Sunday, 24 June 2018

শিরকের প্রকার বলা হলেও, ফাঁকে ফাঁকে শিরকের বিপরীতে ‘তাওহীদের প্রকারও এসে যাবে। বিপরীতটা বললে, বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন আলোর মাহাত্ম্য বুঝতে হলে, আঁধার সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী ... mufti atik ullah



আল্লাহর প্রতি উপাস্য ইবাদাত-------------------------

ইলাহ (إله) শব্দের অর্থ মাবূদ (معبود)। উপাস্য। যার ইবাদত করা হয়। ইবাদত কাকে বলে? আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ.-এর ভাষায়,
العِبادَةُ عِبارَةٌ عنِ الاِعْتِقادِ والشُّعُورِ بِأَنَّ لِلْمَعْبُودِ سَلْطَةً غَيْبِيَّةً (أَيْ في العِلْمِ والتَّصَرُّف) فَوْقَ الأسبابِ يَقْدِرُ بها على النفعِ والضررِ فكُلُّ دعاءٍ ونداءٍ وثناءٍ وتعظيمٍ يَنشَأُ من هذا الاعتِقاد فهي عبادة
জাগতিক কোনও মাধ্যম ছাড়া, (জ্ঞান ও কার্যত) উপকার ও ক্ষতি করার অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী, এমন দৃঢ় বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশকেই ইবাদত বলা হয়। এমন বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত দু‘আ, আহ্বান, প্রশংসা, সম্মান এমন বিশ্বাসকেই ইবাদত বলা হয়। 
.
উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কৃত সুনির্দিষ্ট আচরণ/উচ্চারণ আল্লাহ জন্যে হলে, তাকে ইবাদত বলা হবে, গাইরুল্লাহর জন্যে হলে, শিরক বলা হবে।

_________________________________

গায়রুল্লাহ র প্রতি উপাস্য শিরক-------------------- 



শিরকের প্রকার!

(শিরকের প্রকার বলা হলেও, ফাঁকে ফাঁকে শিরকের বিপরীতে ‘তাওহীদের প্রকারও এসে যাবে। বিপরীতটা বললে, বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন আলোর মাহাত্ম্য বুঝতে হলে, আঁধার সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী)। 
-

শিরক দুই প্রকার,

১: আকীদাগত শিরক (شِرْكِ اعتقادي)। 

আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা গাইরুল্লাহর জন্যেও সাব্যস্ত করা। 
আকীদাগত শিরক তিন প্রকার,

ক: জ্ঞানগত শিরক (شرك في العلم)। 
গাইরুল্লাহকে উপায়-উপকরণ ছাড়া (ما فوق الأسباب) খবরাখবর সম্পর্কে পূর্ণ অবগত মনে করা। তবে যদি উপায়-উপকরণ (مع الأسباب)-এর মাধ্যমে খবরাখবর অবগত থাকার বিশ্বাস করে, তাহলে শিরক হবে না। 
.

খ: কর্মক্ষমতাগত শিরক (شرك في التصرف)। 
উপায়-উপকরণ ছাড়া (ما فوق الأسباب) গাইরুল্লাহকে কর্মক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করা। উপায়-উপকরণ (مع الأسباب)-এর মাধ্যমে কর্মক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করলে, শিরক হবে না। 
ঈসা আ. বলেছিলেন,
مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ 
কে কে আছে, যারা আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে’? (আলে ইমরান ৫২)। 
.
তিনি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান রেখে, বান্দার দুর্বলতা স্মরণে রেখেই, হাওয়ারী (সহচর)-দের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। এটা শিরক নয়। 

.
গ: প্রার্থনাগত শিরক (شرك في الدعاء)। 
প্রথমোক্ত দু’টি ক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করে গাইরুল্লাহর কাছে গায়েবীভাবে (উপস্থিত না থেকে) কোনও কিছুর প্রার্থনা করা। উক্ত আকীদা পোষণ করে, উপস্থিত থেকে কোনও কিছু প্রার্থনা করলেও শিরক হবে।
.

২: কর্মগত শিরক (شركِ فِعْلِيْ)। 

প্রথমোক্ত দুটি বিশ্বাস পোষণ করে, গাইরুল্লাহর জন্যে ‘নযর-মান্নত’ করা। গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নিজের জন্যে কোনও হালাল বস্তুকে হারাম করে নেয়া। 
.
কর্মগত শিরক চার প্রকার
ক: আল্লাহর জন্যে নযর (نَيازَاتُ الله)। 
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নযর-মানত করা। যেমন আকীকা, কুরবানি ইত্যাদি। 
আল্লাহ তা‘আলা নবীজি সা.-কে হুকুম করেছেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
সুতরাং আপনি নিজ প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্যে নামায পড়ুন ও কুরবানি দিন (কাওসার ২)। 
.
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তার জন্যে পশু কুরবানি করার আদেশ করেছেন।
.
হুকুম: 
এটা তাওহীদের অন্তুর্ভুক্ত। শতভাগ হালাল। 
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে শিরকের প্রকারের মধ্যে এর আলোচনা এল কি করে? 
- বাহ্যিক সাদৃশ্যের (مُشاكَلَةً) কারণে এমনটা করা হয়েছে। নযর মানতের সাদৃশ্য। 

.
খ: গাইরুল্লাহর জন্যে নযর-নিয়ায করা (نِيازات غير الله)। 
গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নযর-নিয়ায করা। 
وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ 
এবং (আল্লাহ সেই সব পশু হারাম করেছেন) যাতে (যবেহ করার সময়) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়া হয়েছে (নাহল ১১৫)। 
.
وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ
এবং সেই সব জন্তুও (হারাম), যাকে (প্রতিমার জন্যে) নিবেদনস্থলে (বেদীতে) বলি দেওয়া হয় (মায়েদা ৩)। 
.
হুকুম:
এমন করা সুষ্পষ্ট শিরক। হারাম। 
.

গ: আল্লাহর জন্যে হারাম করে নেয়া (تَحْرِيماتُ الله)। 
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক হারামকৃত কোনও বস্তুকে নিজের জন্যে হারাম সাব্যস্ত করে নেয়া। 
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ
তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত (মায়েদা ৩)। 
.
হুকুম: 
এটাও তাওহীদ। হারামকৃত বস্তুগুলো তার জন্যে হারাম। 
.

ঘ: গাইরুল্লাহর জন্যে হারাম করা (تَحْرِيْماتِ غير الله)। 
গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে হালাল বস্তুকে নিজের উপর হারাম সাব্যস্ত করে নেয়া। 
أُحِلَّتْ لَكُم بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ
مائدة ১
مَا جَعَلَ اللَّهُ مِن بَحِيرَةٍ وَلَا سَائِبَةٍ وَلَا وَصِيلَةٍ وَلَا حَامٍ ۙ وَلَٰكِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۖ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
مائدة ১০৩
তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ গবাদি পশু (ও তদ্সদৃশ জন্তু) মায়িদা-১। 
আল্লাহ তা‘আলা এসব জন্তুকে হালাল করেছেন। গাইরুল্লাহকে খুশি করার জন্যে এসবকে হারাম সাব্যস্ত করা যাবে না। 
.
আল্লাহ কোনও প্রাণীকে না বাহীরা সাব্যস্ত করেছেন, না সাইবা, না ওয়াসীলা ও না হামী, কিন্তু যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশেই সঠিক বোঝে না (মায়িদা ১০৩)। 
১: বাহীরা, কান চিড়ে দেব-দেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রাণী। 
২: সাইবা, দেব-দেবীর নামে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া প্রাণী। 
৩: ওয়াসীলা, পরপর কয়েকটি মাদী বাচ্চা জন্ম দেয়ার কারণে, অতি মূল্যবাণ মনে করে, দেব-দেবীর নামে ছেড়ে দেয়া উটনী। 
৪: হামী, নির্দিষ্ট পরিমাণে পাল নেয়ার পর প্রতিমার নামে ছেড়ে দেয়া উট। 
.
হুকুম: 
এমনটা করা শিরক। তবে বস্তুগুলো হালাল। 

.

কুরআন করীমের হালাল, হারাম ও শিরক বিষয়ক প্রায় সমস্ত আয়াত এই ‘কানুনের’ আওতায় চলে আসবে।




No comments:

Post a Comment