Friday, 17 November 2017

দিলের মৌলিক রোগ এবং তার চিকিৎসা -------------


 ১. লোভ-দুনিয়ার লোভ। . 


২. দীর্ঘ আশা। আরবীতে বলা হয় ‘আমাল’। 

একটি বাড়ির মালিক হয়েছে, চলবে না, আরেকটি বাড়ির মালিক হতে হবে। একটি গাড়ির মালিক হয়েছে হবে না, আরেকটি গাড়ি লাগবে। একটি ফ্যাক্টরির মালিক হয়েছে, না, হবে না। আরেকটি ফ্যাক্টরির মালিক হতে হবে। আরো লাগবে, আরো লাগবে। ‘হাল মিন মাযীদ! হাল মিন মাযীদ!’ এটা হল দীর্ঘ আশা। 


. ৩. গোস্বা, রাগ। সীমাহীন গোস্বা। 

এত গোস্বা হয় যে, ইনসান না জানোয়ার, বুঝা যায় না। এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন- ﺃﻭﺻﻴﻨﻲ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ আল্লাহর রাসূল! আমাকে কিছু উপদেশ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ﻻ ﺗﻐﻀﺐ গোস্বা করবা না। সে আবারও বলল, আল্লাহর রাসূল! আমাকে আরেকটি নসীহত করুন।

 রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন, গোস্বা ত্যাগ কর। সাহাবী তৃতীয়বার অনুরোধ করার পরও রাসূলুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই জবাব দিলেন। তো যতবারই সাহাবী নসীহতের কথা বলেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা বলেছেন- গোস্বা ছাড়, গোস্বা ছাড়।


 . ৪. চতুর্থ রোগ মিথ্যাবলা। মিথ্যা তো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে আমাদের। আমরা কথায় কথায় মিথ্যা বলি। মিথ্যার আশ্রয় নেই। 
. ৫. গীবত। এটা তো এখন ঘি-ভাত হয়ে গিয়েছে। 


কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ﺍﻳﺤﺐ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﺍﻥ ﻳﺄﻛﻞ ﻟﺤﻢ ﺍﺧﻴﻪ ﻣﻴﺘﺎ ﻓﻜﺮﻫﺘﻤﻮﻩ তোমরা কি মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? তো গীবত হল মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো। গীবতকে যেন আমরা ঘি-ভাত মনে না করি। 


সকাল থেকে সন্ধ্যা সারাদিন আমার সামনে কেউ যেন একটা গীবতও করতে না পারে। আমার সামনে কেউ গীবত করলে তাকে বলবেন, আমি নিয়ত করেছি, গিবত করব না। দুআ করবেন আমি যেন গীবত না করি, কারো গিবত না শুনি। এভাবে আস্তে আস্তে গিবত দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। .


 ৬. কার্পণ্য, কৃপণতা। কারীমায় একটি পংক্তি আছে- ﺑﺨﻞ ﺍﺭ ﺑﻮﺩ ﺯﺍﻫﺪ ﺑﺤﺮ ﻭﺑﺮ ﺑﻬﺸﺘﻰ ﻧﺒﺎﺷﺪ ﺑﺤﻜﻢ ﺧﺒﺮ শেখ সাদী রাহ. বলেন, বখীল, কৃপণ যত বড় দরবেশই হোক, হাদীস বলে সে জান্নাতে যেতে পারবে না বড় বড় দান-খয়রাত করার দরকার নেই। ছোট ছোট দান-খয়রাত করা যেতে পারে। তবে যেন রিয়া না আসে। 

. ৭. হিংসা-হাসাদ। হিংসা কাকে বলে? কারো মধ্যে কোনো গুণ দেখে এই কামনা করা যে, এটা নষ্ট হয়ে যাক। এটা হল হিংসা। আর এই আশা করা যে, তার মধ্যে যে গুণ আছে থাকুক তবে আল্লাহ! আমাকেও তা দান কর। এটা হিংসা না, এটাকে বলা হয় গিবতা বা ঈর্ষা। গিবতা জায়েয, কিন্তু হাসাদ বা হিংসা হারাম।
 হাদীস শরীফে আছে, হিংসুক জান্নাতে যাবে না।


 . ৮. রিয়া। অর্থ লোক দেখানো। মানুষে দেখুক। মানুষের সামনে নামায পড়ার সময় যদি নিয়ত করি যে, মানুষে দেখুক তাহলে এটা হবে রিয়া।
 এর চিকিৎসা হল, যে কাজে রিয়া আসে তা মানুষের সামনে বেশি বেশি করা তাহলে দেখা যাবে, কাজটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর অভ্যাস হয়ে গেলে তখন আর রিয়া থাকবে না। কাজটা থাকবে, কিন্তু রিয়া থাকবে না। .


 ৯. কিবর, অহংকার। নিজেকে বড় মনে করা। এর চিকিৎসা হল, নিজেকে সব সময় ছোট মনে করা। হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রাহ. কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি প্রাণীর নাম নিয়ে নিয়ে বলতেন, আমি এগুলোর চেয়েও খারাপ। আরো খারাপ। কিবর যদি আসতে চায় তাহলে চিকিৎসা করতে হবে। .


 ১০. কীনা। কীনা কাকে বলে? এটাও হিংসার কাছাকাছি। মনে মনে জ্বলতে থাকা যে, এই গুণটা তাকে কেন দেওয়া হল! সে কেন এই জিনিসের মালিক হল! এই ইলম তাকে কেন দেওয়া হল ইত্যাদির নাম হল কীনা। 
.

এগুলো হল রুহানী রোগ। 

রুহানী রোগ তো অনেক আছে।

 তবে এই দশটা হল মূল। এই দশটা রোগের চিকিৎসা করলে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি দিবেন ইনশাআল্লাহ। আর তখনই মানুষ ফেরেশতাদের থেকেও আগে বেড়ে যাবে। .
 


No comments:

Post a Comment