বাড়ার সাথে সাথে উজ্জ্বলতাও বাড়বে। এর জন্য যা করতে হবে-
> এক চা চামচ মধু আর এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে পরিস্কার 
মুখে লাগাতে হবে।
> ১৫ মিনিট পরে হালকা হাতে ঘষেঘষে তুলে ফেলতে হবে।
>তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

(২) মসুর ডাল, টক দই আর বেসনের উপটান:
যদি কেউ চায় ত্বকের রঙ ভীষনভাবে উজ্জ্বল করতে, 
কার্যকরভাবে ব্রণ ও সান ট্যান দূর করতে তাহলে এই উপটান 
তাদের জন্যই। সাথে সাথে এটি স্কিনকে করবে খুব স্মুদ এবং লাবন্যময়। 
এটি বানাতে যা করতে হবে হবে তা হল-
> সমপরিমান মসুর ডাল বাটা, টক দই আর বেসন এক সাথে মিশাতে হবে।
> এর সাথে নিতে হবে এক চিমটি হলুদ গুড়া।
> ভালো করে মিক্স করে মুখে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
> একদম শুকিয়ে গেলে হাত পানিতে ভিজিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ
 করে তুলে ফেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
>এই প্যাকটি বডি ফেয়ারনেস বাড়াতেও সমানভাবে কাজ করে।

(৩) দুধ ও মসুর ডালের এক্সফলিয়েটর:
যারা সিম্পল কিন্তু কার্যকর এক্সফলিয়েশন পছন্দ করেন, মসুর ডাল তাদের জন্য
 দারুন এক উপাদান। মুখের মৃতকোষ সরিয়ে মুখের ত্বক উজ্জ্বল আর 
স্মুদ করতে মসুর ডালের জুড়ি মেলা ভার। সেই সাথে দুধের ল্যাকটিক 
এসিড ত্বককে করে কোমল ও ফর্সা।
> মসুর ডাল বেটে এর সাথে এক চা চামচ দুধ মিশিয়ে কোমল হাতে মুখে 
মুখে ঘষে ঘষে ম্যাসাজ করতে হবে ২/৩ মিনিট।
>এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ভালো করে। খেয়াল রাখবেন 
মুখে যেন একটুও লেগে না থাকে।
(৪) মসুর ডালের হেয়ার রিমুভাল প্যাক:
এই প্যাকটি একবারেই যে সব অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলবে তা নয় 
কিন্তু রেগুলার ব্যবহারে অবাঞ্ছিত লোমের গ্রোথ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে 
দিবে এবং মুখে থাকা অবশিষ্ট লোমগুলোকে একদম তুলে ফেলবে 
সেই সাথে ব্রণের দাগ হালকা করবে এবং ব্রাইটনেস বাড়াবে।
> এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা, এক চা চামচ মিহি করা চালের গুড়া,
 এক চা চামচ বেসন আর ২/৩ ফোটা আমন্ড অয়েল এক সাথে 
মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে।
> মিনিট দশেক পরে শুকিয়ে আসলে আলতো করে ঘষেঘষে তুলে ফেলতে হবে।
>এই একই প্যাক বডির আনওয়ান্টেড হেয়ার রিমুভ করার 
কাজেও ব্যবহার করা যায়।

(৫)মসুর ডাল, লেবু, চিনির প্যাক:
লেবু ত্বকের কালো দাগ তুলতে খুবই কার্যকরি। ত্বকের উজ্জ্বলতা 
বৃদ্ধিতেও জুরি নেই। ১চামচ বেসন, ১চামচ লেবু, ১চামচ চিনি মিশিয়ে দারুণ 
একটি প্যাক তৈরি হয়। স্কিনের উজ্জ্বলতা খুব বেশি বেড়ে যায়। 
চিনি স্ক্রানিং এর কাজ ও করে এতে ত্বকের মড়া কোষ খুব সহজে দূর হয়ে যায়।

(৬) মসুর ডাল ও গাঁদা ফুলের প্যাক:
গাঁদাফুল আমাদের দেশে খুব সহজলভ্য একটি ফুল।
এটি শুধু যে বাগানের সৌন্দর্য্যই বাড়ায় তাই না সাথে সাথে এতে 
আছে স্কিনের যত্নের নানা উপাদান।
> মসুর ডাল বাটা ও গাঁদাফুল এর পাপড়ি বাটা এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে
 এটি স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়াবে।
> যদি চান এর সাথে স্কিনে আসুক গোলাপি আভা তাহলে মিশিয়ে নিন 
এক চা চামচ গোলাপের পাপড়ি বাটা।
স্কিনের প্রেমে পড়ে যাবেন নির্ঘাত।
> সপ্তাহে ২-৩ দিন বেসনের যেকোনো একটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন,
 এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ব্রণের সমস্যা থাকলেও তা 
দূর হয়ে যায়। নিজের স্কিনের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন। 
ত্বক ভালো তো মন ভালো।
_________________________________
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে

Sunday, 24 June 2018

|| বিবাহ রেজিস্ট্রেশন : : সুফল, কুফল, শাস্তি ||




আইনের দ্বারা নির্ধারিত তথ্যাবলী দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে সরকারিভাবে বিবাহ তালিকাভূক্তি করাই হচ্ছে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন।


মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন 

১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ সরকার নির্ধারিত কাজী দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। 
মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা একটি আইনগত দলিল। নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিজে বিয়ে পড়ালে বিয়ের দিনই তিনি বিয়েটি রেজিস্ট্রি করবেন। যদি কাজী নিজে বিয়ে না পড়ান বা কোন কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে নিকটস্থ কাজী অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি করাতে হবে।

 এখানে উল্লেখ্য যে, অনেক ক্ষেত্রে কাজী নিজে বিয়ে রেজিস্ট্রি না করে তার সহকারির মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করান। সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া ঠিকমত হয়েছে কিনা তা ভালভাবে দেখে নেয়া প্রয়োজন। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় বিয়ের কাজীকে খেয়াল রাখতে হয় যে বিষয়গুলো : ---------------:
বরের বয়স কমপক্ষে ২১ এবং কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ হয়েছে কিনা।
বর ও কনের বিয়েতে পূর্ণ সম্মতি আছে কিনা।
বিয়ের প্রকৃত সাক্ষী।
আশু ও বিলম্বিত দেনমোহর।
উল্লেখিত শর্তসমূহ পূরণ হলেই কেবলমাত্র কাজী (নিকাহ রেজিষ্টার) বিয়ে রেজিস্ট্রি করবেন। তবে তিনি কাবিন নামার ১৮ নং ঘরে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের (তালাক-ই- তৌফিজের) ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কি না সেই বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে খেয়াল করবেন।

বিয়েতে বরপক্ষ রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করবেন। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলে নিকাহ রেজিষ্টার একটি প্রাপ্তি রশিদ প্রদান করবেন। 
এখানে উল্লেখ্য মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের পর নিকাহ রেজিষ্টার বাধ্যতামূলকভাবে বর ও কনেপক্ষকে বিয়ের কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রদান করবেন।

খ্রিস্টান বিয়ে রেজিস্ট্রেশন

১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিয়ে সম্পাদিত হয়। খ্রিস্টান বিয়ে লিখিত মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এবং রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। খ্রিস্টান বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় ধাপগুলো হলো:
বিয়ের পাত্র-পাত্রীর পুরো নাম ও ডাক নাম এবং পেশা বা অবস্থা।
পাত্র-পাত্রীর আবাসস্থল ও বাসস্থানের ঠিকানা।
পাত্র-পাত্রী কতদিন ধরে ঐ এলাকায় বসবাস করছে তার প্রমাণ পত্র।
বিয়ে সম্পাদনের চার্চ বা অন্যকোন স্থান।
নোটিশ প্রাপ্তির পর চার্চের ধর্মযাজক নোটিশটি খোলা জায়গায় লাগিয়ে দেবেন। যাতে নোটিশটি সকলের নজরে আসে। এভাবে নোটিশ কয়েক সপ্তাহ ঝোলানো থাকবে যাতে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তিনি যেন আপত্তি করতে পারেন। যদি কোন আপত্তি না পান তাহলে চার্চ প্রধান বিয়ের পক্ষগণের নিকট থেকে একটি ঘোষণা গ্রহণ করবেন। 
এই ঘোষণাটি বিয়ের পক্ষগণ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে দিবেন যাতে থাকবে-
ক) বিয়ের পাত্র-পাত্রীর মধ্যে জানামতে এমন কোন ঘনিষ্ট আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক নেই যাতে তাদের বিয়েতে আইনসম্মত বাধা আছে।
খ) বিবাহের পাত্র-পাত্রী দুজনেই আইন অনুযায়ী সাবালক।
এই ঘোষণা সম্পন্ন হওয়ার কমপক্ষে ৪ দিন পর চার্চের ধর্মযাজক বিয়ের আবেদনকারীকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন। সার্টিফিকেট জারির ২ মাসের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। খ্রিস্টান বিয়ের সত্যায়িত কপির জন্য যথাযথ ফি দিয়ে সত্যায়িত কপি নিতে হবে।

হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন

 ২০১২ অনুযায়ী হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিন্দু আইনের প্রথা মেনেই বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।
 হিন্দু বিয়েতেও নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়সী ছেলেমেয়ে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দিয়ে থাকে মাত্র, যা পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিয়ের হলফনামা একটি দালিলিক প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। প্রচলিত হিন্দু প্রথা না মেনে হলফনামা করা হলে এতে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল বলা যাবে না। তাই বিবাহের ঘোষণা প্রদান করার ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য একজন এবং উপজেলা পর্যায়ে একজন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক নিযুক্ত আছেন।
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা হিন্দু পারিবারিক আইন মতে পরিচালিত হয় ফলে বৌদ্ধদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয় না। তবে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করা বাধ্যতামূলক।

 রেজিস্ট্রেশন করার সুফল : :

ক) বিয়ের পক্ষদ্বয় বিয়ে অস্বীকার করতে পারেনা এবং পরস্পর পরস্পরের প্রতি কিছু দায়-দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়।
খ) স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে বা স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ে করলে বা করার উদ্যোগ নিলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
গ) স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় করতে পারেন।
ঘ) স্বামী/স্ত্রী উভয়ে উভয়ের সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার হতে পারেন।
ঙ) বিয়ের সময় দেনমোহর ধার্য্য না হলেও স্ত্রী ন্যায্য দেনমোহর আদায় করতে পারেন।

 রেজিস্ট্রেশন না করার কুফল : :

সুফলে উল্লেখিত বিষয়ে স্বামী অথবা স্ত্রী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ বা দাবী আদায় করতে পারেন না। বিশেষ করে বিয়ের মিথ্যা কথা বলে নারীদের পাচার, শ্লীলতাহানী ইত্যাদিরূপে ব্যবহার করতে পারে কিন্তু বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হলে এই ধরণের নারী নির্যাতন বন্ধ হবে বা অনেক কমে যাবে।

 শাস্তিযোগ্য অপরাধ : :

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মুসলিম আইনে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রেজিস্ট্রেশন না করলে ২ বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে তবে বিয়েটি বাতিল হবে না। খ্রিস্টান বিবাহে রেজিস্ট্রেশন বিয়েরই একটি অংশ হওয়ায় সকল বিয়েরই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায়। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনে বাধ্যতামূলক নয়। বৌদ্ধদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম এখনো চালু হয় নি। বাংলাদেশের আইনানুযায়ী আদালতে গ্রহণযোগ্য সকল ধর্মের সকল বিয়ের রেজিস্ট্রেশন দলিল থাকা বাধ্যতামূলক

শিরকের প্রকার বলা হলেও, ফাঁকে ফাঁকে শিরকের বিপরীতে ‘তাওহীদের প্রকারও এসে যাবে। বিপরীতটা বললে, বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন আলোর মাহাত্ম্য বুঝতে হলে, আঁধার সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী ... mufti atik ullah



আল্লাহর প্রতি উপাস্য ইবাদাত-------------------------

ইলাহ (إله) শব্দের অর্থ মাবূদ (معبود)। উপাস্য। যার ইবাদত করা হয়। ইবাদত কাকে বলে? আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ.-এর ভাষায়,
العِبادَةُ عِبارَةٌ عنِ الاِعْتِقادِ والشُّعُورِ بِأَنَّ لِلْمَعْبُودِ سَلْطَةً غَيْبِيَّةً (أَيْ في العِلْمِ والتَّصَرُّف) فَوْقَ الأسبابِ يَقْدِرُ بها على النفعِ والضررِ فكُلُّ دعاءٍ ونداءٍ وثناءٍ وتعظيمٍ يَنشَأُ من هذا الاعتِقاد فهي عبادة
জাগতিক কোনও মাধ্যম ছাড়া, (জ্ঞান ও কার্যত) উপকার ও ক্ষতি করার অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী, এমন দৃঢ় বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশকেই ইবাদত বলা হয়। এমন বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত দু‘আ, আহ্বান, প্রশংসা, সম্মান এমন বিশ্বাসকেই ইবাদত বলা হয়। 
.
উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কৃত সুনির্দিষ্ট আচরণ/উচ্চারণ আল্লাহ জন্যে হলে, তাকে ইবাদত বলা হবে, গাইরুল্লাহর জন্যে হলে, শিরক বলা হবে।

_________________________________

গায়রুল্লাহ র প্রতি উপাস্য শিরক-------------------- 



শিরকের প্রকার!

(শিরকের প্রকার বলা হলেও, ফাঁকে ফাঁকে শিরকের বিপরীতে ‘তাওহীদের প্রকারও এসে যাবে। বিপরীতটা বললে, বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন আলোর মাহাত্ম্য বুঝতে হলে, আঁধার সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী)। 
-

শিরক দুই প্রকার,

১: আকীদাগত শিরক (شِرْكِ اعتقادي)। 

আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা গাইরুল্লাহর জন্যেও সাব্যস্ত করা। 
আকীদাগত শিরক তিন প্রকার,

ক: জ্ঞানগত শিরক (شرك في العلم)। 
গাইরুল্লাহকে উপায়-উপকরণ ছাড়া (ما فوق الأسباب) খবরাখবর সম্পর্কে পূর্ণ অবগত মনে করা। তবে যদি উপায়-উপকরণ (مع الأسباب)-এর মাধ্যমে খবরাখবর অবগত থাকার বিশ্বাস করে, তাহলে শিরক হবে না। 
.

খ: কর্মক্ষমতাগত শিরক (شرك في التصرف)। 
উপায়-উপকরণ ছাড়া (ما فوق الأسباب) গাইরুল্লাহকে কর্মক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করা। উপায়-উপকরণ (مع الأسباب)-এর মাধ্যমে কর্মক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করলে, শিরক হবে না। 
ঈসা আ. বলেছিলেন,
مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ 
কে কে আছে, যারা আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে’? (আলে ইমরান ৫২)। 
.
তিনি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান রেখে, বান্দার দুর্বলতা স্মরণে রেখেই, হাওয়ারী (সহচর)-দের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। এটা শিরক নয়। 

.
গ: প্রার্থনাগত শিরক (شرك في الدعاء)। 
প্রথমোক্ত দু’টি ক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করে গাইরুল্লাহর কাছে গায়েবীভাবে (উপস্থিত না থেকে) কোনও কিছুর প্রার্থনা করা। উক্ত আকীদা পোষণ করে, উপস্থিত থেকে কোনও কিছু প্রার্থনা করলেও শিরক হবে।
.

২: কর্মগত শিরক (شركِ فِعْلِيْ)। 

প্রথমোক্ত দুটি বিশ্বাস পোষণ করে, গাইরুল্লাহর জন্যে ‘নযর-মান্নত’ করা। গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নিজের জন্যে কোনও হালাল বস্তুকে হারাম করে নেয়া। 
.
কর্মগত শিরক চার প্রকার
ক: আল্লাহর জন্যে নযর (نَيازَاتُ الله)। 
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নযর-মানত করা। যেমন আকীকা, কুরবানি ইত্যাদি। 
আল্লাহ তা‘আলা নবীজি সা.-কে হুকুম করেছেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
সুতরাং আপনি নিজ প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্যে নামায পড়ুন ও কুরবানি দিন (কাওসার ২)। 
.
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তার জন্যে পশু কুরবানি করার আদেশ করেছেন।
.
হুকুম: 
এটা তাওহীদের অন্তুর্ভুক্ত। শতভাগ হালাল। 
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে শিরকের প্রকারের মধ্যে এর আলোচনা এল কি করে? 
- বাহ্যিক সাদৃশ্যের (مُشاكَلَةً) কারণে এমনটা করা হয়েছে। নযর মানতের সাদৃশ্য। 

.
খ: গাইরুল্লাহর জন্যে নযর-নিয়ায করা (نِيازات غير الله)। 
গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নযর-নিয়ায করা। 
وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ 
এবং (আল্লাহ সেই সব পশু হারাম করেছেন) যাতে (যবেহ করার সময়) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়া হয়েছে (নাহল ১১৫)। 
.
وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ
এবং সেই সব জন্তুও (হারাম), যাকে (প্রতিমার জন্যে) নিবেদনস্থলে (বেদীতে) বলি দেওয়া হয় (মায়েদা ৩)। 
.
হুকুম:
এমন করা সুষ্পষ্ট শিরক। হারাম। 
.

গ: আল্লাহর জন্যে হারাম করে নেয়া (تَحْرِيماتُ الله)। 
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক হারামকৃত কোনও বস্তুকে নিজের জন্যে হারাম সাব্যস্ত করে নেয়া। 
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ
তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত (মায়েদা ৩)। 
.
হুকুম: 
এটাও তাওহীদ। হারামকৃত বস্তুগুলো তার জন্যে হারাম। 
.

ঘ: গাইরুল্লাহর জন্যে হারাম করা (تَحْرِيْماتِ غير الله)। 
গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে হালাল বস্তুকে নিজের উপর হারাম সাব্যস্ত করে নেয়া। 
أُحِلَّتْ لَكُم بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ
مائدة ১
مَا جَعَلَ اللَّهُ مِن بَحِيرَةٍ وَلَا سَائِبَةٍ وَلَا وَصِيلَةٍ وَلَا حَامٍ ۙ وَلَٰكِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۖ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
مائدة ১০৩
তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ গবাদি পশু (ও তদ্সদৃশ জন্তু) মায়িদা-১। 
আল্লাহ তা‘আলা এসব জন্তুকে হালাল করেছেন। গাইরুল্লাহকে খুশি করার জন্যে এসবকে হারাম সাব্যস্ত করা যাবে না। 
.
আল্লাহ কোনও প্রাণীকে না বাহীরা সাব্যস্ত করেছেন, না সাইবা, না ওয়াসীলা ও না হামী, কিন্তু যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশেই সঠিক বোঝে না (মায়িদা ১০৩)। 
১: বাহীরা, কান চিড়ে দেব-দেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রাণী। 
২: সাইবা, দেব-দেবীর নামে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া প্রাণী। 
৩: ওয়াসীলা, পরপর কয়েকটি মাদী বাচ্চা জন্ম দেয়ার কারণে, অতি মূল্যবাণ মনে করে, দেব-দেবীর নামে ছেড়ে দেয়া উটনী। 
৪: হামী, নির্দিষ্ট পরিমাণে পাল নেয়ার পর প্রতিমার নামে ছেড়ে দেয়া উট। 
.
হুকুম: 
এমনটা করা শিরক। তবে বস্তুগুলো হালাল। 

.

কুরআন করীমের হালাল, হারাম ও শিরক বিষয়ক প্রায় সমস্ত আয়াত এই ‘কানুনের’ আওতায় চলে আসবে।