Monday, 25 June 2018

রুপ চর্চায় মসুর ডাল ----- মসুর ডাল ও মধুর প্যাক:মসুর ডাল, টক দই আর বেসনের উপটান:দুধ ও মসুর ডালের এক্সফলিয়েটরমসুর ডালের হেয়ার রিমুভাল প্যাক: : মসুর ডাল, লেবু, চিনির প্যাক:মসুর ডাল ও গাঁদা ফুলের প্যাক:

প্রায় ৮০০০ বছর আগে থেকেই মধ্য এশিয়ার বাসিন্দারা মসুর ডাল খাওয়া শুরু

 করেছিলেন। কারণ সেই সময়ই তারা বুঝে গিয়েছিল যে প্রাকৃতিক উপাদানটি

 কাজে লাগিয়ে শরীরকে চাঙ্গা রাখা সম্ভব।

মসুর ডাল একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ ডাল। প্রাচীন কাল থেকে মসুর ডাল তাই 
খাবারের পাশাপাশি ত্বকের যত্নেও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।
একটা সময় আমাদের দাদি নানিরা এই ডাল দিয়েই সারতেন তাদের রুপচর্চা। 
আর তাদের স্কিন ও ছিল কিন্তু দেখার মতন। কারণ তারা আমাদের মতো এটা
 সেটা আর কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করতেন না। তারা প্রাকৃতিক 
উপাদানগুলোকে বেছে নিয়ে ছিলেন তাদের টানটান উজ্জ্বল ত্বকের হাতিয়ার হিসেবে।
নিয়মিত মসুর ডাল দিয়ে বানানো ফেস মাস্ক মুখে লাগাতে শুরু করলে ত্বকের 
ভেতরের প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। ফলে স্কিনের ডালনেস কমতে শুরু করে। 
সেই সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠতেও সময় লাগে না।

মসুর ডাল আরো নানাভাবে ত্বকের উপকারে লেগে থাকে।

 যেমন- মসুর ডাল 
দিয়ে বানানো প্যাক মুখে লাগাতে শুরু করলে স্কিনের উপরিঅংশে 
জমে থাকা মৃত 
কোষের স্তর সরে যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে,
 সেই সঙ্গে 
বলিরেখা কমে, কালো ছোপ ছোপ দাগ কমতে শুরু করে এবং মুখের উপর থাকা 
অতিরিক্ত চুল ঝরে যায়।
মসুরেরর ডালে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান ষখন ত্বকের
 ভেতরে প্রবেশ করে, তখন এমন কারিশমা দেখায় যে ত্বকের টোনই বদলে 
যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ত্বক এমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে 
যে সৌন্দর্য আকাশ ছুঁতে সময় লাগে না।

ব্যাবহার বিধি -----------------

মসুর ডালের যেকোনো প্যাক বানানোর আগে অবশ্যই ডাল সারারাত 
ভিজিয়ে বেটে নিতে হবে অথবা ডাল গুড়ো করে নিতে হবে

(১) মসুর ডাল ও মধুর প্যাক:
আমাদের মধ্যে যাদের স্কিন ড্রাই মসুর ডাল তাদের জন্য হতে পারে
 দারুণ একটা সমাধান। মসুর ডাল আর মধু স্কিনের মৃতকোষ দূর 
করে স্কিনে সফটনেস আনবে খুব এফেক্টিভভাবে। মধু আর মসুর ডাল 
এই উভয় উপাদান স্কিনের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুন কাজ করে। ফলে স্কিনের 
মসৃণতা বাড়ার সাথে সাথে উজ্জ্বলতাও বাড়বে। এর জন্য যা করতে হবে-
> এক চা চামচ মধু আর এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা মিশিয়ে পরিস্কার 
মুখে লাগাতে হবে।
> ১৫ মিনিট পরে হালকা হাতে ঘষেঘষে তুলে ফেলতে হবে।
>তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।

(২) মসুর ডাল, টক দই আর বেসনের উপটান:
যদি কেউ চায় ত্বকের রঙ ভীষনভাবে উজ্জ্বল করতে, 
কার্যকরভাবে ব্রণ ও সান ট্যান দূর করতে তাহলে এই উপটান 
তাদের জন্যই। সাথে সাথে এটি স্কিনকে করবে খুব স্মুদ এবং লাবন্যময়। 
এটি বানাতে যা করতে হবে হবে তা হল-
> সমপরিমান মসুর ডাল বাটা, টক দই আর বেসন এক সাথে মিশাতে হবে।
> এর সাথে নিতে হবে এক চিমটি হলুদ গুড়া।
> ভালো করে মিক্স করে মুখে অ্যাপ্লাই করতে হবে।
> একদম শুকিয়ে গেলে হাত পানিতে ভিজিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ
 করে তুলে ফেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
>এই প্যাকটি বডি ফেয়ারনেস বাড়াতেও সমানভাবে কাজ করে।

(৩) দুধ ও মসুর ডালের এক্সফলিয়েটর:
যারা সিম্পল কিন্তু কার্যকর এক্সফলিয়েশন পছন্দ করেন, মসুর ডাল তাদের জন্য
 দারুন এক উপাদান। মুখের মৃতকোষ সরিয়ে মুখের ত্বক উজ্জ্বল আর 
স্মুদ করতে মসুর ডালের জুড়ি মেলা ভার। সেই সাথে দুধের ল্যাকটিক 
এসিড ত্বককে করে কোমল ও ফর্সা।
> মসুর ডাল বেটে এর সাথে এক চা চামচ দুধ মিশিয়ে কোমল হাতে মুখে 
মুখে ঘষে ঘষে ম্যাসাজ করতে হবে ২/৩ মিনিট।
>এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ভালো করে। খেয়াল রাখবেন 
মুখে যেন একটুও লেগে না থাকে।
(৪) মসুর ডালের হেয়ার রিমুভাল প্যাক:
এই প্যাকটি একবারেই যে সব অবাঞ্ছিত লোম তুলে ফেলবে তা নয় 
কিন্তু রেগুলার ব্যবহারে অবাঞ্ছিত লোমের গ্রোথ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে 
দিবে এবং মুখে থাকা অবশিষ্ট লোমগুলোকে একদম তুলে ফেলবে 
সেই সাথে ব্রণের দাগ হালকা করবে এবং ব্রাইটনেস বাড়াবে।
> এক চা চামচ মসুর ডাল বাটা, এক চা চামচ মিহি করা চালের গুড়া,
 এক চা চামচ বেসন আর ২/৩ ফোটা আমন্ড অয়েল এক সাথে 
মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে।
> মিনিট দশেক পরে শুকিয়ে আসলে আলতো করে ঘষেঘষে তুলে ফেলতে হবে।
>এই একই প্যাক বডির আনওয়ান্টেড হেয়ার রিমুভ করার 
কাজেও ব্যবহার করা যায়।

(৫)মসুর ডাল, লেবু, চিনির প্যাক:
লেবু ত্বকের কালো দাগ তুলতে খুবই কার্যকরি। ত্বকের উজ্জ্বলতা 
বৃদ্ধিতেও জুরি নেই। ১চামচ বেসন, ১চামচ লেবু, ১চামচ চিনি মিশিয়ে দারুণ 
একটি প্যাক তৈরি হয়। স্কিনের উজ্জ্বলতা খুব বেশি বেড়ে যায়। 
চিনি স্ক্রানিং এর কাজ ও করে এতে ত্বকের মড়া কোষ খুব সহজে দূর হয়ে যায়।

(৬) মসুর ডাল ও গাঁদা ফুলের প্যাক:
গাঁদাফুল আমাদের দেশে খুব সহজলভ্য একটি ফুল।
এটি শুধু যে বাগানের সৌন্দর্য্যই বাড়ায় তাই না সাথে সাথে এতে 
আছে স্কিনের যত্নের নানা উপাদান।
> মসুর ডাল বাটা ও গাঁদাফুল এর পাপড়ি বাটা এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে
 এটি স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়াবে।
> যদি চান এর সাথে স্কিনে আসুক গোলাপি আভা তাহলে মিশিয়ে নিন 
এক চা চামচ গোলাপের পাপড়ি বাটা।
স্কিনের প্রেমে পড়ে যাবেন নির্ঘাত।
> সপ্তাহে ২-৩ দিন বেসনের যেকোনো একটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন,
 এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি ব্রণের সমস্যা থাকলেও তা 
দূর হয়ে যায়। নিজের স্কিনের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন। 
ত্বক ভালো তো মন ভালো।
_________________________________
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে

Sunday, 24 June 2018

|| বিবাহ রেজিস্ট্রেশন : : সুফল, কুফল, শাস্তি ||




আইনের দ্বারা নির্ধারিত তথ্যাবলী দিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে সরকারিভাবে বিবাহ তালিকাভূক্তি করাই হচ্ছে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন।


মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন 

১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ সরকার নির্ধারিত কাজী দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। 
মুসলিম পারিবারিক আইনে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে কাজ করে। রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা একটি আইনগত দলিল। নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিজে বিয়ে পড়ালে বিয়ের দিনই তিনি বিয়েটি রেজিস্ট্রি করবেন। যদি কাজী নিজে বিয়ে না পড়ান বা কোন কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে নিকটস্থ কাজী অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি করাতে হবে।

 এখানে উল্লেখ্য যে, অনেক ক্ষেত্রে কাজী নিজে বিয়ে রেজিস্ট্রি না করে তার সহকারির মাধ্যমে বিয়ে রেজিস্ট্রি করান। সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি প্রক্রিয়া ঠিকমত হয়েছে কিনা তা ভালভাবে দেখে নেয়া প্রয়োজন। বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় বিয়ের কাজীকে খেয়াল রাখতে হয় যে বিষয়গুলো : ---------------:
বরের বয়স কমপক্ষে ২১ এবং কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ হয়েছে কিনা।
বর ও কনের বিয়েতে পূর্ণ সম্মতি আছে কিনা।
বিয়ের প্রকৃত সাক্ষী।
আশু ও বিলম্বিত দেনমোহর।
উল্লেখিত শর্তসমূহ পূরণ হলেই কেবলমাত্র কাজী (নিকাহ রেজিষ্টার) বিয়ে রেজিস্ট্রি করবেন। তবে তিনি কাবিন নামার ১৮ নং ঘরে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের (তালাক-ই- তৌফিজের) ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কি না সেই বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে খেয়াল করবেন।

বিয়েতে বরপক্ষ রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করবেন। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিলে নিকাহ রেজিষ্টার একটি প্রাপ্তি রশিদ প্রদান করবেন। 
এখানে উল্লেখ্য মুসলিম বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের পর নিকাহ রেজিষ্টার বাধ্যতামূলকভাবে বর ও কনেপক্ষকে বিয়ের কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রদান করবেন।

খ্রিস্টান বিয়ে রেজিস্ট্রেশন

১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিয়ে সম্পাদিত হয়। খ্রিস্টান বিয়ে লিখিত মাধ্যমে সম্পাদিত হয় এবং রেজিষ্ট্রি বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয়। খ্রিস্টান বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজনীয় ধাপগুলো হলো:
বিয়ের পাত্র-পাত্রীর পুরো নাম ও ডাক নাম এবং পেশা বা অবস্থা।
পাত্র-পাত্রীর আবাসস্থল ও বাসস্থানের ঠিকানা।
পাত্র-পাত্রী কতদিন ধরে ঐ এলাকায় বসবাস করছে তার প্রমাণ পত্র।
বিয়ে সম্পাদনের চার্চ বা অন্যকোন স্থান।
নোটিশ প্রাপ্তির পর চার্চের ধর্মযাজক নোটিশটি খোলা জায়গায় লাগিয়ে দেবেন। যাতে নোটিশটি সকলের নজরে আসে। এভাবে নোটিশ কয়েক সপ্তাহ ঝোলানো থাকবে যাতে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তিনি যেন আপত্তি করতে পারেন। যদি কোন আপত্তি না পান তাহলে চার্চ প্রধান বিয়ের পক্ষগণের নিকট থেকে একটি ঘোষণা গ্রহণ করবেন। 
এই ঘোষণাটি বিয়ের পক্ষগণ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে দিবেন যাতে থাকবে-
ক) বিয়ের পাত্র-পাত্রীর মধ্যে জানামতে এমন কোন ঘনিষ্ট আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক নেই যাতে তাদের বিয়েতে আইনসম্মত বাধা আছে।
খ) বিবাহের পাত্র-পাত্রী দুজনেই আইন অনুযায়ী সাবালক।
এই ঘোষণা সম্পন্ন হওয়ার কমপক্ষে ৪ দিন পর চার্চের ধর্মযাজক বিয়ের আবেদনকারীকে একটি সার্টিফিকেট প্রদান করবেন। সার্টিফিকেট জারির ২ মাসের মধ্যে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। খ্রিস্টান বিয়ের সত্যায়িত কপির জন্য যথাযথ ফি দিয়ে সত্যায়িত কপি নিতে হবে।

হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন

 ২০১২ অনুযায়ী হিন্দু বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিন্দু আইনের প্রথা মেনেই বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।
 হিন্দু বিয়েতেও নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে প্রাপ্ত বয়সী ছেলেমেয়ে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দিয়ে থাকে মাত্র, যা পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়ে থাকে। বর্তমানে বিয়ের হলফনামা একটি দালিলিক প্রমাণপত্র হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। প্রচলিত হিন্দু প্রথা না মেনে হলফনামা করা হলে এতে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেল বলা যাবে না। তাই বিবাহের ঘোষণা প্রদান করার ৩০ দিনের মধ্যে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য একজন এবং উপজেলা পর্যায়ে একজন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক নিযুক্ত আছেন।
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা হিন্দু পারিবারিক আইন মতে পরিচালিত হয় ফলে বৌদ্ধদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয় না। তবে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করা বাধ্যতামূলক।

 রেজিস্ট্রেশন করার সুফল : :

ক) বিয়ের পক্ষদ্বয় বিয়ে অস্বীকার করতে পারেনা এবং পরস্পর পরস্পরের প্রতি কিছু দায়-দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়।
খ) স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে বা স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ে করলে বা করার উদ্যোগ নিলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
গ) স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় করতে পারেন।
ঘ) স্বামী/স্ত্রী উভয়ে উভয়ের সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার হতে পারেন।
ঙ) বিয়ের সময় দেনমোহর ধার্য্য না হলেও স্ত্রী ন্যায্য দেনমোহর আদায় করতে পারেন।

 রেজিস্ট্রেশন না করার কুফল : :

সুফলে উল্লেখিত বিষয়ে স্বামী অথবা স্ত্রী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ বা দাবী আদায় করতে পারেন না। বিশেষ করে বিয়ের মিথ্যা কথা বলে নারীদের পাচার, শ্লীলতাহানী ইত্যাদিরূপে ব্যবহার করতে পারে কিন্তু বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হলে এই ধরণের নারী নির্যাতন বন্ধ হবে বা অনেক কমে যাবে।

 শাস্তিযোগ্য অপরাধ : :

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মুসলিম আইনে রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রেজিস্ট্রেশন না করলে ২ বৎসর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৩০০০ টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হতে পারে তবে বিয়েটি বাতিল হবে না। খ্রিস্টান বিবাহে রেজিস্ট্রেশন বিয়েরই একটি অংশ হওয়ায় সকল বিয়েরই রেজিস্ট্রেশন হয়ে যায়। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনে বাধ্যতামূলক নয়। বৌদ্ধদের বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম এখনো চালু হয় নি। বাংলাদেশের আইনানুযায়ী আদালতে গ্রহণযোগ্য সকল ধর্মের সকল বিয়ের রেজিস্ট্রেশন দলিল থাকা বাধ্যতামূলক

শিরকের প্রকার বলা হলেও, ফাঁকে ফাঁকে শিরকের বিপরীতে ‘তাওহীদের প্রকারও এসে যাবে। বিপরীতটা বললে, বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন আলোর মাহাত্ম্য বুঝতে হলে, আঁধার সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী ... mufti atik ullah



আল্লাহর প্রতি উপাস্য ইবাদাত-------------------------

ইলাহ (إله) শব্দের অর্থ মাবূদ (معبود)। উপাস্য। যার ইবাদত করা হয়। ইবাদত কাকে বলে? আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহ.-এর ভাষায়,
العِبادَةُ عِبارَةٌ عنِ الاِعْتِقادِ والشُّعُورِ بِأَنَّ لِلْمَعْبُودِ سَلْطَةً غَيْبِيَّةً (أَيْ في العِلْمِ والتَّصَرُّف) فَوْقَ الأسبابِ يَقْدِرُ بها على النفعِ والضررِ فكُلُّ دعاءٍ ونداءٍ وثناءٍ وتعظيمٍ يَنشَأُ من هذا الاعتِقاد فهي عبادة
জাগতিক কোনও মাধ্যম ছাড়া, (জ্ঞান ও কার্যত) উপকার ও ক্ষতি করার অদৃশ্য ক্ষমতার অধিকারী, এমন দৃঢ় বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশকেই ইবাদত বলা হয়। এমন বিশ্বাস থেকে উদ্ভূত দু‘আ, আহ্বান, প্রশংসা, সম্মান এমন বিশ্বাসকেই ইবাদত বলা হয়। 
.
উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে কৃত সুনির্দিষ্ট আচরণ/উচ্চারণ আল্লাহ জন্যে হলে, তাকে ইবাদত বলা হবে, গাইরুল্লাহর জন্যে হলে, শিরক বলা হবে।

_________________________________

গায়রুল্লাহ র প্রতি উপাস্য শিরক-------------------- 



শিরকের প্রকার!

(শিরকের প্রকার বলা হলেও, ফাঁকে ফাঁকে শিরকের বিপরীতে ‘তাওহীদের প্রকারও এসে যাবে। বিপরীতটা বললে, বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন আলোর মাহাত্ম্য বুঝতে হলে, আঁধার সম্পর্কে জানা থাকা জরুরী)। 
-

শিরক দুই প্রকার,

১: আকীদাগত শিরক (شِرْكِ اعتقادي)। 

আল্লাহর বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতা গাইরুল্লাহর জন্যেও সাব্যস্ত করা। 
আকীদাগত শিরক তিন প্রকার,

ক: জ্ঞানগত শিরক (شرك في العلم)। 
গাইরুল্লাহকে উপায়-উপকরণ ছাড়া (ما فوق الأسباب) খবরাখবর সম্পর্কে পূর্ণ অবগত মনে করা। তবে যদি উপায়-উপকরণ (مع الأسباب)-এর মাধ্যমে খবরাখবর অবগত থাকার বিশ্বাস করে, তাহলে শিরক হবে না। 
.

খ: কর্মক্ষমতাগত শিরক (شرك في التصرف)। 
উপায়-উপকরণ ছাড়া (ما فوق الأسباب) গাইরুল্লাহকে কর্মক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করা। উপায়-উপকরণ (مع الأسباب)-এর মাধ্যমে কর্মক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করলে, শিরক হবে না। 
ঈসা আ. বলেছিলেন,
مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ 
কে কে আছে, যারা আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী হবে’? (আলে ইমরান ৫২)। 
.
তিনি আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান রেখে, বান্দার দুর্বলতা স্মরণে রেখেই, হাওয়ারী (সহচর)-দের সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। এটা শিরক নয়। 

.
গ: প্রার্থনাগত শিরক (شرك في الدعاء)। 
প্রথমোক্ত দু’টি ক্ষমতার অধিকারী বিশ্বাস করে গাইরুল্লাহর কাছে গায়েবীভাবে (উপস্থিত না থেকে) কোনও কিছুর প্রার্থনা করা। উক্ত আকীদা পোষণ করে, উপস্থিত থেকে কোনও কিছু প্রার্থনা করলেও শিরক হবে।
.

২: কর্মগত শিরক (شركِ فِعْلِيْ)। 

প্রথমোক্ত দুটি বিশ্বাস পোষণ করে, গাইরুল্লাহর জন্যে ‘নযর-মান্নত’ করা। গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নিজের জন্যে কোনও হালাল বস্তুকে হারাম করে নেয়া। 
.
কর্মগত শিরক চার প্রকার
ক: আল্লাহর জন্যে নযর (نَيازَاتُ الله)। 
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নযর-মানত করা। যেমন আকীকা, কুরবানি ইত্যাদি। 
আল্লাহ তা‘আলা নবীজি সা.-কে হুকুম করেছেন,
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
সুতরাং আপনি নিজ প্রতিপালকের (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্যে নামায পড়ুন ও কুরবানি দিন (কাওসার ২)। 
.
আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তার জন্যে পশু কুরবানি করার আদেশ করেছেন।
.
হুকুম: 
এটা তাওহীদের অন্তুর্ভুক্ত। শতভাগ হালাল। 
প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে শিরকের প্রকারের মধ্যে এর আলোচনা এল কি করে? 
- বাহ্যিক সাদৃশ্যের (مُشاكَلَةً) কারণে এমনটা করা হয়েছে। নযর মানতের সাদৃশ্য। 

.
খ: গাইরুল্লাহর জন্যে নযর-নিয়ায করা (نِيازات غير الله)। 
গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নযর-নিয়ায করা। 
وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ 
এবং (আল্লাহ সেই সব পশু হারাম করেছেন) যাতে (যবেহ করার সময়) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়া হয়েছে (নাহল ১১৫)। 
.
وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ
এবং সেই সব জন্তুও (হারাম), যাকে (প্রতিমার জন্যে) নিবেদনস্থলে (বেদীতে) বলি দেওয়া হয় (মায়েদা ৩)। 
.
হুকুম:
এমন করা সুষ্পষ্ট শিরক। হারাম। 
.

গ: আল্লাহর জন্যে হারাম করে নেয়া (تَحْرِيماتُ الله)। 
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে, আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক হারামকৃত কোনও বস্তুকে নিজের জন্যে হারাম সাব্যস্ত করে নেয়া। 
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنزِيرِ
তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত (মায়েদা ৩)। 
.
হুকুম: 
এটাও তাওহীদ। হারামকৃত বস্তুগুলো তার জন্যে হারাম। 
.

ঘ: গাইরুল্লাহর জন্যে হারাম করা (تَحْرِيْماتِ غير الله)। 
গাইরুল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে হালাল বস্তুকে নিজের উপর হারাম সাব্যস্ত করে নেয়া। 
أُحِلَّتْ لَكُم بَهِيمَةُ الْأَنْعَامِ
مائدة ১
مَا جَعَلَ اللَّهُ مِن بَحِيرَةٍ وَلَا سَائِبَةٍ وَلَا وَصِيلَةٍ وَلَا حَامٍ ۙ وَلَٰكِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۖ وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
مائدة ১০৩
তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে চতুষ্পদ গবাদি পশু (ও তদ্সদৃশ জন্তু) মায়িদা-১। 
আল্লাহ তা‘আলা এসব জন্তুকে হালাল করেছেন। গাইরুল্লাহকে খুশি করার জন্যে এসবকে হারাম সাব্যস্ত করা যাবে না। 
.
আল্লাহ কোনও প্রাণীকে না বাহীরা সাব্যস্ত করেছেন, না সাইবা, না ওয়াসীলা ও না হামী, কিন্তু যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, তারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশেই সঠিক বোঝে না (মায়িদা ১০৩)। 
১: বাহীরা, কান চিড়ে দেব-দেবীর নামে উৎসর্গকৃত প্রাণী। 
২: সাইবা, দেব-দেবীর নামে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া প্রাণী। 
৩: ওয়াসীলা, পরপর কয়েকটি মাদী বাচ্চা জন্ম দেয়ার কারণে, অতি মূল্যবাণ মনে করে, দেব-দেবীর নামে ছেড়ে দেয়া উটনী। 
৪: হামী, নির্দিষ্ট পরিমাণে পাল নেয়ার পর প্রতিমার নামে ছেড়ে দেয়া উট। 
.
হুকুম: 
এমনটা করা শিরক। তবে বস্তুগুলো হালাল। 

.

কুরআন করীমের হালাল, হারাম ও শিরক বিষয়ক প্রায় সমস্ত আয়াত এই ‘কানুনের’ আওতায় চলে আসবে।




Saturday, 23 June 2018

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে- তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে !!

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে ;

আমি বাইব না --------

আমি বাইবো না মোর খেয়া তরি এই ঘাটে –

চুকিয়ে দেব বেচা- কেনা     

     মিটিয়ে দেবো গো

মিটিয়ে দেব লেনাদেনা – 

বন্ধ হবে আনা গোনা  এই হাটে !

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে

তারার পানে চেয়ে চেয়ে -নাইবা আমায় ডাকলে !!


 যখন জমবে ধূলা তানপুরাটার তার গুলায়

কাঁটা লতায় –

কাঁটা লতায় উঠবে ঘরের দ্বার গুলায়

আহা--! জমবে ধূলা তানপুরাটার তার গুলায় !

ফুলের বাগান ---- 

ঘন ঘাসের পড়বে শয্যা বনবাসে !

শেওলা এসে ভিড়বে দীঘির ধার গুলায় !

 তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে

 তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে !!




তখন এমনি করে বাজবে বাঁশি এই  নাঁটে !

কাটবে ---- দিন কাটবে -----!!

কাটবে গো দিন আজও যেমন দিন কাটে !!

আহা-!  এমনি করে বাজবে বাঁশি এই নাঁটে !

ঘাঁটে ঘাঁটে খেয়া তরি এমনি

এমনি সেদিন উঠবে ভরি ; চড়বে গরু ; 

         খেলবে রাখাল  এই মাঠে !

তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে

তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাই বা আমায় ডাকলে !!


তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি

সকল খেলায় ---------

সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি

আহা--! কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি !!

নতুন নামে ডাকবে মোরে – বাঁধবে 

বাঁধবে নতুন বাহু ডোরে

আসব যাবো চিরদিনের সেই আমি !!

তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে

তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে !!

FS--------


কলবকে ঈমানের সাথে সুদৃঢ় রাখা। কলবের মধ্যে ঈমানকে বসিয়ে দেয়া। এই মূলনীতিটা ‘মোহরে জাব্বারিয়্যতের’ সম্পূর্ণ বিপরীত। mufti atik ullah


কুরআন বোঝার মূলনীতি: ১৪রাবতুল কুলূব (رَبْطُ القُلُوب)। -


আগেরটার সম্পর্ক কুফরের সাথে। এটার সম্পর্ক ঈমানের সাথে। 
আগেরটা কাফেরের অবস্থা বর্ণনা করেছে। এটা মুমিনের অবস্থা বর্ণনা করছে। 
বান্দা কুফরের পথ ধরলে যেমন চূড়ান্ত পর্যায়ে তাকে কুফরের উপরই স্থিত করে দেন, তদ্রুপ  বান্দা হেদায়াতের পথ গ্রহণ করলে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে হেদায়াত দান করেন। 
তারপর তাকে অবিচলতা (اِسْتِقامة) দান করেন। দ্বীনের ক্ষেত্রে পক্কতা (رُسُوخْ في الدين) দান করেন। 
এই মূলনীতির মাধ্যমেও কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
.


প্রথম আপত্তি:----------------------------
বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া সাহাবীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার ছাড়পত্র,
اعملوا ما شئتم، فقد وجبت لكم الجنة
তোমরা যা ইচ্ছা করো, তোমাদের জন্যে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে (আলি বিন আবি তালেব রা। বুখারি ৬২৫৯)। 
.

দ্বিতীয় আপত্তি:---------------------------
তাবুক যুদ্ধের আগে, সবাইকে সাধ্যানুযায়ী দান করতে বলা হল। সাহাবায়ে কেরাম যার যার সাধ্যানুযায়ী দান করেছেন। কিন্তু উসমান রা. সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন। তাঁর দানের পরিমাণ ছিল বিপুল। নবীজি সা. উসমান রা.-এর দান পেয়ে ভীষণ খুশি হলেন। বারবার বলতে লাগলেন,
ما ضَرَّعثمانَ ما عَمِلَ بعدَ اليومِ
আজকের পর, উসমান যাই করবে, (আখেরাতে) তার কোনও ক্ষতি হবে না (আবদুর রহমান বিন সামুরাহ রা.। তিরমিযী ৩৭০১)। 

.
তৃতীয় আপত্তি:---------------------------
হাদীসের বাহ্যিক অর্থটা ধরলে আপত্তি জাগে। 
وما يزالُ عبدي يتقرَّبُ إليَّ بالنَّوافلِ حتَّى أُحبَّه، فإذا أحببتُه: كنتُ سمعَه الَّذي يسمَعُ به، وبصرَه الَّذي يُبصِرُ به، ويدَه الَّتي يبطِشُ بها، ورِجلَه الَّتي يمشي بها،
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, বান্দা নফল আমলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে করতে এমন স্তরে উন্নীত হয়, আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি। যখন আমি তাকে ভালোবাসি, আমিই তার ‘শ্রবণশক্তি’ হয়ে যাই। সে তা দ্বারা শোনে। আমি তার দৃষ্টিশক্তি হয়ে যাই। সে তা দ্বারা দেখে। আমি তার হাতে পরিণত হই। সে তা দ্বারা অনিষ্ট প্রতিহত করে। আমি তার পদে পরিণত হই। সে তা দ্বারা হাঁটে (আবু হুরায়রা রা.। বুখারী ৩৫০৬)। 
.
এসব হাদীস দেখলে মনে হয়, বদরী সাহাবী ও উসমান রা. শরীয়ত মানতে বাধ্য (মুকাল্লাফ) নন। তাদের জন্যে সব জায়েজ। অথচ ব্যাপারটা এমন নয়। তারাও শরীয়তের আওতাভুক্ত। তারাও শরীয়ত মানতে বাধ্য। 
.________________________________-


মোহরে জাব্বারিয়্যাতের মতো রাবতুল কুলূবও চার প্রকার,

১: আল্লাহভিমুখিতা (إِنابة إلى الله)। 
প্রথম আয়াত:
আল্লাহর দিকে অগ্রসর হলে, আল্লাহ হেদায়াত দান করেন। 
وَمَا يَتَذَكَّرُ إِلَّا مَن يُنِيبُ
উপদেশ তো সেই গ্রহণ করে, যে (হেদায়াতের জন্যে) আন্তরিকভাবে রুজু হয় (মু’মিন ১৩)। 
.
দ্বিতীয় আয়াত:
হেদায়াতের পূর্বশর্ত হল, আল্লাহর অভিমুখী হওয়া। 
وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَن يُنِيبُ
আর যে-কেউ তাঁর অভিমুখী হয় তাকে নিজের কাছে পৌঁছে দেন (শুরা ১৩)। 
.

২: হেদায়াত (هداية)। 
আল্লাহর অভিমুখী হয়েছে, তাই হেদায়াত পেয়েছে। 
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ 
(অপর দিকে) যারা বলেছে, আমাদের রব আল্লাহ! (ফুসসিলাত ৩০

.
৩: অবিচলতা (استقامة)। 
আল্লাহকে ‘রব্ব’ বলে মেনে নিয়েছে। তারপর অবিচল থেকেছে। 
ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ
তারপর তারা তাতে থাকে অবিচলিত, নিশ্চয়ই তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হবে (ফুসসিলাত ৩০)।
.

৪: রাবতুল কুলূব (ربط القلوب)। 
কলবকে সুদৃঢ়করণ। আগের তিনটা স্তর পার হয়ে এলে, আল্লাহ তা‘আলা তার কলবকে হেদায়াতের সাথে সুস্থিত করে দেন। 
نَّحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَأَهُم بِالْحَقِّ ۚ إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى وَرَبَطْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ إِذْ قَامُوا فَقَالُوا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَن نَّدْعُوَ مِن دُونِهِ إِلَٰهًا ۖ لَّقَدْ قُلْنَا إِذًا شَطَطًا
আমি আপনার কাছে তাদের ঘটনা যথাযথভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল একদল যুবক, যারা নিজ প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে হিদায়াতে প্রভূত উৎকর্ষ দান করেছিলাম। আমি তাদের অন্তর সুদৃঢ় করে দিয়েছিলাম। এটা সেই সময়ের কথা, যখন তারা (রাজার সামনেই) দাঁড়াল এবং বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি আকাশম-লী ও পৃথিবীর মালিক। আমরা তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে কখনই ডাকব না। তাহলে তো আমরা চরম অবাস্তব কথাই বলব 

(কাহফ১৩-১৪)। 
.

একজন মানুষের যখন ‘ইনাবত’ হাসিল হয়ে যায়, তারপর ইস্তেকামত থাকে, তারপর ‘রাবতুল কুলুব’ হাসিল হয়ে যায়, তার সমস্ত কাজ আল্লাহর মরযি (চাহিদা) মোতাবেক হয়ে যায়। আল্লাহর মরযির বিপরীত কোনও কাজই তার দ্বারা সংঘটিত হয় না। বদরী সাহাবী ও উসমান রা.-এর ব্যাপারটাও ঠিক এমনি ছিল। তারা তিনটি স্তর পার হয়ে, চতুথৃ স্তর রাবতুল কুলুব হাসিল করেছিলেন। মানে তাদের দ্বারা আল্লাহর মরযির বিপরীত কোনও কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। .হাদীসের অর্থও এটাই। তারা শরীয়তের ‘মুকাল্লাফ’ নন, এই অর্থ বুঝে নেয়াটা ভুল। তাদের দ্বারা কোনও গুনাহের কাজ সংঘটিত হবে না, এটাই ছিল হাদীসের অর্থ। আগাম সংবাদ দেয়ার মতো। .



একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে,----------------------------------

ছেলেবেলা থেকেই বাবার সাথে ব্যবসা করছে। বাবা দীর্ঘদিন ধরে হাতেকলমে সন্তানকে ব্যবসা শিখিয়েছেন। সন্তানকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে তার হাতে ব্যবসা সঁপে দিয়েছেন। ঘোষণা দিয়েছেন,
-দোকান-পাট আজ থেকে তোমার হাতে ছেড়ে দিলাম। তোমার যেভাবে ইচ্ছা ব্যবসা চালিয়ে যাও। যা ইচ্ছা করো! 
বাবার কথা শুনে কি কেউ বলবে, হায় হায়, বাবা যে ছেলেকে, এতদিনের ব্যবসা নষ্ট করার অনুমতি দিয়ে দিল? অথবা ছেলেওকি বাবার কথা শুনে ব্যবসাকে লাটে তুলে দিবে? নাকি আরও বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসা সাজানোর চেষ্টা করবে?
.
আল্লাহ তা‘আলাও বিশেষ বান্দাকে ‘যা ইচ্ছা করার অনুমতি দিয়েছেন! তার মানে এই নয়, তাদেরকে গুনাহের ঢালাও অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ জানেন, বদরী সাহাবাগণ বা উসমান রা. ভবিষ্যতে গুনাহের কাজ করবেন না, তাই তাদের ব্যাপারে এমন উদার কথা বলেছেন। 
বুখারির হাদীসটা নিয়েও একই কথা। আল্লাহ তা‘আলা প্রিয় বান্দা হাত হয়ে যান, পা হয়ে যান। মানে ওই বান্দার দ্বারা পরে আর গুনাহ সংঘটিত হবে না। যতদিন আল্লাহর প্রিয় (ওলী) হয়ে থাকবে, অন্তত ততদিন আল্লাহর মরযির বিপরীত কোনও কাজ করবে না। আল্লাহ তা‘আলা বান্দার হাত-পা কিভাবে হবেন?
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ
কোনও জিনিস নয় তাঁর অনুরূপ (শুরা ১১)। 

.______________________________________

তাই উপরোক্ত ব্যাখ্যাটাই গ্রহণ করাই নিরাপদ। নাহলে বক্তব্যের বাহ্যিক অর্থ ধরতে শুরু করলে, দুনিয়ার কেউই নিরাপদ থাকবে না। একবার এক সাহাবী একটা কাজের কথা বললেন। উমার রা. সেকথা শুনে বললেন,
-আমরা এটা করব না। 
অথচ সাহাবীর প্রস্তাবিত কাজটি নবীজি করেছেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখলে কেউ বলে বসতে পারে, 
-উমার রা. নবীজি সা.-এর বিরোধিতা করল?
অথচ বাস্তবতা হল, নবীজির কাজটা ‘নবীসুলভ’ ছিল। মুস্তাহাব পর্যায়ের। উম্মতের জন্যে তা বড়জোর ‘জায়েজ’ ছিল। ওই জায়েজ কাজটি উমার রা. বিশেষ কোনও পরিস্থিতিতে করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। হয়তো পরে কাজটা ঠিকই করেছেন। 
.
এমন প্রশ্ন পেয়ারা নবীজি সা. সম্পর্কেও ওঠানো হয়েছিল (নাউযুবিল্লাহ)। 
لِّيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ
(হে রাসূল!) যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত ত্রুটি ক্ষমা করেন (ফাতহ ২)। 
.
এই আয়াতের বাহ্যিক অর্থ থেকে অল্পবুদ্ধির কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে, নবীজির কি তাহলে গুনাহ ছিল?

 নইলে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহ (ذنب) মাফ করার কথা বললেন যে?
এর উত্তর হল,
প্রচলিত অর্থে আমরা যেটাকে গুনাহ মনে করি,নবীগন এমন কোনও কাজ করেননি। তবে কখনো কখনো এমন হয়, দুই ভালোর মধ্যে একটা বেছে নিতে হয়। নবীগন কখনো ইজতিহাদ করে, অপেক্ষাকৃত কম ভালোটা গ্রহণ করে ফেলেন। এমন ইজতিহাদকেই কুরআন কারীমে ‘যানব’ (ত্রুটি) বলা হয়েছে। বাস্তবে কোনও গুনাহ নয়। একটা কথা আছে,
حَسَناتُ الأَبْرَار سَيِّئاتُ المُقَرَّبِيْن
নেককারদের সবচেয়ে ছোট নেকআমলও অনেক সময় আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্তদের কাছে ‘গুনাহ’ বলে বিবেচিত হয়। 
.
কথাটা শুধু বোঝানোর জন্যে বলা হয়। নাহলে নেকআমল কোনও অবস্থাতেই গুনাহ হতে পারে না।