Tuesday, 14 November 2017

ক্রমাগত ও ধারাবাহিক আমলের মর্যাদা: & সৎআমলের উপর স্থায়ী ও অটল থাকার প্রভাব ও উপকারিতা:

ক্রমাগত ও ধারাবাহিক আমলের মর্যাদা:


ক্রমাগত আমল ও তার ধারাবাহিকতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হল, যা নিয়মিতভাবে করে যাওয়া হয়, যদিও তা অল্প হয়।” (বুখারী-মুসলিম)



সৎআমলের উপর স্থায়ী ও অটল থাকার প্রভাব ও উপকারিতা:

আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৎআমলের হেফাযতকারী বান্দাদেরকে বহুভাবে সম্মানিত ও উপকৃত করে থাকেন। যেমন:১। স্রষ্টার সাথে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ; যা তাকে অগাধ শক্তি, দৃঢ়তা, আল্লাহর সাথে নীবিড় সম্পর্ক ও তার উপর মহা আস্থা তৈরি করে দেয়। এমনকি তার দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তা-ভাবনায় আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন-অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা তালাক: ৩ )



২। অলসতা-উদাসীনতা হতে অন্তরকে ফিরিয়ে রেখে সৎআমলকে আঁকড়ে ধরার প্রতি অভ্যস্ত করা যেন ক্রমান্নয়ে তা সহজ হয়ে যায়। যেমন কথিত রয়েছে: “তুমি তোমার অন্তরকে যদি সৎআমলে পরিচালিত না কর, তবে সে আমাকে গুনাহর দিকে পরিচালিত করবে।”



৩। এ নীতি অবলম্বন হল আল্লাহর মুহাব্বাত ও অভিভাবকত্ব লাভের উপায়। যেমন হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন: “আমার বান্দা নফল ইবাদতসমূহ দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতেই থাকে, এমনকি তাকে আমি মুহাব্বাত করতে শুরু করি---।” (বুখারী)



৪। সৎআমলে অবিচল থাকা বিপদ-আপদে মুক্তির একটি কারণ। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে উপদেশ দেন: “আল্লাহকে হেফযত কর তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন, আল্লাহকে হেফাযত করত, তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে; সুখে-শান্তিতে তাঁকে চেন। তিনি তোমাকে বিপদে চিনবেন।” (মুসনাদে আহমদ)



৫। সৎআমলে অবিচলতা অশ্লীলতা ও মন্দ আমল হতে বিরত রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:অর্থ: “নিশ্চয়ই নামায অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবূত: ৪৫ )



৬। সৎআমলে অবিচল থাকা গুনাহ-খাতা মিটে যাওয়ার একটি কারণ। যেমন: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “ তোমাদের কারো দরজায় যদি একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তবে তার দেহে কি কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? সাহাবাগণ বলেন: না, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: এমনই পাঁচ ওয়াক্ত নামায, আল্লাহ যার দ্বারা গুনাহ সমূহকে মিটিয়ে দেন।” (বুখারী-মুসলিম)



৭। সৎআমলে স্থায়ী ও অটল থাকা, উত্তম শেষ পরিণামের কারণ। যেমন: আল্লাহ বলেন:অর্থঃ “যারা আমার পথে চেষ্টা-সাধনা করবে অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথ দেখিয়ে দিব, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎআমল কারীগণের সাথে আছেন।” (সূরা আনকাবূত: ৬৯)



৮। এটি কিয়ামতের দিন হিসাব সহজ হওয়া ও আল্লাহর ক্ষমা লাভের উপায়।



৯। এ নীতি মুনাফেকী হতে অন্তরের পরিশুদ্ধিতা ও জাহান্নামের আগুন হতে পরিত্রাণের একটি উপায়। যেমন: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “ যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন (ক্রমাগত) জামাআতের সাথে প্রথম তাকবীর পেয়ে নামায আদায় করবে তার জন্য দু’প্রকার মুক্তির ঘোষণা: (১) জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি ও (২) মুনাফেকী হতে মুক্তি (তিরমিযী-হাসান)



১০। এটি জান্নাতে প্রবেশের উপায়: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “ যে ব্যক্তি কোন জিনিসের দু’প্রকার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে আহ্বান করা হবে। জান্নাতের রয়েছে আটটি দরজা: সুতরাং যে ব্যক্তি নামাযী তাকে নামাযের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে, যে ব্যক্তি জিহাদী তাকে জিহাদের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে, যে ব্যক্তি দান-খয়রাত ওয়ালা তাকে দান-খয়রাতের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে এবং যে ব্যক্তি রোযাদার তাকে রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে।” (বুখারী-মুসলিম)


১১। যে ব্যক্তি নিয়মিত সৎআমল করে অতঃপর অসুস্থতা, সফর বা অনিচ্ছাকৃত ঘুমের কারণে যদি সে আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তার জন্য সে আমলের সওয়াব লিখা হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “বান্দা যখন অসুস্থ হয় বা সফর করে, তবে তার জন্য অনুরূপ সওয়াব লিখা হয় যা সে গৃহে অবস্থানরত অবস্থায় ও সুস্থ অবস্থায় করত।” (বুখারী)বং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “ যে ব্যক্তির রাতে নামায ছিল কিন্তু তা হতে নিদ্রা তার উপর প্রভাব বিস্তার করে, তবে আল্লাহ তার জন্য সে নামাযের সওয়াব লিখে দিবেন এবং তার সে নিদ্রা হবে তার জন্য সাদকা স্বরূপ। (নাসায়ী ও মুয়াত্তা মালেক-সহীহ)



লেখক: শাইখ আব্দুর রব আফফান, রিয়াদ, সউদী আরব।

No comments:

Post a Comment