Friday, 1 December 2017

[পর্ব-৩/শেষ]-- মুফতি তাক্বি উসমানী দা.বা. এর প্রবন্ধ: অনাহূত ভাবনা (ওয়াসওয়াসা রোগ) ও তার প্রতিকার -------------

১১. আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকুন------------------


ভ্রুক্ষেপ না করা সত্ত্বেও যদি চিন্তার উৎপাত বন্ধ না হয় তাহলে এই কষ্টের উপরই সন্তুষ্ট থাকুন। 

কেননা, আপনার সম্পর্কে এটাই আল্লাহর ফয়সালা। এটাই আপনার তাকদীর। 

আল্লাহ যদি চান, আমি জীবনভর এই অবস্থায় থাকি তবে তো আমার অসন্তুষ্ট হওয়ার উপায় নেই। 

আমার এই কষ্টভোগই যদি আল্লাহর মর্জি হয় তবে এতেই আমি সন্তুষ্ট। কবি বলেন-
‘না মিলন উত্তম না বিচ্ছেদ। প্রিয় যাতে সন্তুষ্ট, উত্তম তাই।’


আল্লাহ যে হালতে রাখেন তাই আমার জন্য ভালো। 

অতএব চিন্তা-ভাবনায় জর্জরিত হয়েও আমি খুশি। 

কবির ভাষায় :

 তোমার এই এখতিয়ার নেই যে, পরিবেশিত শরবত সম্পর্কে মন্তব্য কর-তা স্বচ্ছ কি ঘোলা; বরং সাকী তোমার পেয়ালায় যা কিছু ঢেলে দিয়েছে তাই তার করুণা।


তাৎপর্য বুঝে আসুক বা না আসুক, কারণ পরিষ্কার হোক বা না হোক আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্বাচন করেছেন তা-ই তাঁর করুণা।

--

১২. তোমার জন্য এটাই মুনাসিব------------------


অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে, অমুকের তো এই সমস্যা নেই। সে কত শান্তিতে আছে। 

অমুক শায়খের সঙ্গে তার সম্পর্ক! আর আমি এই সব অনাহূত ভাবনায় জর্জরিত। এই হালতের জন্য কি আমিই উপযুক্ত ছিলাম? এই অস্থিরতার অনলে আমাকেই কেন দগ্ধ হতে হবে?


মনে রাখতে হবে যে, এটা অস্থিরতা ও ধৈর্য্যহীনতা। 

ভাই, তোমার সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে এটাই তোমার জন্য উপযোগী আর তার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা তার জন্য উপযোগী। 

এটাও তাঁর দান, ওইটাও তাঁর দান। 

তার জন্য ওই অবস্থাটা ভালো, তোমার জন্য তোমার অবস্থা। তুমি যদি এই কষ্টের উপর ধৈর্য্য ধারণ করতে পার তবে আল্লাহর কাছে তোমার কি সমুচ্চ মর্তবা হাসিল হবে তুমি কি তা কল্পনাও করতে পার? 

অতএব অন্যের দিকে তাকাবে না। তুমি যা পেয়েছ তা তোমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।


আমার পেয়ালায় রয়েছে পানশালার সারাৎসার
আমাদের হযরত ডা. আবদুল হাই ছাহেব রা. একটা পংক্তি পড়তেন-
যার অর্থ : 

কে কী পেল, কতটা পেল তাতে আমার কী আসে যায়। আমার পেয়ালায় আল্লাহ যা দিয়েছেন আমার জন্য তো এটাই পানশালার সারবস্ত্ত।
--

১৩. সবরের আলাদা ছওয়াব রয়েছে----------------


 নিজের দায়িত্ব পালন করতে থাকুন। আর যেসব ভাবনায় আপনার ইখতিয়ার নেই তাতে মনোযোগ দিয়েন না। আর এ কারণে যে কষ্ট হয় তার সম্পর্কে ভাবুন যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এটা তাঁরই ফয়সালা। 

তাকদীর। 

অতএব আমি এতে সন্তুষ্ট। এর ফলাফল এই হবে যে, এই সব চিন্তা আপনার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না; বরং কষ্টের উপর সবর করার কারণে ছওয়াব পাওয়া যাবে এবং আল্লাহর কাছে মর্তবা বুলন্দ হবে। 

অতএব এতে সুফলই সুফল, ক্ষতি কিছুমাত্রও নেই।
আপনি যখন ভাববেন যে, আল্লাহ আমার জন্য যা ফয়সালা করেছেন তাতেই আমি রাজি এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট তো ‘রিযা বিলকাযা’ 

(আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকার) ছওয়াব আপনার আমল নামায় যুক্ত হবে। এছাড়া সবরের ছওয়াব তো আছেই।

--

১৪. দুনিয়াতে তো কষ্ট হয়েই থাকে-------------------------


দুনিয়াতে মানুষ যতই সাধ্য-সাধনা করুক, যতই যে বাদশাহ-আমীর হোক, পূর্ণ শান্তি কেউ পায় না। কেননা, দুনিয়া পূর্ণ শান্তির স্থানই নয়।
আল্লাহ তাআলা তিনটি জগৎ সৃষ্টি করেছেন। এক জগত, যেখানে শুধু শান্তি আর শান্তি, দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা-পেরেশানী কিছুই নেই। এটা হল জান্নাত। 

দ্বিতীয় জগত যেখানে শুধু অশান্তি আর অশান্তি, শান্তির লেশমাত্রও নেই। এই জগত জাহান্নাম। 

আর তৃতীয় জগত হল দুনিয়া, যাতে আমাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। এতে শান্তি যেমন আছে তেমনি অশান্তিও আছে। সুখের সঙ্গে দুঃখ আছে। এখানে কোনো আনন্দই নিরঙ্কুশ নয়, বিপদের কাঁটা তার সঙ্গে যুক্ত আছে। 

অতএব কেউ যদি কামনা করে, আমি শুধু শান্তিই পাব, দুঃখ ও পেরেশানী যেন আমাকে স্পর্শ না করে তবে তা কখনও পূরণ হবে না। যত বড় পুঁজিপতি হোক, শাসক হোক, সম্পদশালী হোক, জ্ঞানী-গুণী হোক, আলিম-ফাযিল হোক তাকে জিজ্ঞাসা করুন, কখনোই কি কোনো কষ্ট তোমার হয়নি? 

তার পক্ষে না বলা কখনো সম্ভব হবে না। অবশ্যই কোনো না কোনো কষ্টের স্বাদ তাকে আস্বাদন করতে হয়েছে।


অতএব এই দুনিয়াতে কষ্ট ভোগ করতেই হবে। এখন ইচ্ছা হলে এতে সবরও করা যায়, ইচ্ছে হলে বেছবরীও করা যায়। বান্দা যদি আল্লাহর ফয়সালায় এই বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে যে, যে কষ্ট তাঁর পক্ষ থেকে এসেছে আমি তাতে রাজি। তাহলে সে আল্লাহ তাআলার শুভ সংবাদকে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। 

ইরশাদ হয়েছে- (তরজমা)

‘নিশ্চয়ই সবরকারীদেরকে দেওয়া হবে অগণিত বিনিময়।’


এজন্য এই পৃথিবীতে যত শান্তি ‘রিযা বিলকাযা’র দ্বারা পাওয়া যায় তত আর কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।


হযরত বাহলূল মাজযূব এর ঘটনা-----
হযরত বাহলূল মাজযূব রাহ.কে কেউ জিজ্ঞাসা করল, কেমন আছেন? 

তিনি বললেন, খুব ভালো আছি। অত্যন্ত শান্তিতে আছি। 

লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, কেমন শান্তি? 

তিনি বললেন, আরে ভাই, ওই লোকের শান্তির পরিমাপ কে করতে পারে যার ইচ্ছার বিপরীতে কিছুই পৃথিবীতে হয় না! জগতের সকল বিষয় তো আমার ইচ্ছা মাফিক হচ্ছে! 

লোকেরা বলল, জনাব, পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত এমন কেউ আসেনি, যার ইচ্ছে মাফিক সবকিছু হয়েছে। এমনকি নবীগণেরও ইচ্ছা-বিরোধী অনেক কিছু ঘটেছে। 

আপনার এমন কোন মাকাম হাসিল হয়ে গেল যে, আপনার ইচ্ছে বিরোধী কোনো কিছুই ঘটে না?

 তিনি বললেন, প্রকৃত বিষয় এই যে, আমি নিজের ইচ্ছাকে মাওলার ইচ্ছায় বিলীন করে দিয়েছি। তাঁর যা ইচ্ছা সেটাই আমার ইচ্ছা। তিনি যাতে খুশি আমিও তাতে খুশি। 

আর যেহেতু বিশ্বজগতে কোনো কিছুই তাঁর ইচ্ছার বিপরীতে ঘটে না তাহলে আমারও ইচ্ছার বিরোধী কোনো কিছু নেই। সমর্পণের এই শান্তি নিজ ফযল ও করমে আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করেছেন।
--

১৫. ‘রিযা বিলকাযা’ তে রয়েছে প্রশান্তি---------------


মোটকথা, রিযা বিলকাযার চেয়ে বড় শান্তির উপায় আর নেই। এখন বান্দা এই পন্থায় শান্তি লাভ করতে পারে কিংবা শান্তির অন্বেষায় জীবনভর ছটফট করতে পারে।
হযরত রাহ.-এর উপরোক্ত মালফুযের সারকথা এই যে, ভ্রুক্ষেপহীনতা সত্ত্বেও যদি এই সব অনাহুত ভাবনা দূর না হয়; বরং যথারীতি তা আসতেই থাকে তাহলেও ভীত ও পেরেশান হওয়ার কারণ নেই। এক্ষেত্রে এই ভেবে হালতের উপর সন্তুষ্ট থাকাই কাম্য যে, আল্লাহ যখন আমার জন্য এটাই পছন্দ করেছেন তো আমি তাতে খুশী। তবে ওই সব ভাবনা মোতাবেক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং আপনাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

-------abdullah al mamun
মূল প্রবন্ধ : মুফতি তকী উছমানী
অনুবাদ : মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ

নিজে পড়ুন অন্যের সাথে শেয়ার করুন

Monday, 27 November 2017

মুফতি তাক্বি উসমানী দা.বা. এর প্রবন্ধ: === অনাহূত ভাবনা (ওয়াসওয়াসা রোগ) ও তার প্রতিকার [পর্ব-২]


--------------

৬. আরেকটি পদ্ধতি===============

আমার ওয়ালিদ ছাহেব (মুফতি শফী রহ.) বলতেন, 

যদি কোথাও অন্ধকার হয়ে আসে তবে তার সমাধান এই নয় যে, তুমি লাঠি নিয়ে অন্ধকার তাড়াতে নেমে পড়বে। কেননা, এভাবে অন্ধকার দূর হবে না। অন্ধকার দূর করার পন্থা এই যে, তুমি একটি বাতি জ্বালিয়ে দাও। বাতির আলো যেখানে পৌঁছবে সেখান থেকে অন্ধকার বিদায় নিবে।

মানুষের মনে শয়তানের পক্ষ থেকে যেসব কুচিন্তা, প্রশ্ন-সংশয় সৃষ্টি হয় সেগুলোও এক ধরনের অন্ধকার। একে তাড়ানোর চেষ্টায় লেগে যাওয়া সমাধান নয়; বরং তোমার মন-মস্তিষ্কে আল্লাহর স্মরণের বাতি জ্বালিয়ে দাও। বন্দেগী ও আনুগত্যের চেরাগ জ্বালিয়ে দাও। দেখবে আঁধার দূর হয়ে গেছে।--

৭. অন্য চিন্তায় মগ্ন হও----------------


এ ধরনের চিন্তা যদি বেশি আসে তাহলে এর সমাধান হযরত থানভী রাহ. এভাবে দিয়েছেন যে, এ ক্ষেত্রেও তা দূর করার চিন্তা ঠিক নয়। কেননা, যতই দূর করার চেষ্টা করবে ততই তা জোরদার হবে। এ সময় অন্য কাজে মনোনিবেশ কর কিংবা ভিন্ন চিন্তায় মশগুল হও।

- দর্শন শাস্ত্রে আছে-মানুষের চিন্তা এক মুহূর্তে দুই বিষয়ে নিবদ্ধ হয় না।তুমি যদি নিজেকে ভিন্ন কাজে বা ভিন্ন চিন্তায় মশগুল কর তাহলে প্রথম চিন্তা এমনিই দূর হয়ে যাবে।- চিন্তা দূর করার কোনো অযীফা নেইউপরের আলোচনায় হযরত রাহ. এই কথাটাই বলেছেন যে, ‘অনাহূত ভাবনার সমাধান ভ্রুক্ষেপহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়।’ অর্থাৎ এর অন্য কোনো সমাধান নেই। লোকেরা আবেদন করে যে,নানা ধরনের ভাবনা মনে আসে, কোনো অযীফা দিন, যাতে এগুলো দূর হয়। তো হযরত বলছেন যে, এমন কোনো অযীফা নেই। এর একমাত্র সমাধান হল চিন্তা তাড়ানোর চিন্তা না করা।

--
৮. ঔষধ উদ্দেশ্য নয়, সুস্থতা উদ্দেশ্য তবে----------


এরপর একটি সূক্ষ্ম কথা বলা হয়েছে। তা এই যে, ----‘ভ্রুক্ষেপহীনতাকে মাধ্যম মনে করবে না, একেই মূল কাজ বলে মনে করবে। ভ্রুক্ষেপহীনতার দ্বারা চিন্তা-খেয়াল দূর হোক বা না হোক।’ 

অর্থাৎ উপরে যে বলা হয়েছে ভ্রুক্ষেপহীনতাই চিন্তা দূর করার উপায়। 

এর অর্থ এই নয় যে, ভ্রুক্ষেপহীনতা ঔষধের মতো নিছক উপায় মাত্র। দেখুন, মানুষ যখন কোনো রোগের জন্য ঔষধ ব্যবহার করে তখন তার মূল উদ্দেশ্য থাকে আরোগ্য লাভ করা। 

যেহেতু ঔষধ সেবন আরোগ্য লাভের উপায় তাই অবশ্যই এর গুরুত্ব রয়েছে কিন্তু তার গুরুত্ব আরোগ্য লাভের উপায় হিসেবেই, উদ্দেশ্য হিসেবে নয়। মূল উদ্দেশ্য তো আরোগ্য লাভ করা। এজন্য ঔষধ সেবনের পর মানুষ সুস্থতার অপেক্ষায় থাকে। একদিন, দুইদিন, তিন দিন ঔষধ সেবনের পরও যদি সুফল না আসে তাহলে মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।

--

৯. এই সমাধান নিছক ঔষধ নয়------------------


হযরত রাহ. বলছেন যে, অনাহূত ভাবনা দূর করার জন্য যে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে 

অর্থাৎ সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করা-এটাকে নিছক ঔষধ মনে করবে না। অর্থাৎ এই ব্যবস্থা প্রয়োগের পর চিন্তা দূর হল কি হল না এই অপেক্ষায় না থেকে নিজ কাজে মশগুল থাকবে। 

মনে রাখতে হবে যে, এটা নিছক মাধ্যম নয়, এটাই মূল কাজ। অতএব একদিন, দুইদিন, তিন দিন এই পন্থা অনুসরণের পরও যদি দেখা যায়, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না তবুও তা পরিত্যাগ করা যাবে না। চিন্তার সমস্যায় সেদিকে মনোযোগ না দেওয়াই মূল কাজ। অতএব জীবনভর অবাঞ্ছিত চিন্তা থেকে নিষ্কৃতি না পেলেও এই পন্থাই অনুসরণ করে যেতে হবে। 

চিন্তা আসুক আপনি অন্য দিকে মনোযোগ দিন। আবার আসুক, আবার অন্য চিন্তায়, অন্য কাজে ব্যস্ত হোন। এটাই সমাধান এবং এটাই করণীয়।--

১০. মানসিক প্রশান্তি উদ্দেশ্য নয়-------------------


এরপর হযরত রাহ. আরেকটি সূক্ষ্ম কথা বলেছেন। তা এই যে, ‘মানসিক প্রশান্তি লাভকে মূল লক্ষ বানাবে না।’ 

অর্থাৎ এই সব ভাবনা দূর হোক-এটা আপনি কেন কামনা করছেন? মানসিক প্রশান্তির জন্য? এই সব চিন্তা সর্বদা আপনার মন-মস্তিষ্ককে অস্থির করে রাখে, তাই স্থিরতা ও প্রশান্তির জন্য তা থেকে নিস্তার পাওয়া দরকার? 

এই সম্পর্কে হযরত রাহ.-এর বক্তব্য এই যে, প্রশান্তি লাভকে উদ্দেশ্য বানোনো যাবে না; বরং উদ্দেশ্য এই হবে যে, ওইসব ভাবনা থেকে মনকে মুক্ত করে প্রয়োজনীয় কাজে মনোনিবেশ কর। যদি প্রশান্তি লাভই কাম্য হয় তবে তো মনের চাহিদা পূরণই উদ্দেশ্য হল।

-------
to be continue--------- abdullah almamun.
নিজে পড়ুন অন্যের সাথে শেয়ার করুন

মুফতি তাক্বি উসমানী দা.বা. এর প্রবন্ধ: --- অনাহূত ভাবনা (ওয়াসওয়াসা রোগ) ও তার প্রতিকার [পর্ব-১]


---------------

১. অনাহূত চিন্তা-ভাবনার চিকিৎসা হল ভ্রুক্ষেপ না করা--------------------


হযরত থানভী রাহ. এক মালফূযে একটি ব্যাপক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। 

মানুষের মনে বিভিন্ন মন্দ ভাবনা আসে। কখনও এমনসব অবাঞ্ছিত চিন্তাও তার মনে উদয় হয় যে, ঈমান সম্পর্কেই সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে যায়। 

সম্ভবত এমন কোনো মানুষ নেই, যার মনে এ ধরনের চিন্তা কখনই আসে না। সবার মনেই তা আসে এবং এর কারণে মানুষ পেরেশান হয়। বিশেষত যে ব্যক্তি দ্বীনের পথে চলার ইচ্ছা করেছে এবং চলতে আরম্ভ করেছে তার মনে এ ধরনের চিন্তা খুব বেশি আসে।


অন্যদিকে দ্বীনদারীর দিকে যাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সারা দিন দুনিয়াবী কাজকর্মে মগ্ন, গুনাহর কাজে লিপ্ত তাদের মনে এই সব চিন্তা আসে না। 

এগুলো তাদের মনেই আসে যারা আল্লাহর রাস্তায় চলতে আরম্ভ করেছে। কোনো কোনো চিন্তা তো এতই ভয়াবহ যে, মানুষ তার ঈমানের ব্যাপারেও আশংকায় পড়ে যায়। 

কখনও আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে প্রশ্ন-সংশয় আসে, কখনও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, কখনও কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ সম্পর্কে, কখনও বা শরীয়তের বিধিবিধান সম্পর্কে। 

এ সময় সঠিক নির্দেশনা না পেলে গোমরাহীর মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।ওই দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না,


হযরত রাহ. বলেন, -- এ সমস্যার সমাধান হল ভ্রুক্ষেপহীনতা। মন্দ চিন্তা যদি আসে তবে আসুক। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই। এই চিন্তাই করবেন না যে, কী চিন্তা আসছে আর কী যাচ্ছে।--

২. এই সব চিন্তাও ঈমানের আলামত----------------


এখানে মনে রাখতে হবে যে, এই সব অবাঞ্ছিত চিন্তাও ঈমানের আলামত। 

হাদীস শরীফে এসেছে, এক সাহাবী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রাসূল! অনেক সময় আমার মনে এমন সব কথা আসে, যা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়াও আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। 

আমি কী করতে পারি? 

দেখুন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী জওয়াব দিলেন! তিনি বললেন-‘এটা তো খাঁটি ঈমানের আলামত।’ 

(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, বাবু বয়ানিল ওয়াসওয়াসা ফিল ঈমান)


অর্থাৎ এই সব অবাঞ্ছিত চিন্তা তো ঈমানের চিহ্ন। কেননা, এসব চিন্তা শুধু মুমিনের মনেই আসে, পাপাচারীর মনে আসে না।


চোর ওই ঘরেই সিঁধ কাটে যাতে ধন-সম্পদ আছে.
হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, ----
চোর ওই গেরস্তের বাড়িতেই যায় যার মালদৌলত আছে। যে ঘরে কিছু নেই সেখানে চোর কেন যাবে? 

তো এই চোরও (শয়তান) ওই অন্তরেই কুমন্ত্রণা দেয় যাতে ঈমানের দৌলত আছে। অন্তরে যদি আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান না থাকত তাহলে শয়তানের সেখানে যাওয়ার ও কুমন্ত্রণা দেওয়ার প্রয়োজনই হত না। 

এজন্য এইসব অনাহূত চিন্তা যখন মনে আসে তো প্রথম কর্তব্য হল আল্লাহর শোকর গোযারী করা যে, আলহামদুলিল্লাহ, আমার অন্তরে ঈমান আছে। তা না হলে এই সব চিন্তা আমার মনে সৃষ্টি হত না।



--

৩. মন্দ চিন্তায় উদ্বিগ্ন হওয়া ঈমানের আলামত-------------------


এটা ঈমানের লক্ষণ এই ভাবেও যে, আপনার মনে এই সব কথা আসলে আপনি উদ্বিগ্ন হন। আপনার কাছে এগুলো মন্দ চিন্তা বলে মনে হয়। ভেবে দেখুন, অন্তরে যদি ঈমান না থাকত তাহলে কি আপনি উদ্বিগ্ন হতেন না কিংবা একে মন্দ বলে মনে করতেন? বোঝা গেল যে, অন্তরে ঈমানের দৌলত রয়েছে।

মন্দ চিন্তা কেন আসে
কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে সান্তনাবাণী শুনিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে- (তরজমা) আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও। -সূরা আ‘রাফ ২০০
অর্থাৎ শয়তানের পক্ষ হতে যে সব মন্দ ভাবনা সৃষ্টি হয় 
---

এগুলো প্রকৃতপক্ষে শয়তানের কুমন্ত্রণা। এভাবে সে মুমিনদেরকে পেরেশানীতে ফেলতে চায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, এই কুমন্ত্রণা মুমিনদের চুল পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া। 

এজন্য এইসব অনাহূত ভাবনা যখন আপনাকে বিরক্ত করে তখন স্মরণ করুন যে, এটা ঈমানের আলামত। শয়তান তার উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। তাকে বলে দিন, ঠিক আছে তুমি তোমারা মতো চেষ্টা কর, আমিও আমার মতো চেষ্টা করছি। এরপর নিজ কাজে মগ্ন হয়ে যান। 

এদিকে বেশি মনোযোগ দিবেন না। কেননা, এইসব অবাঞ্ছিত চিন্তাকে গুরুত্ব দিয়ে কীভাবে তা দূর করা যায় এ চিন্তায় পড়ে গেলে আপনি এখানেই আটকা পড়ে যাবেন। সামনে অগ্রসর হওয়া আর সম্ভব হবে না। এভাবে শয়তানের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে।

৪. একটি দৃষ্টান্ত--------------------

হযরত থানভী রাহ. একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়টা বুঝিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ধর, কারো কাছে বাদশাহের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ এসেছে যে, অমুক সময় দরবারে উপস্থিত হবে। তোমাকে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হবে এবং পুরষ্কৃত করা হবে। 

আমন্ত্রিত ব্যক্তি প্রস্ত্তত হয়ে দরবারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। 

পথিমধ্যে দুটি কুকুর রাস্তার দুই পার্শ্বে দাড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল। এখন তার কী করা উচিত? যথাসময়ে দরবারে পৌঁছার জন্য কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দ্রুত পথ চলা উচিত, না ওই কুকুরগুলোর চিৎকার বন্ধ করার চেষ্টায় লেগে যাওয়া উচিত? বুদ্ধিমানের কাজ কী হবে?

যদি সে কুকুর তাড়ানোর জন্য সেগুলোর পিছনে পিছনে ছুটতে থাকে তাহলে তো সময়মতো দরবারে পৌঁছা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। 

এজন্য বুদ্ধিমানের কাজ এটাই যে, কুকুরগুলো চিৎকার করতে থাকুক, তুমি যেখানে যেতে মনস্থ করেছ সেখানে কীভাবে দ্রুত পৌঁছা যায় সেই চিন্তা কর। তুমি যদি কুকুরের চিৎকার থামানোর চিন্তায় পড়ে যাও তাহলে দরবারে পৌঁছার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে।


--

একইভাবে তোমরা যে ইবাদত করছ এটা হল আল্লাহর দরবারে উপস্থিতি। এই সৌভাগ্যের মুহূর্তে যেসব বিক্ষিপ্ত ভাবনা তোমার অন্তরে সৃষ্টি হচ্ছে এগুলো হল কুকুরের চিৎকার। যদি তোমরা সেদিকে মনোযোগ দাও এবং তা দূর করার চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড় তাহলে শয়তানের উদ্দেশ্য হাসিল হবে আর তোমরা সাক্ষাতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

৫. নিজ কাজে মশগুল থাকুন--------------


এজন্য এই সমস্যার সমাধান হল, ভ্রুক্ষেপ না করা। 

অর্থাৎ কী চিন্তা আসল, কী চিন্তা গেল-তা না ভেবে নিজের কাজে মশগুল থাকুন। যেমন এখন আপনার নামায পড়ার সময়, আপনার মনে যে ভাবনাই আসুক আপনি নামাযে মশগুল হয়ে যান। আপনার এখন তেলাওয়াতের সময়, মনে যত চিন্তাই আসুক আপনি তেলাওয়াতে মশগুল হয়ে যান। এভাবে অন্য কোনো কাজের সময় হয়ে থাকলে তাতে লেগে যান। 

মোটকথা, এদেরকে আপনার নির্ধারিত কাজে প্রতিবন্ধক হওয়ার সুযোগ দিবেন না। এটাই সমাধান। তা না করে আপনি যদি চিন্তা দূর করার চিন্তায় পড়ে যান তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।

-------

to be continue..........abdulla almamun
নিজে পড়ুন অন্যের সাথে শেয়ার করুন

Wednesday, 22 November 2017

মানুষের যে কোন কাজ আল্লাহ কে খুশী করার জন্য হওয়া বাঞ্ছনীয় |কে কি ভাবল, কে কি বলল সেটা দেখার বিষয় না; কারণ প্রতিদান তো রবের কাছে | নিন্মে দেখুন মেয়েরা কেন মুখ ঢেকে রাখে?

মুখ ঢাকার ব্যপারে এই কন্সেপ্ট টা সবার ক্লিয়ার থাকা উচিত |
. --------------------------------------------------------------------------------

.

যারা বলেন, পরপুরুষের সামনে
মেয়েরা তাদের চেহারা খোলা
রাখতে পারবে! তাদের জন্য: -------------------------
.


হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও
কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে
বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের
কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। 

(সুরাহ আহযাব : ৫৯ )
.

.
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) এই আয়াতের
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন "আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে চাদর দ্বারা মস্তক ও চেহারা আবৃত করার নির্দেশ দিয়েছেন " ।
(তফসীরে ইবনে কাসীর ৩/২৭৪)
.

.
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও
হাতমোজা পরিধান না করে।’
-সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮


উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর হজ্বের বিবরণে বলেছেন, ‘ইহরামের কারণে
তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষেরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন তারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন। তারা চলে যাওয়ার পর নেকাব তুলে ফেলতেন।’
-মুসনাদে আহমদ ৬/৩০; সুনানে
আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে
মাজাহ হাদীস : ১৭৫৭।
.

.
হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ
হাদীসে বলেছেন-‘আমি আমার
স্থানে বসে ছিলাম। একসময় আমি
ঘুমিয়ে পড়ি। 

সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল
আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে। সে
যখন এখানে পৌঁছল তখন একজন ঘুমন্ত
মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে
আমার নিকট এলে আমাকে চিনে
ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ
হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল।
তখন সে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না
ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, 

যার দরুণ
আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না
দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘আমি ওড়না
দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।’


- সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম,
হাদীস : ২৭৭০; জামে তিরমিযী,
হাদীস : ৩১৭৯

.

.
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ.
বলেন-‘সঠিকতর সিদ্ধান্ত এই যে, নারীর
জন্য পরপুরুষের সামনে দুই হাত, দুই পা ও
মুখমন্ডল খোলা রাখার অবকাশ নেই।’
-মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/১১৪

.

.
ইবনুল কাইয়িম রাহ. বলেন, ‘নারী
নামায আদায়ের সময় দুই হাত ও মুখমন্ডল
খোলা রাখতে পারেন, কিন্তু এভাবে
বাজারে ও লোকের সমাগমস্থলে
যাওয়ার অবকাশ নেই।’
-ই’লামুল মুয়াক্কিয়ীন ২/৪৭

.
.

শায়খ ইবনে বায রাহ., শায়খ ইবনে
উছাইমীন ও শায়খ ইবনে জিবরীনও একই
ফতোয়া দিয়েছেন। দেখুন :
রিসালাতুন ফিলহিজাবি ওয়াসসুফূর,
পৃ.১৯; ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল
হারাম পৃ. ১১৬৯



এর পরেও কি বলতে হবে মেয়েরা কেন মুখ ঢেকে রাখে? এর পরেও কি বলব মুখ খোলা রাখলেও হবে? আল্লাহ ই সর্বাধিক জ্ঞানী |যারা বুঝে তাদের জন্য ১টা হাদীস ই যথেষ্ট, আর যারা বুঝতে চায়না; তাদের হাজারটা হাদীস দেখালেও লাভ নেই |
আল্লাহু মুস্তায়ান |
মানুষের যে কোন কাজ আল্লাহ কে খুশী করার জন্য হওয়া বাঞ্ছনীয় |কে কি ভাবল, কে কি বলল সেটা দেখার বিষয় না; কারণ প্রতিদান তো রবের কাছে 


Friday, 17 November 2017

আর এটা সম্ভব তখনই যখন আপনি শিখবেন , আমল করবেন , শিখাবেন আর সবর করবেন ... ইলম অর্জন করা প্রত্যেক টা মানুষের উপর ওয়াজিব ... এই ইলম স্কুল কলেজের ইলম না , এই ইলম সেই ইলম যেই ইলম আপনি পাবেন কোন সহিহ ইসলাম শিক্ষার মাদরাসায় ...

আমার_বাচ্চার_ভবিষ্যৎ-----------------------------

ছোট এক লাইনের এই কথাটি মা বাবার সব চেয়ে বড় মাথা ব্যাথার কারন !! 


বাচ্চা গড়ে তুলার কারিগর বলে কথা , 

একটু এদিক ওদিক হলেই তো পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে !!


বেশির ভাগ মা বাবা কে দেখা যায় তাদের বাচ্চাদের কে নিয়ে প্লান করেন বাচ্চার বিয়ে পর্যন্ত ,
এই স্কুলে এরপর ঐ স্কুলে এরপর ঐ কলেজ এরপর ডক্টর না হয় ইঞ্জিনিয়ার এরপর বিয়ে ,
 মেয়েকে তুলে দেন জামাইর হাতে আর ছেলের দায়িত্ব বউ কে দিয়ে বলেন এইবার তুমি সামলাও ,
ছেলে মেয়েদের বলেন এবার নিজের লাইফ নিজেই গুছাও আমাদের কাজ শেষ !!


আদর্শ শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলে দেন সন্তান কে ...
 কিন্তু শুধু মাত্র দুনিয়ার জন্য !!
আখেরাতের জন্য কতটুক শিক্ষা দেন সন্তান কে ??


বাচ্চাকে যেভাবে এ বি সি সরে অ সরে আ শিখান সেভাবে কি নামাজের সুরা গুলা শিখান ? দুয়া গুলা শিখান ? ৪ বছর হলে স্কুলে দেন ৭ বছর হলে নামাজ শিখান ?মেয়েকে ৯-১২ বছর হলে মেয়েলি ব্যাপার গুলো শিখান । পর্দা করতে শিখান ?


অনেক মা বাবা কে দেখছি আজকাল বাচ্চার ৩/৪ বছর হলেই জানতে চান বাচ্চা কে মাদরাসায় দিবো নাকি স্কুলে ? তাদের ইচ্ছা থাকে মাদরাসায় দিতে , শিক্ষা সফরের শুরু টা তারা আল্লাহ্‌ বিল্লাহ করে শুরু করতে চান , কেজি ওয়ান টু হলে এরপর তুলে স্কুলে দিয়ে দেন ...


ব্যাপার টা অনেক টা এমন , আম গাছ কেটে তার শিকড়ের উপর শিকড় ছাড়া একটি পেয়ারা গাছ লাগিয়ে দিলেন !


গোঁড়ায় পানি দিলে আম গাছের শিকড় মজবুত হবে ঠিকই কিন্তু পেয়ারা গাছ সম্পুর্ন ইয়ুজলেস !!


অনেক কে দেখা যায় এই প্রাথমকি ইসলাম শিক্ষাটাই মনে রাখে আজীবন, সেই দুই এক বছর যে মাদরাসায় গিয়েছিল এরপর আর ইসলামিক কোন জ্ঞান তার লাভ করা হয়নি , 

কয়েকটি ভুল ভাল উচ্চারিত সুরা , দুই চারটা গাইর সহিহ আমল আর এক গাদা ভুল ধারনা !!! 


যেমন শুধু হিজাব করলেই পর্দা হল, মনের পর্দা বড় পর্দা , যে কোন ওজরে নামাজ ছাড়া যায় , আল্লাহ্‌ বুঝেন উনি মাফ করে দিবেন , এক্সামের জন্য নামাজ রোজা না রাখা , ইসলাম শান্তির ধর্ম , এই ধর্মে সব জায়েজ মানে যেই কোন কাজে শান্তি লাগা মানেই এটা জায়েজ ... ইত্যাদি ... 


এইসব ধারনা ও স্বল্প জ্ঞান আমাদের কে বাধা দিবে জান্নাতে যেতে ...


মা বাবার ধারনা মাদরাসায় পরে কি হবে ? বেশি কামাই করতে পারবেনা , মাদ্রাসার হুজুর আর ইমাম দের কতই বা বেতন ?ইত্যাদি ...


তাদের চিন্তা শুধু মাত্র দুনিয়াবি !! এটা ভাবেনা মুমিন দের জন্য দুনিয়া কত কষ্টের ?

স্বল্প রোজগার হবে ঠিকই কিন্তু আখেরাতের ব্যাংক ব্যালেন্স যে ধেই ধেই করে বাড়ছে সেটা বুঝেনা ...


সন্তানের ভিতর দ্বীনের বুঝ থাকলে মা বাবার শান্তি , আর এই বুঝ না থাকলে মা বাবার অশান্তি !!


স্কুল কলেজের বই তে দুই ধরনের শিক্ষা থাকে , 

এক ধরন হইল পুরাই ইয়ুজলেস যা আজ পর্যন্ত কারো কাজে আসে নাই , 

আরেক ধরনের হল কিভাবে কামাই করা যাবে সেটা ...


স্কুল কলেজের বই তে যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান থাকে তা ইসলাম ধর্মকে আরও বিকৃত করে দেয় !!
কিন্তু শারিয়া লাইনে কি থাকে ? কি শিখানো হয় ? শুধু দাড়ি টুপি বোরখা পরা আর জঙ্গিবাদীত্ব ?

না , 

এইখানে শিখানো হয় কিভাবে এক জন মানুষ দুনিয়ার জীবন কাল কাটাবে শান্তিতে এরপর মৃত্যুর পর জান্নাতুল ফেরদাউসে যেয়ে থাকতে পারবে ...


শেখানো হয় সে তার নফস কে কিভাবে সৎ পথে চালাবে , কিভাবে সে আল্লাহ্‌র সব হুকুম মেনে চলবে ,কিভাবে শয়তান কে পরাজিত করবে , কিভাবে সে নবীর সুন্নত আঁকড়ে ধরবে , কিভাবে সে সহিহ ভাবে কুরআন পড়বে ও আমল করবে ও দাওয়াত দিবে , কিভাবে তাওয়াককুল করবে কিভাবে তার রিজিক আসবে , কিভাবে সে তার মা বাবার খেয়াল রাখবে , কিভাবে বউ/স্বামি সন্তানের খেয়াল রাখবে , কিভাবে প্রতিবেশী আত্মীয় ও গরীবের হক আদায় করবে ... 


তাঁকে সহিহ শুদ্ধ ভাবে কুরআন শিখায় , নামাজ শিখায় , যাকাত দেওয়া শিখায় , প্রতিটা দুয়া শিখায় , বিপদ থেকে মুক্তির পথ দেখায় , 

ইমান মজবুত করে দুনিয়া সহজ করে দেয় আর আখিরাতের জন্য এতো এতো এতো আমল জমা করায় ... মা বাবার মৃতুর পর চল্লিসা কুলখানি বিভিন্ন খতম নয় বরং এমন সব আমল শিখায় যার নাম সদগায়ে জারিয়া আর যেটা বাস্তবেই মা বাবার কবরে শান্তি দেয় ...


আপনি দেখবেন না বৃদ্ধাশ্রমে কোন হুজুর তাঁর মা বাবা কে দিয়ে আসছে , কারন কুরআন আমাদের শিখায় মা বাবা যেন উফ শব্দটা পর্যন্ত না করি আমরা বিরক্ত হয়ে বা রেগে ...
আজকে আপনি ভাবছেন আপনার সন্তান কে স্কুলে দিবেন না মাদরাসায় ...
স্কুলে দিলে একদিন আপনার সন্তান ভাব্বে মা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিবো ? মাসে মাসে এতো গুলো খরচের টাকা দিবো ? 


কিন্তু শারিয়া ইলম আছে এমন এক ছেলে বা মেয়ে কখনও এরকম ভাব্বেনা , সে ভাব্বে কিভাবে মা বাবাকে মাথায় করে রাখা যায় , তাদের দুয়া পাওয়া যায় , তারা মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত খুজে ...
বৃদ্ধাশ্রম গুলো দেখলে সত্যি খারাপ লাগে ... এই মা বাবা না হাটি হাটি পাপা করে বাচ্চাদের স্কুলে দিয়েছিলেন ? মাথার ঘাম পায়ে ফেলে না স্কুলের ফিস ভরেছিলেন ?
আজ এভাবে মাশুল দিচ্ছেন ?


একজন ইসলামিক মেয়ে কখনই তাঁর শাশুড়ির সাথে বাজে বিহেভ করবেনা , কারন সে জানে এই মায়ের পায়ের নিচে তাঁর স্বামীর জান্নাত , একজন ইসলামিক শাশুড়ি কখনই তাঁর বউ এর সাথে কেচ কেচ করবেনা কারন তাঁর জানা আছে এই মেয়েই আমার ছেলের দুনিয়া ও জান্নাতের সঙ্গী ... 

একজন ইসলামিক ছেলে কখনই তাঁর বউ বা একজন ইসলামিক বউ কখনই তাঁর স্বামীর হক অধিকার নিয়ে হেলাফেলা করবেনা ,


কেউ কারো উপর জুলুম করবেনা কারন তারা জানে তারা একে অপরের দুনিয়া ও আখিরাতের সঙ্গী , তারা জানে যা কিছু কষ্টের তা আল্লাহ্‌র তরফ থেকে পরীক্ষা ... এবং সবরের পর অবশ্যই শান্তি আসবে ...
ইসলামিক শিক্ষা একটা মানুষ কে হালাল আয় রোজগার করতে শিখায় , আর শিখায় জান্নাতে কিভাবে প্রাসাদ নির্মাণ করতে হয় ... 


সেই প্রাসাদে দুনিয়ার প্রিয় মানুষ গুলো কে নিয়ে কিভাবে থাকা যায় ...
কিন্তু দুনিয়াবি ইলম শুধু শিখায় কিভাবে দুনিয়াতে হাই ফাই ভাবে থাকা যায় , কিভাবে লোকের সন্মান কামানো যায় ... 

ধর্ম কর্ম তাদের কাছে ষাটের পরে অবসরের কাজ !!


জিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাবো , তিনি আমাদের তাঁর ইবাদাত করতে সৃষ্টি করেছেন ... 

এই কাজ ছাড়া অন্য কাজ করে কেন মাফ আশা করবো তাঁর কাছে ?


আফসুস , আমরা গড়গড়ায়ে ইংলিশ পড়তে পারি , কিন্তু সুরা ইখলাস পারিনা ... 


আমরা দিনে দুই চাইর ঘণ্টা এক্সারসাইজে কাটাতে পারি কিন্তু ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারিনা ...


শীতের সময় আপাদমস্তক ঢেকে চলি অথচ সামান্য একটা জিলবাব গায়ে দিয়ে চলতে পারিনা !


আমরা দুনিয়া দারী এতো আপন করে নিয়েছি যত টা না জন্মের পর মা তাঁর সন্তান কে পরম স্নেহে বুকে মিশিয়ে নেন ...


সন্তান গড়ার কারিগর আপনি , তাঁকে আখিরাতের জন্য গড়েন , দুনিয়ার জন্য না ...
সুরাহ তাহরিমের ৬ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেছেন '' ইয়া আইয়ুহাল লাজিনা আমানু কু আনফুসাকুম ওয়া আহলিকুম না র ... ... ''


''হে মুমিনগণ , তোমরা নিজেদের কে এবং তোমাদের পরিবার পরিজন কে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর ''
প্রতিটা বাবা , প্রতিটা ভাই , প্রতিটা স্বামী ,প্রতিটা ছেলে ... নিজেদের পরিবার কে আগুন থেকে রক্ষা করতে বলেছেন আল্লাহ্‌ ...


আর এটা সম্ভব তখনই যখন আপনি শিখবেন , আমল করবেন , শিখাবেন আর সবর করবেন ...
ইলম অর্জন করা প্রত্যেক টা মানুষের উপর ওয়াজিব ...

 এই ইলম স্কুল কলেজের ইলম না , এই ইলম সেই ইলম যেই ইলম আপনি পাবেন কোন সহিহ ইসলাম শিক্ষার মাদরাসায় ...
Zainab Al-Gazi


দিলের মৌলিক রোগ এবং তার চিকিৎসা -------------


 ১. লোভ-দুনিয়ার লোভ। . 


২. দীর্ঘ আশা। আরবীতে বলা হয় ‘আমাল’। 

একটি বাড়ির মালিক হয়েছে, চলবে না, আরেকটি বাড়ির মালিক হতে হবে। একটি গাড়ির মালিক হয়েছে হবে না, আরেকটি গাড়ি লাগবে। একটি ফ্যাক্টরির মালিক হয়েছে, না, হবে না। আরেকটি ফ্যাক্টরির মালিক হতে হবে। আরো লাগবে, আরো লাগবে। ‘হাল মিন মাযীদ! হাল মিন মাযীদ!’ এটা হল দীর্ঘ আশা। 


. ৩. গোস্বা, রাগ। সীমাহীন গোস্বা। 

এত গোস্বা হয় যে, ইনসান না জানোয়ার, বুঝা যায় না। এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন- ﺃﻭﺻﻴﻨﻲ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ﻻ ﺗﻐﻀﺐ গোস্বা করবা না। সে আবারও বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে আরেকটি নসীহত করুন।

 রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন, গোস্বা ত্যাগ কর। সাহাবী তৃতীয়বার অনুরোধ করার পরও রাসূলুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই জবাব দিলেন। তো যতবারই সাহাবী নসীহতের কথা বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা বলেছেন- গোস্বা ছাড়, গোস্বা ছাড়।


 . ৪. চতুর্থ রোগ মিথ্যাবলা। মিথ্যা তো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে আমাদের। আমরা কথায় কথায় মিথ্যা বলি। মিথ্যার আশ্রয় নেই। 
. ৫. গীবত। এটা তো এখন ঘি-ভাত হয়ে গিয়েছে। 


কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ﺍﻳﺤﺐ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﺍﻥ ﻳﺄﻛﻞ ﻟﺤﻢ ﺍﺧﻴﻪ ﻣﻴﺘﺎ ﻓﻜﺮﻫﺘﻤﻮﻩ তোমরা কি মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তো গীবত হল মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো। গীবতকে যেন আমরা ঘি-ভাত মনে না করি। 


সকাল থেকে সন্ধ্যা সারাদিন আমার সামনে কেউ যেন একটা গীবতও করতে না পারে। আমার সামনে কেউ গীবত করলে তাকে বলবেন, আমি নিয়ত করেছি, গিবত করব না। দুআ করবেন আমি যেন গীবত না করি, কারো গিবত না শুনি। এভাবে আস্তে আস্তে গিবত দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। .


 ৬. কার্পণ্য, কৃপণতা। কারীমায় একটি পংক্তি আছে- ﺑﺨﻞ ﺍﺭ ﺑﻮﺩ ﺯﺍﻫﺪ ﺑﺤﺮ ﻭﺑﺮ ﺑﻬﺸﺘﻰ ﻧﺒﺎﺷﺪ ﺑﺤﻜﻢ ﺧﺒﺮ শেখ সাদী রাহ. বলেন, বখীল, কৃপণ যত বড় দরবেশই হোক, হাদীস বলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না বড় বড় দান-খয়রাত করার দরকার নেই। ছোট ছোট দান-খয়রাত করা যেতে পারে। তবে যেন রিয়া না আসে। 

. ৭. হিংসা-হাসাদ। হিংসা কাকে বলে? কারো মধ্যে কোনো গুণ দেখে এই কামনা করা যে, এটা নষ্ট হয়ে যাক। এটা হল হিংসা। আর এই আশা করা যে, তার মধ্যে যে গুণ আছে থাকুক তবে আল্লাহ! আমাকেও তা দান কর। এটা হিংসা না, এটাকে বলা হয় গিবতা বা ঈর্ষা। গিবতা জায়েয, কিন্তু হাসাদ বা হিংসা হারাম।
 হাদীস শরীফে আছে, হিংসুক জান্নাতে যাবে না।


 . ৮. রিয়া। অর্থ লোক দেখানো। মানুষে দেখুক। মানুষের সামনে নামায পড়ার সময় যদি নিয়ত করি যে, মানুষে দেখুক তাহলে এটা হবে রিয়া।
 এর চিকিৎসা হল, যে কাজে রিয়া আসে তা মানুষের সামনে বেশি বেশি করা তাহলে দেখা যাবে, কাজটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর অভ্যাস হয়ে গেলে তখন আর রিয়া থাকবে না। কাজটা থাকবে, কিন্তু রিয়া থাকবে না। .


 ৯. কিবর, অহংকার। নিজেকে বড় মনে করা। এর চিকিৎসা হল, নিজেকে সব সময় ছোট মনে করা। হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ. কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি প্রাণীর নাম নিয়ে নিয়ে বলতেন, আমি এগুলোর চেয়েও খারাপ। আরো খারাপ। কিবর যদি আসতে চায় তাহলে চিকিৎসা করতে হবে। .


 ১০. কীনা। কীনা কাকে বলে? এটাও হিংসার কাছাকাছি। মনে মনে জ্বলতে থাকা যে, এই গুণটা তাকে কেন দেওয়া হল! সে কেন এই জিনিসের মালিক হল! এই ইলম তাকে কেন দেওয়া হল ইত্যাদির নাম হল কীনা। 
.

এগুলো হল রুহানী রোগ। 

রুহানী রোগ তো অনেক আছে।

 তবে এই দশটা হল মূল। এই দশটা রোগের চিকিৎসা করলে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি দিবেন ইনশাআল্লাহ। আর তখনই মানুষ ফেরেশতাদের থেকেও আগে বেড়ে যাবে। .
 


Thursday, 16 November 2017

আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের কোন কিছু মনে থাকে না। আবার এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা কোন কিছু খুব বেশি দিন মনে রাখতে পারেন না। এমন সমস্যা মূলত দূর্বল স্মৃতিশক্তির কারণে হয়ে থাকে।

স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৯টি কাজ করতে বলেছেন। 

সেগুলো হলো-------------------------


১. ইখলাস বা আন্তরিকতাঃ -----------------------

যে কোনো কাজে সফলতা অর্জনের ভিত্তি হচ্ছে ইখলাস বা আন্তরিকতা। আর ইখলাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত।
নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন,
“উদ্দেশ্য বা নিয়ত হল আমাদের আত্মার মত অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মত। বেশীরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভালো হবে।”


এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা বলেন,----------------
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।”
 [সূরা আল-বায়্যিনাহঃ ৫]
তাই আমাদের নিয়ত হতে হবে এমন যে, আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেনো একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই বাড়িয়ে দেন।


. দু’আ ও যিকর করাঃ --------------------

আমরা সকলেই জানি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দু’আ করা যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন।
এক্ষেত্রে আমরা নিন্মোক্ত দু’আটি পাঠ করতে পারি,
“হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।”
[সূরা ত্বা-হাঃ ১১৪]


তাছাড়া যিকর বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,
“…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…
” [সূরা আল-কাহ্‌ফঃ ২৪]
তাই আমাদের উচিত যিকর,
তাসবীহ (সুবহান আল্লাহ),
 তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ),
তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবীর (আল্লাহু আকবার) –
এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করা।


৩. পাপ থেকে দূরে থাকাঃ --------------------

প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি প্রভাব হচ্ছে দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসাথে থাকতে পারে না।
ইমাম আশ-শাফি’ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“আমি (আমার শাইখ) ওয়াকীকে আমার খারাপ স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম এবং তিনি শিখিয়েছিলেন আমি যেন পাপকাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখি। তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান হলো একটি আলো এবং আল্লাহর আলো
কোন পাপচারীকে দান করা হয় না।”


আল-খাতীব আল-জামী'(২/৩৮৭) গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেনঃ
“এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে আবদ-আল্লাহ, আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোন কিছু কি আছে?
তিনি বলেন, যদি কোন কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে তা হলো পাপ করা ছেড়ে দেয়া।’”
যখন কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।


. বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করাঃ -------------------

একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে আমরা দেখবো যে, আমাদের সকলের মুখস্থ করার পদ্ধতি এক নয়।
কারো শুয়ে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কারো আবার হেঁটে হেঁটে পড়লে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়।
কেউ নীরবে পড়তে ভালোবাসে, কেউবা আবার আওয়াজ করে পড়ে। কারো ক্ষেত্রে ভোরে তাড়াতাড়ি মুখস্থ হয়, কেউবা আবার গভীর রাতে ভালো মুখস্থ করতে পারে।
 তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ উপযুক্ত সময় ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ঠিক করে তার যথাযথ ব্যবহার করা। 


আর কুর’আন মুখস্থ করার সময় একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ (কুর’আনের আরবি কপি) ব্যবহার করা। কারণ বিভিন্ন ধরনের মুসহাফে পৃষ্ঠা ও আয়াতের বিন্যাস বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট মুসহাফ নিয়মিত ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে তার একটি ছাপ পড়ে যায় এবং মুখস্থকৃত অংশটি অন্তরে গভীরভাবে গেঁথে যায়।


. মুখস্থকৃত বিষয়ের উপর ‘আমল করাঃ ---------------------

আমরা সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো একটি বিষয় যতো বেশিবার পড়া হয় তা আমাদের মস্তিষ্কে ততো দৃঢ়ভাবে জমা হয়।
কিন্তু আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে অতো বেশি পড়ার সময় হয়তো অনেকেরই নেই। তবে চাইলেই কিন্তু আমরা এক ঢিলে দু’পাখি মারতে পারি। আমরা আমাদের মুখস্থকৃত সূরা কিংবা সূরার অংশ বিশেষ সুন্নাহ ও নফল সালাতে তিলাওয়াত করতে পারি এবং দু’আসমূহ পাঠ করতে পারি সালাতের পর কিংবা অন্য যেকোনো সময়। 


এতে একদিকে ‘আমল করা হবে আর অন্যদিকে হবে মুখস্থকৃত বিষয়টির ঝালাইয়ের কাজ। আবার কোনো কিছু শেখার একটি উত্তম উপায় হলো তা অন্যকে শেখানো।
আর এজন্য আমাদেরকে একই বিষয় বারবার ও বিভিন্ন উৎস থেকে পড়তে হয়। এতে করে ঐ বিষয়টি আমাদের স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যায়।


. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাদ্য গ্রহণঃ-------------------

 পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত আবশ্যক। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের অলস করে তোলে।
ফলে আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। তাছাড়া কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। 


সম্প্রতি ফ্রান্সের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যয়তুনের তেল চাক্ষুস স্মৃতি (visual memory) ও বাচনিক সাবলীলতা (verbal fluency) বৃদ্ধি করে। আর যেসব খাদ্যে অধিক পরিমাণে Omega-3 ফ্যাট রয়েছে সেসব খাদ্য স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য খুবই উপকারী।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অনেক ‘আলিম কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের কথা বলেছেন।
 ইমাম আয-যুহরি বলেন, “তোমাদের মধু পান করা উচিত কারণ এটি স্মৃতির জন্য উপকারী।”
মধুতে রয়েছে মুক্ত চিনিকোষ যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া মধু পান করার সাত মিনিটের মধ্যেই রক্তে মিশে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়।
ইমাম আয-যুহরি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি হাদীস মুখস্থ করতে চায় তার উচিত কিসমিস খাওয়া।”


৭. পরিমিত পরিমাণে বিশ্রাম নেয়াঃ-------------------

 আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্ক অনেকটা ব্যস্ত অফিসের মতো কাজ করে। এটি তখন সারাদিনের সংগৃহীত তথ্যসমূহ প্রক্রিয়াজাত করে।
তাছাড়া ঘুম মস্তিষ্ক কোষের পুণর্গঠন ও ক্লান্তি দূর করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
 অন্যদিকে দুপুরে সামান্য ঘুম আমাদের মন-মেজাজ ও অনুভূতিকে চাঙা রাখে। এটি একটি সুন্নাহও বটে।
আর অতিরিক্ত ঘুমের কুফল সম্পর্কে তো আগেই বলা হয়েছে। তাই আমাদের উচিত রাত জেগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াহ বিতরণ না করে নিজের মস্তিষ্ককে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া।


৮. জীবনের অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার সমূহ ত্যাগ করাঃ ----------------

বর্তমানে আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ও জ্ঞান অর্জনে অনীহার একটি অন্যতম কারণ হলো আমরা নিজেদেরকে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে রাখি। ফলে কোনো কাজই আমরা গভীর মনোযোগের সাথে করতে পারি না। 


মাঝে মাঝে আমাদের কারো কারো অবস্থা তো এমন হয় যে, সালাতের কিছু অংশ আদায় করার পর মনে করতে পারি না ঠিক কতোটুকু সালাত আমরা আদায় করেছি।
আর এমনটি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নিজেদেরকে আড্ডাবাজি, গান-বাজনা শোনা, মুভি দেখা, ফেইসবুকিং ইত্যাদি নানা অপ্রয়োজনীয় কাজে জড়িয়ে রাখা।
তাই আমাদের উচিত এগুলো থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা।


৯. হাল না ছাড়াঃ ------------------

যে কোনো কাজে সফলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হাল না ছাড়া।
যে কোনো কিছু মুখস্থ করার ক্ষেত্রে শুরুটা কিছুটা কষ্টসাধ্য হয়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্ক সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেয়। তাই আমাদের উচিত শুরুতেই ব্যর্থ হয়ে হাল না ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।


যে কয়েকটি কারণ আপনার স্মৃতি শক্তি কমানোর জন্য দায়ী

---------------------------------------------------------------------

মানুষের মস্তিষ্কটাকে কম্পিউটার প্রসেসরের মতই ধরা হয়ে থাকে। এর একটি নির্দিষ্ট প্রসেসিং পাওয়ার রয়েছে আর রয়েছে বুদ্ধিমত্তাও। এই বুদ্ধিমত্তা আমরা কে কতখনি ব্যবহার করব তা নির্ভর করছে আমাদের ওপর।
 কোন কাজ শেষ করতে, সমস্যার সমাধান করতে, মনোযোগ দিতে, সৃজনশীল কাজে প্রয়োজন এই বুদ্ধিমত্তার। কিন্তু কিছু কিছু চিন্তার ভুল, মানসিক দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয় বুদ্ধি বা আইকিউ। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে মানুষের কোনো কিছু মনে রাখার ক্ষমতাও। বয়সের কারনে এ সময় মানুষের মস্তিস্কও খুব কম কাজ করে। 


এছাড়াও মানুষের আরও অনেক সমস্যা দেখা যায়। অনেক সময় আবার ছোট বাচ্চাদের স্মৃতি সমস্যা দেখা যায়। আর স্মৃতি শাক্তি মানুষের জন্য কতোটা প্রয়োজন এটা নিয়ে মনে হয় নতুন করে আর কিছু বলার নেই। অনেকে কোন কিছু একবার দেখলেই অনেকদিন পর্যন্ত স্মৃতিতে ধরে রাখেতে পারে। 


আপনি হয়তো ওই ব্যক্তির মতো কোন কিছুর দিকে বারবার তাকাচ্ছেন কিন্তু জিনিসটি মনে রাখতে পারছেন না। তবে কি আপনার মেধা অবশ্যই কম? আসলে সবাই একভাবে মনে রাখতে পারে না। কারণ, সবার মস্তিষ্কের গঠন একরকম নয়। তবে অনেকগুলো কৌশলের মধ্যে কয়েকটি সহজ কৌশলে আপনি বাড়িয়ে নিতে পারেন স্মৃতি শক্তি
যে কোন জটিল কাজ করার সময় আমাদের যদি অতিরিক্ত বুদ্ধি খরচের প্রয়োজন পড়ে তাহলে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে আমাদের মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা এবং ফোকাসের ওপর।
 সাময়িকভাবে আমাদের আইকিউ কমে যায়।


যেমন, আমরা যদি হাঁটতে হাঁটতে ১০০০ থেকে পেছনের দিকে ৭ বাদ দিয়ে গুণতে শুরু করি অর্থাৎ ১০০০, ৯৯৩, ৯৮৬ এভাবে এগিয়ে যেতে থাকি তাহলে একসময় হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ব। কারণ মস্তিষ্ক একই সঙ্গে দুই দিকে মনোযোগ দিতে পারবে না। কিন্তু কাজটি যদি এত জটিল না হত তাহলে একইসঙ্গে করা যেত। যেমন, আমরা গান শুনতে শুনতে অংক করতে পারি। খেতে খেতে বই পড়তে পারি।
আমাদের মানসিক কিছু অভ্যাস আছে যা আমাদের একই সঙ্গে দুই দিকে মনোযোগ দিতে দেয় না। আমরা যদি এগুলো সম্পর্কে সচেতন হই তাহলে নিজেদের যোগ্যতাকে আরও বাড়াতে পারব, আরও জটিল সমস্যা সমাধানে পারদর্শী হতে পারব। আসুন জেনে নিই এই মানসিক অভ্যাসগুলোর কথা।


১। গভীর চিন্তা  ---------------------------

একজন মানুষ যদি সর্বোক্ষণ হতাশা এবং বিষন্নতায় ভোগে এবং নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকে তাহলে এর বিরূপ প্রভাব মস্তিষ্কে পড়ে।
আমরা যখন স্ট্রেসড থাকি তখন অনেক স্বাভাবিক বিষয়ও ভুলে যেতে থাকি। ছোট-খাট অনেক ভুল করতে থাকি যা করার কথা নয়। কারণ গভীর মানসিক চাপ আমাদের মনোযোগ ব্যাহত করে।
শুধু মানসিক নয়, এর অনেক শারীরিক কুপ্রভাবও আছে।


২। সমাধান না হওয়া আত্মগ্লানি -------------------

আমাদের জীবনে বিভিন্ন রকম ভুল আমরা করি।
 সেগুলো আমাদের মধ্যে এক ধরণের আত্মগ্লানি তৈরি করে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোর কোন সমাধান নেই। এমনকি এমনও অনেক সময় হয় যে, আমাদের দোষ না থাকা স্বত্ত্বেও আমরা নিজেদের দোষী মনে করি।
 এতে আমাদের মন ভারাক্রান্ত থাকে। নিজেকে দোষী মনে করে সারাক্ষণ কষ্টে থাকা ধীরে ধীরে নিজেকে শেষ করে দেয়ার সামিল।
এই সমস্যার সবচেয়ে ভাল সমাধান হল, ক্ষমা চাওয়া এবং নিজেকে আত্মগ্লানি থেকে মুক্তি দেয়া।


অকারণ অভিযোগ --------------------

কিছু ক্ষেত্রে রাগ প্রকাশের কোন মানে নেই।
এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন আমাদের হতে হয়, যেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু আমরা সেগুলোতে রাগ প্রকাশ করবোই, এটা যেন নির্ধারিত সত্য।
শুধু তাই নয়, একই ঘটনা আমরা যতবার বর্ণনা করি ততবার আমরা রেগে যাই। এতে অনেক শক্তি খরচ হয়।
যেসব অভিযোগের কোন সমাধান নেই সেসব অভিযোগ আমাদের দুর্বল বোধ করায়, আত্মবিশ্বাস কমায়। এতে মনোযোগ দেয়া, বুদ্ধি প্রয়োগের ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
তাই যত আমরা স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতিকে গ্রহণ করব তত আমাদের সুযোগ তৈরি হবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার।
 মাথা ঠাণ্ডা রেখে প্রতিকূল অবস্থা বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারব।


৪। দুশ্চিন্তা করা --------------------

আমাদের মধ্যে বেশীরভাগ মানুষই চিন্তা করাকে ক্ষতিকারক মনে করেন না।
অথচ অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এক প্রকারের ব্যাধি। দুশ্চিন্তা আমাদের বুদ্ধি প্রয়োগের ক্ষমতাকে হ্রাস করে। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়।
এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অল্প সমস্যাতেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আর কোন সমাধান তো পানই না, অন্যদেরকেও সমস্যায় ফেলে দেন।
অনেকে কোন কারণ ছাড়াই দুশ্চিন্তা করে রাতে ঘুমাতে পারেন না। 


৫। অগ্রহণযোগ্যতা -----------------------

আমরা কোথাও নিজেদের অগ্রহণযোগ্যতা মেনে নিতে পারি না। আশানুরূপ প্রবেশাধিকার না থাকলে আমরা হতাশা বোধ করি। 
এই অভ্যাস আছে সব মানুষেরই। নিজেদের জন্য ‘না’ শব্দটি আমরা চাই না। যুক্তির বদলে আমরা আবেগ দিয়ে বিচার করি তখন। কখনো কখনো নিজের সমালোচনা করি। কখনো বা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠি। 
ফলাফল নেই এমন প্রতিটি আচরণ আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, বুদ্ধি কমায়।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

সবকিছুর সহজ সমাধান হল, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী। জীবন সম্পর্কে বাস্তব বোধ আমাদেরকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে।
পূর্বে ধারণা করা হতো, কোন ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা পারিবারিক ইতিহাসের উপর নির্ভর করে।
 তবে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে বিভিন্ন চর্চা ও খাদ্যতালিকার পরিবর্তনের ফলে মানুষ নিজেই তার বুদ্ধিমত্তার স্তর খুব সহজে বাড়িয়ে নিতে পারে।
 ----------চলুন জেনে আসি যে কয়েক উপায়ে বাড়িয়ে নিতে পারেন আপনার আইকিউ লেভেল----------


১) প্রচুর পড়তে হবেঃ --------------------------

পড়ালেখা শুধু নিজের বিভাগ অনুযায়ী করলে হবে না। যেমন আপনি যদি বিজ্ঞানের ছাত্র হন শুধু বিজ্ঞানের বই পড়লে চলবে না। আপনাকে পড়তে হবে সব ধরণের বই। পড়তে হবে পত্রিকা, ম্যাগাজিন, জোকস, উপন্যাস, কবিতা, গল্প সব কিছু।
এতে আপনার মস্তিষ্ক বিভিন্ন দিকে চিন্তা করার ক্ষমতা পাবে।


) পাজল মিলানঃ--------------------------

বিভিন্ন পত্রিকায় শব্দজট, পাজল, বুদ্ধির প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন। খেলুন রুবিক্স কিউব। প্রথম প্রথম এসব সমাধান করতে সময় বেশি লাগলেও ধীরে ধীরে আপনি অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন। এসব মিলাতে যত সময় কম লাগবে বুঝবেন আপনার আইকিউ লেভেল বেড়ে চলছে।


৩) মেডিটেশন করুনঃ---------------------

বিশেষজ্ঞদের মতে, মেডিটেশন বুদ্ধিমত্তা বাড়ানোর কার্যকর এক অস্ত্র। এটি মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে, ধৈর্য ধরতে শেখায়, মনোযোগ বাড়িয়ে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে প্রতিদিন ৩০ মিনিট মেডিটেশন করার চেষ্টা করুন।


৪) ব্যায়াম করুনঃ--------------------

বিখ্যাত সৃজনশীল লেখক Win Wenger এর মতে, হালকা ব্যায়াম আপনার বুদ্ধিমত্তা বাড়িয়ে তোলে। দিনের কিছু সময় বের করুন ব্যায়ামের জন্যে।
ব্যায়াম করার পরপরই মেডিটেশন করতে পারেন। এতে আপনার শরীরের পাশাপাশি প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়বে মনেও।


৫)পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চত করুন:--------------

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক আট ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। একটা চমৎকার ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে।
ঘুমের সময় সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যগুলোকে মস্তিষ্কসংরক্ষণ করতে থাকে। আর ঘুমকে বলা হয় মেমোরি চার্জার। ঘুমের সময় আপনার মেমোরি পরবর্তী স্মৃতি ধরার জন্য প্রস্তুত হয়।
 তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারেন।



-খাদ্যতালিকা সাজিয়ে তুলুনঃ-------------------

আনন্দের কথা হচ্ছে এমন কিছু খাবার ও ফল আছে যা খেয়েও আমরা আমাদের স্মৃতি শক্তি বাড়াতে পারি। চলুন জেনে নেই সে সকল খাবার সম্পর্কে।-------------------------------


জাম:--------------

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন জাম,লিচু,স্ট্রবেরি,কালোজাম বা আঙ্গুরের মত ফল। ফলগুলোতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট যা ব্রেইনের কোষের অক্সিডেশন এবং ক্রমাগত ক্ষয়ে যাওয়া রোধ করে।
অর্থাৎ ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ব্লু বেরীকে ব্রেইনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর খাবার বলে ধরা হয়, কেননা তা আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করে ও শেখার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।



পাতা কপি ও পালং শাক:-----------------

পালং শাক ও পাতা কপিতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন কে এবং বিটা ক্যারোটিন থাকে। যা পেশী শক্তি ও স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়োমিত পাতা কপি বা পালং শাক খান তাদের স্মৃতি শক্তি যারা খায় না তাদের চেয়ে অনেক বেশি।



সামুদ্রিক মাছ:---------------

সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কে থাকা ফ্যাটি এসিডের ৪০% হচ্ছে ডি এইচ এ, যা সামুদ্রিক মাছের তেলে পাওয়া যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হিসেবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ব্রেনের বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংবেদন আদান-প্রদান বাড়িয়ে দেয়।



বাদাম এবং বীজ দানা:---------------

বাদাম এবং বীজ দানা জাতীয় খাবারে রয়েছে ভিটামিন ই, ও একটি এন্টি-অক্সিডেন্ট এর উৎস। বাদাম এবং বীজ দানার এ উপাদান সমূহ স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া আমন্ড বাদামও ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।



কফি:-------------------

প্রতিদিন সকালে এক কফি পান করুণ। কারণ দীর্ঘদিন কফি পান করেন এমন ১৪০০ লোকের উপর চালানো গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা দিনে তিন থেকে পাঁচ কাপ কফি পান করেন তাঁদের স্মৃতি ভ্রংশের রোগ অনেকটাই কম হয়।
এদের তুলনায় যারা দিনে দুই কাপ কফি পান করেন তাদের ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি। ধারণা করা হয়,কফিতে থাকা ক্যাফেইন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট ব্রেইনের কোষগুলোকে সুরক্ষিত করে।



বিট এবং ব্রোকলি:----------------

বিট এবং ব্রোকলিও হতে পারে আপনার স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির আরেকটি হাতিয়ার। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ‘ভিটামিন কে’, যা মেধা ও স্মৃতি বর্ধক