Saturday, 23 September 2017

শয়তান থেকে বাঁচার উপায়

 (১) সর্বাবস্থায় আল্লাহর তায়ালার  কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করতে হবে 

 যে সকল ক্ষেত্রে শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করতে হয় তা হল: ------------------



(২) কুরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ করে সূরা বাক্বারা পাঠ করা। যে গৃহে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সেখানে শয়তান প্রবেশ করতে পারে না। (মুসলিম)

(৩) ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী (সূরা বাক্বারার ২৫৫ নং আয়াত) পাঠ করা। তাহলে সারা রাত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম)


(৪) বেশী ক্রোধাম্বিত হলে আউযুবিল্লাহ... পাঠ করা এবং ওযু করা। কেননা তা একটি শয়তানী প্রবণতা। শয়তান আগুন থকে সৃষ্টি হয়েছে। আর পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। 

(৫) অধিকহারে ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা। ‘লাহওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্’ বেশী বেশী পাঠ করা। 


(৬) শয়তানকে খুশী করে এমন আসবাব থেকে নিজ গৃহকে মুক্ত করা। যেমন বাদ্য-যন্ত্র, ঘন্টা, কুকুর, ছবি, প্রতিকৃতি, ভাষ্কর্য এবং যাবতীয় খেল-তামাশা ও গর্হিত বিষয়-বস্তু থেকে বাড়ীকে মুক্ত ও সংরক্ষণ করা। 

(৭) পরিবার এবং সন্তানদেরকে শরীয়ত সম্মত দু‘আ-যিক্র দ্বারা ঝাড়-ফুঁকের মাধ্যমে হেফাযত করা এবং এ ঝাড়-ফুঁক নিয়মমাফিক সবসময় করা। যেমন: আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস প্রভৃতি পাঠ করা। 

(তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)


(৮) দৃষ্টি অবনত রাখা। পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা। কেননা নারী যখন সামনে আসে তখন শয়তানের আকৃতিতে আসে আর যখন ফিরে যায় তখন শয়তানের আকৃতিতে ফিরে যায়। 

(৯) বেগানা নারীর সাথে নির্জন না হওয়া। কেননা উক্তাবস্থায় শয়তান তাদের তৃতীয়জন হিসেবে সেখানে অবস্থান করে।

(১০) ইচ্ছাকৃত ভাবে শয়তানী কাজের বিরোধিতা করা। যেমন, ডান হাতে খানা-পিনা করা। কেননা শয়তান বাম হাতে খানা-পিনা করে। (বুখারী ও মুসলিম) 

(১১) অপব্যায় অপচয় না করা। কেননা অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ২৭) 

(১২) প্রতিটি বিষয়ে ধীরস্থীরতা অবলম্বন করা। কেননা তাড়াহুড়া শয়তানের কাজ এবং ধীরস্থীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে। (তিরমিযী)


(১৩) সাধ্যানুযায়ী হাই উঠানোকে প্রতিরোধ করা। কেননা হাই শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। হাই উঠানোর সময় [হা] করলে শয়তান হাসে। (বুখারী) 

(১৪) প্রত্যেক কাজের সময় বিসমিল্লাহ্ বলা। কেননা বিসমিল্লাহ্ বললে শয়তান ক্ষুদ্র হয়ে যায় এমনকি মাছির মত ছোট্ট হয়ে যায়। 


(১৫) দিনে একশতবার পাঠ করা ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লাশারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।’ তাহলে শয়তান প্রতিহত হবে।

(১৬) প্রথম ওয়াক্তে ফজরের নামায আদায় করা। কেননা যে ফজর সালাত আদায় করবে সে আল্লাহ্র যিম্মাদারীর মধ্যে হয়ে যাবে। 


(১৭) সালাত অবস্থায় এদিক ওদিক না তাকানো। কেননা সালাতাবস্থায় এদিক-ওদিক দৃষ্টিপাত করা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। (বুখারী)

(১৮) বিনা প্রয়োজনে নারীর নিজ গৃহ থেকে বাইরে না যাওয়া। কেননা যখন সে বের হয় তখন শয়তান তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং উঁকি দিয়ে দেখে। 

Friday, 22 September 2017

সূরা কাহাফে লুকানো রহস্য ও দাজ্জাল


কখনো ভেবে দেখেছেন কি কেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতি জুমু’আর দিন সূরা কাহাফ পাঠ করতে বলেছেন? আসুন জানার চেষ্টা করি, :এই সূরাটিতে মোট চারটি শিক্ষণীয় ঘটনা আছে, প্রতিটি ঘটনাতেই আছে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য উপদেশ। আসুন সেই ঘটনাগুলো ও তার শিক্ষাগুলো কি জানার চেষ্টা করিঃ------------------

.

১) গুহাবাসী যুবকদের ঘটনাঃ সূরার শুরুতেই সেই গুহাবাসী যুবকদের ঘটনার বর্ণণা দেয়া হয়েছে যারা এমন একটি জনপদে বসবাস করত যার অধিবাসীরা ছিল অবিশ্বাসী ও সীমালংঘনকারী। কাজেই যুবকেরা সেই নষ্ট সমাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘এদের সাথে আর নয়’। তারা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আল্লাহর দীনের প্রতি ভালোবাসা থেকে উজ্জিবীত হয়ে সেখান থেকে হিজরত করলেন। আল্লাহ তাদেরকে গুহাতে আশ্রয় দিলেন এবং সূর্যালোক থেকে নিরাপদে রাখলেন। বহু বছর পর যখন তাদের ঘুম ভাঙ্গলো তাঁরা দেখলেন সেই জনপদের অবিশ্বাসী লোকেরা বিদায় নিয়েছে এবং ভালো লোকদের দ্বারা মন্দ লোকেরা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
:
:

শিক্ষাঃ ঈমানের উপর পরীক্ষা।_______.

২) দুইটি বাগানের মালিক ব্যক্তির ঘটনাঃ একজন লোক যাকে আল্লাহ দুইটি প্রাচুর্যময় সুন্দর বাগান দিয়ে ধন্য করেছিলেন, কিন্তু লোকটি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে গেল এমনকি পরকালের অস্তিত্ব সম্পর্কে আল্লাহর ওয়াদার উপর সন্দেহ পোষণ করল। কাজেই, এই অকৃতজ্ঞ লোকটির বাগানকে আল্লাহ তায়ালা বিরান করে দিলেন-সে অনুতপ্ত হল, কিন্তু ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং তার এই অসময়ের অনুশোচনা তার কোন উপকারে আসল না
:

:শিক্ষাঃ সম্পদের উপর পরীক্ষা। ------------------.

৩) খিজির ও মুসা আলাইহি সালাম এর ঘটনাঃ যখন মূসা আলাইহি সালামের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “এই পৃথিবীতে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে?” তিনি উত্তর করেছিলেন, “আমি”…কিন্তু আল্লাহ তাঁর কাছে উন্মোচন করে দিলেন যে, এমন এক ব্যক্তি আছেন যাকে আল্লাহ তাঁর চেয়েও বেশি জ্ঞান দান করেছেন। মুসা আলাইহি সালাম সেই ব্যক্তির সাথে ভ্রমণ করলেন এবং দেখলেন, শিখলেন কিভাবে অনেক সময় আল্লাহ তাঁর অসীম জ্ঞানের কারণে এমন অনেক ঘটনা ঘটান যেগুলো আমাদের চোখে খারাপ বলে মনে হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো মানুষের ভালোর জন্যেই করা হয়।
:

:

শিক্ষাঃ জ্ঞানের উপর পরীক্ষা-----------------

.
) যুলকারনাইনঃ এটা সেই ক্ষমতাধর বাদশাহর ঘটনা যাকে একই সাথে জ্ঞান এবং ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল এবং তিনি সেই উভয় দানের শুকরিয়াস্বরুপ মানুষের উপকারে এবং কল্যাণে তা ব্যয় করতেন। তিনি জনপদের লোকদের ইয়াজুজ মাজুজ এর সমস্যার সমাধান করে দিলেন এবং একটি বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করে দিলেন। 
:
:

শিক্ষাঃ ক্ষমতার উপর পরীক্ষা----------------

_______________
:
:
সূরাটির মাঝামাঝি আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ইবলিসের কথা যে এই পরীক্ষাগুলোকে আরও কঠিন করে দেয়–
.
.
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا
.
And [mention] when We said to the angels, "Prostrate to Adam," and they prostrated, except for Iblees. He was of the jinn and departed from the command of his Lord. Then will you take him and his descendants as allies other than Me while they are enemies to you? Wretched it is for the wrongdoers as an exchange.
.
“যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম - ‘আদমকে সেজদা কর’, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।”
.
(সূরা কাহাফ, আয়াত : ৫০)

_______________
:
:

আসুন, এবারে জেনে নেয়া যাক, সূরা কাহাফ এবং দাজ্জালের মধ্যে কিসের সম্পর্ক? --------------------------
.

দাজ্জাল আবির্ভুত হবে শেষ সময়ে কিয়ামতের একটি বড় লক্ষণ হিসেবে, সে এই চারটি ফিতনা একত্রে নিয়ে আসবে–
.
••► সে মানুষকে আদেশ করবে যেন আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদত করে - [ঈমানের উপর পরীক্ষা]
.
••► তাকে বৃষ্টি বর্ষণ/ অনাবৃষ্টি সৃষ্টির ক্ষমতা দেয়া হবে এবং সে মানুষকে তার সম্পদ দিয়ে লোভ দেখাবে - [সম্পদের উপর পরীক্ষা]
.
••► সে মানুষকে পরীক্ষায় ফেলে দিবে তার ‘জ্ঞান’ এবং নানারকম সংবাদ প্রদান করে - [জ্ঞানের উপর পরীক্ষা]
.
••► সে পৃথিবীর এক বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে - [ক্ষমতার উপর পরীক্ষা]
:
:

কিভাবে আমরা এই সকল ফিতনা থেকে বাঁচতে পারি? সূরা কাহাফেই আছে এর উত্তর ------------------------


• ফিতনা হতে বাঁচার প্রথম উপায়ঃ সৎ সঙ্গ 

.-----------------------------------------------------------------
“আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না। (সূরা কাহাফ, আয়াত : ২৮)
:

:

• ফিতনা হতে বাঁচার দ্বিতীয় উপায়ঃ এই পার্থিব জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করা.----------------------------------------

তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।” (সূরা কাহাফ, আয়াত : ৪৫)
:
:
• ফিতনা হতে বাঁচার তৃতীয় উপায়ঃ ধৈর্য্যশীল থাকা
.
“মূসা বললেনঃ আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না”। সূরা কাহাফ, আয়াত ৬৯)
:

:

ফিতনা হতে বাঁচার চতুর্থ উপায়ঃ সৎ কর্ম সম্পাদন
.--------------------------------------------------------

বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।.” (সূরা কাহাফ, আয়াত ১১০)
:
:
• ফিতনা হতে বাঁচার পঞ্চম উপায়ঃ আল্লাহর দিকে আহবান
.
“আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ২৭)
:

:

• ফিতনা হতে বাঁচার ষষ্ঠ উপায়ঃ পরকালের স্মরণ.------------------------------------

“যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না। তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবেঃ তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না। আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।” (সূরা কাহাফ, আয়াত ৪৭-৪৯)
:
:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে যেন সকল প্রকার ফিতনা হতে রক্ষা করেন। আমিন।:

:

পরিশিষ্টঃ-------------------------

________
.
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে – যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে রক্ষা করা হয়; জামে তিরমিযীতে তিনটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। সহীহ মুসলিমে শেষ দশটি আয়াতের বর্ণনা আছে। সুনান নাসায়ীতে সাধারণভাবে দশটি আয়াতের বর্ণনা রয়েছে। [ইবন কাসীর]
:
:
আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, (তিনি বলেছেন) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন - যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (মুসলিম : ১৭৬০ ইফা)
:
:
বারা ইবনে আযিব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক ব্যক্তি ‘সূরা কাহাফ’ পড়েছিলো। সেই সময়ে তার কাছে মজবুত লম্বা দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। এই সময় একখণ্ড মেঘ তার মাথার উপরে এসে হাজির হলো। মেঘ খণ্ডটি ঘুরছিলো এবং নিকটবর্তী হচ্ছিল। এ দেখে তার ঘোড়াটি ছুটে পালাচ্ছিল। সকাল বেলা সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঐ বিষয়টি বর্ণনা করলো। একথা শুনে তিনি বললেনঃ এটি ছিল (আল্লাহর তরফ থেকে) রহমত বা প্রশান্তি (সাকিনা) যা কুর’আন পাঠের কারণে নাযিল হয়েছিলো। (মুসলিম : ১৭৩৩ ইফা)
:
:

আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেছেন); রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে যেভাবে কুর’আন মাজীদের সূরা শিখাতেন ঠিক তেমনিভাবে এই দুয়াটিও শিখাতেন।
দুয়াটি হলঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্না না’উযুবিকা মিন আযাবি জাহান্নাম ওয়া আউযুবিকা মিন আযাবিল কাবর, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জাল, ওয়া আউযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতা”
- হে আল্লাহ ! আমরা তোমার কাছে জাহান্নামের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আমি তোমার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আমি তোমার কাছে মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি তোমার কাছে জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।
(মুসলিম : ইফা ১২২০)


:
:
মূলঃ "Muslim Heroes" থেকে অনূদিত
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.

যে ভুলে নারীর নামায হয় না


কিছু হুকুম আছে যা সবাই জানে, কিন্তু অসতর্কতার কারণে মানুষ ভুল করে বসে। 

 সে বিষয়গুলো যদি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা সংশোধিত হতে পারে। সাধারণ সুন্নাত বা নফল বিষয় হলে সমস্যা নেই। সমস্যাতো তখন যখন সেটা ফরজ বিষয়ে হয়ে থাকে।

 নামাযের ঠিক তেমন-ই একটি অবহেলিত বিষয়; যে বিষয়ে সকলের সতর্ক হওয়া উচিত। 

বিষয়টি হচ্ছে,

#সতর_ঢাকার_বিষয়ে_অবহেলা; -----------------------

পুরুষদের সতর সাধারণত ঢাকাই থাকে। তাদের মাঝে সাধারণত এ বিষয়টি খুব কম পরিলক্ষিত হয় যে সতর খোলার কারণে নামায বাতিল হবে। তবে যারা বেশি ফিট জামা বা শারীরিক আকৃতি প্রকাশ পায় এমন পোষাক পড়েন তাদের সাবধান হওয়া উচিত।


অপরদিকে, নারী সমাজের অধিকাংশই এ বিষয়ে অসতর্ক। ফরজ পর্দা ও সতর ঢাকার বিষয়টি সাধারণত পালন করার বিষয় অবহেলা করার কারণে এ বিষয়টি সালাতেও অবহেলিত হচ্ছে। তাই যে সময় ও শ্রম দিচ্ছেন তা বিফলে যাচ্ছে একটি 
ফরজ ছুটে যাওয়ার করণে। 

অনেকে হাতের কজ্বির উপরেও খোলা রাখছেন! অনেকে মুখের সাথে গলাও খোলা রাখছেন! অনেকে ওড়নাকে পেচিয়ে নামায পড়েন যেখানে সতর ঢাকার শর্ত, “আকৃতি ঢাকা”-টা অবহেলিত হচ্ছে। অনেকে পা ঢাকার বিষয়ে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে ছাড়াছাড়ি করছেন।

পায়ের উপরিভাগ যতটা সম্ভব ঢেকে রাখতে হবে। অনেকে শাড়ি পড়ে সালাত পড়ছেন স্বভাবতই সতর খোলা থাকছে বা অন্তত আকৃতি প্রকাশিত হচ্ছে। যা নামাযকে বাতিল করতে পারে। আসুন নিজের অংশটি পড়ে নিজেদের সালাত ও পরিচিতদের সালাতকে বাতিল হওয়া থেকে রক্ষা করি।

#সলাতে_নারীর_পোষাক -------------------------


সালাতে নারীর চেহারা ব্যতীত পূর্ণ শরীর সতর, তবে হাত ও পায়ের ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে যদি পর-পুরুষ তাকে না দেখে। গায়রে মাহরাম বা পর-পুরুষের দেখার সম্ভাবনা থাকলে চেহারা, হাত ও পা ঢাকা ওয়াজিব। 

যেমন, সালাতের বাইরেও এসব অঙ্গ পুরুষের আড়ালে রাখা ওয়াজিব। অতএব, সালাতের সময় মাথা, গর্দান ও সমস্ত শরীর পায়ের পাতা পর্যন্ত ঢাকা জরুরি। 


উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, 

তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, নারী কি জামা ও উড়নায় সালাত পড়তে পারে নিচের কাপড় ছাড়া?

 তিনি বলেন:
»إذا كان الدرع سابغا يغطي ظهور قدميها«
“যদি জামা পর্যাপ্ত হয় যা তার পায়ের পাতা ঢেকে নেয়”।

[আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৪০; মালিক, হাদীস নং ৩২৬]


.
উড়না ও জামা দ্বারাই সালাত বিশুদ্ধ।
এ দু’টি হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাতে নারীর মাথা ও গর্দান ঢেকে রাখা জরুরি, যা আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদীসের দাবি। তার পায়ের বহিরাংশ (পাতা) পর্যন্ত শরীরের অংশও ঢেকে রাখা জরুরি, যা উম্মে সালামার হাদীসের দাবি। যদি পর-পুরুষ না দেখে চেহারা উন্মুক্ত রাখা বৈধ, এ ব্যাপারে সকল আহলে ইলম একমত।
.
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেন: “কারণ নারী একাকী সালাত পড়লে উড়না ব্যবহার করার নির্দেশ রয়েছে, সালাত ব্যতীত অন্যান্য সময় নিজ ঘরে মাথা উন্মুক্ত রাখা বৈধ। অতএব, সালাতে পোশাক গ্রহণ করা আল্লাহর হক। 

অতঃপর তিনি বলেন: সালাতে সতর ঢাকার বিষয়টি দৃষ্টির সাথে সম্পৃক্ত নয়, না দৃষ্টি রোধ করার সাথে, আর না দৃষ্টি আকর্ষণ করার সাথে”।

[মাজমুউল ফতোয়া: (২২/১১৩-১১৪)] সমাপ্ত।
.

#কিছু_রেফারেন্স_ভিডিও

সালাতে মহিলাদের পোশাক, কতটুকু ঢাকা থাকবে, কোন কোন অঙ্গ ঢাকা থাকবে।
https://www.youtube.com/watch?v=aGo3ama6XJ4


#আসুন_সতর্ক_হই 

সলাতের জন্য এবং সালাতের বাহিরে ঢিলেঢালা, সতর ঢেকে রাখে এমন পোষাক পরিধানে সচেষ্ট হই।
> লজ্জাহীনতার প্রতিযোগীতার যুগে লজ্জা করে হলেও সতর চেনার চেষ্টা করি। সতর ঢেকে রাখি। সলাতের ভিতরের হুকুম যদি এমন হয় চিন্তা করা উচিত যে বাহিরে তাহলে কিভাবে বের হতে হবে।

 আল্লাহ তাওফিক দাতা।

আজওয়া খেজুর বিষ ক্রিয়া, হ্রদ রোগ ও যাদু টোনায় উপকার


আজওয়া খেজুরের ইতিহাস-: ------------------------


হযরত সালমান ফার্সীর(রা:) মালিক ছিল একজন ইয়াহুদী।
হযরত সালমান ফার্সী যখন মুক্তি চাইল তখন ইয়াহুদী এই মর্তে তাকে মুক্তি দিতে চাইল যে, যদি তিনি নিদ্দিষ্ট কয়েক দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার দেন এবং তিশটি খেজুর গাছ রোপন করে আর খেজুর গাছে খেজুর ধরলে তবেই সে মুক্ত। আসলে ইহুদির মুক্তি দেবার ইচ্ছা ছিল না। কেননা সালমান ফার্সীর(রা:) পক্ষে ৬০০ দিনার যোগাড় করা কঠিন ছিল। আর ৬০০ দিনার যোগাড় করলেও খেজুর গাছ রোপন করে তাতে ফল ধরে ফল পাকানো অনেক সময়ের ব্যাপার। 

হযরত সালমান ফার্সী(রা:) রাসুল (সঃ) এর দরবারে এসে ঘটনা বর্ণনা করলেন। রাসুল (সঃ) ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করলেন। তারপর হযরত আলী (রাঃ) কে সাথে নিয়ে গেলেন ইয়াহুদীর কাছে। ইহুদী এক কাঁদি খেজুর দিয়ে বলল এই খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে তবে ফল ফলাতে হবে। রাসুল (সঃ) দেখলেন যে, ইহুদীর দেয়া খেজুরগুলো সে আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলছে যাতে চারা না উঠে। 
রাসুল (সঃ) খেজুরের কাঁদি হাতে নিয়ে আলী (রাঃ) কে গর্ত করতে বললেন আর সালমান ফার্সী(রা:)কে বললেন পানি আনতে। আলী (রাঃ) গর্ত করলে রাসুল (সঃ) নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুর রোপন করলেন। আল্লাহর অশেষ মহিমায় সেই পোড়া খেজুর থেকে চারা গজালো। 


রাসুল (সঃ) সালমান ফার্সী (রা:)কে এ দির্দেশ দিলেন যে, বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত তুমি পেছন ফিরে তাকাবে না। 
সালমান ফার্সী (রা:)পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন। বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। আর খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেছে। এই খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর। আর স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। আর কেনইবা দামী হবে না?


যে খেজুর রাসুলের নিজ হাতে রোপন করা।
حديث مرفوع) حَدَّثَنَا عَلِيٌّ ، حَدَّثَنَا مَرْوَانُ ، أَخْبَرَنَا هَاشِمٌ ، أَخْبَرَنَا عَامِرُ بْنُ سَعْدٍ ، عَنْ أَبِيهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنِ اصْطَبَحَ كُلَّ يَوْمٍ تَمَرَاتٍ عَجْوَةً لَمْ يَضُرَّهُ سُمٌّ وَلَا سِحْرٌ ذَلِكَ الْيَوْمَ إِلَى اللَّيْلِ وَقَالَ غَيْرُهُ : سَبْعَ تَمَرَاتٍ ……….আমির ইবনে সাদ রহ. তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খুরমা খাবে, ঐ দিন রাত পর্যন্ত কোন বিষ ও যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না। অন্যান্য বর্ণনাকারীগণ বলেছেন, সাতটি খুরমা। হাদীস নং ৫৩৭৪ 


আলী (র) আমির ইবন সাদ তার পিতা থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ নবী (সা) বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খুরমা খাবে ঐ দিন রাত পর্যন্ত কোন বিষ ও যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না । অন্যান্য বর্ননাকারীগণ বলেছেনঃ সাতটি খুরমা । সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩৫৬ 
জুমুআ ইবন আব্দুল্লাহ (র)......সাদ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যাহ সকালে সাতটি আজওয়া (উৎকৃষ্ট) খেজুর খাবে, সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করবে না এর দ্বারা।

সুতরাং আজওয়া খেজুরের উপকারীতা হাদিস দ্বারা প্রমানীত তাই রোগের প্রতিষেধক হিসাবে ব্যবহার করতে পারি।

তাছাডা অন্য এক হাদিসে হ্রদ রোগের জন্য এ আজওয়া খেজুর ব্যবহার করতে বলেছেন।


আজওয়া খেজুর সম্পর্কে আরও অবাক করা কিছু তথ্য --

---------------------------------------------------------------------------

*লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখে।


*অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মের সময় আজওয়া খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন। প্রসারণ ঘটিয়ে, প্রসব হতে সাহায্য করে।
*ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
*প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।


*এতে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কোলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়।*এতে রয়েছে ৭৭.৫% কার্বহাইড্রেট, যা অন্যান্য খাদ্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করে।*এতে রয়েছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ – যা হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে।
*স্নায়ুবিক শক্তি বৃদ্ধি করে।


*আজওয়া খেজুর হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
*হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, লিভার ও পাকস্থলীর শক্তিবর্ধক।
*ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
*ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
*রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
*নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা প্রশ্নাতীত।


*পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী।
*উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
*নেশাগ্রস্তদের অঙ্গক্ষয় প্রতিরোধ করে আজওয়া খেজুর। স্বাস্থ্য ভালো করতে বাড়িতে তৈরী ঘিয়ে ভাজা খেজুর ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।


সব চেয়ে বড় কথা হল এ খেজুরের গাছের গুটলি গুলো হুজুর সাঃ নিজ হাতে বপন করেছেন, সে হিসাবে অন্তরে মহব্বত নিয়ে বরকতের জন্য ও খেতে পারেন।আর শেফার নিয়তে তো খেতেই পারেন নিঃসংকোচে। আল্লাহ সহায় হউক।


Thursday, 21 September 2017

মহররম মাস এলেই এক শ্রেণীর মানুষ তাজিয়া, শোকগাঁথা পাঠ, শোক পালন, মিছিল বের করা, শোক প্রকাশ্যে নিজের শরীরকে রক্তাক্ত করা প্রভৃতি কাজ করে থাকেন। এ ধরনের কোনো রেওয়াজ ইসলামের কোথাও বর্ণিত হয় নি। এসব রসম-রেওয়াজের কারণে এ মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করার একটা প্রবণতা অনেক মুসলমানের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার।


মতাদর্শে হিজরী ৬১ সনের ১০ মহররম ঐতিহাসিক কারবালার প্রান্তরে অত্যাচারী শাসক ইয়াজিদের বাহিনী কর্তৃক হজরত ইমাম হোসাইন রাঃ-কে যে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়, সেই হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণেই পালিত হয় আশুরা। মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আরবি ‘আশারা’ অর্থ দশ। সেই জন্য মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলে ।


. এ বছর মহররম মাস শুরু ২২ সেপ্টেম্বর থেকে।


মহররম মাসের  তাৎপর্য :------------ 

-----------------------------------------
আল্লাহপাক এ তারিখে আসমান, জমিন, লওহে কলম সৃষ্টি করেছেন এবং এই ১০ মহররম মহাপ্রলয় বা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।

আল্লাহতায়ালা আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে ১০ মহররম দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।

মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ঈমানের মহা কঠিন পরীক্ষা দিতে নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন ১০ মহররম।

১০ মহররম খোদাদ্রোহী ফেরাউন বিপুল সেনাবাহিনী নিয়ে নীল দরিয়ার অতল তলে তুবে মরে আর হযরত মুসা (আঃ) বনি ইসরাইলদের নিয়ে পানির ওপর দিয়ে পার হয়ে যান।

হযরত ইউনুছ (আঃ) ৪০ দিন মাছের পেটে অবস্থানের পর ১০ মহররম নাজাত পেয়েছিলেন।

হযরত নূহ (আঃ) ৪০ দিনের মহাপ্লাবনের পর ১০ মহররম নৌকা থেকে বেলাভূমিতে অবতরণ করেন।
হযরত ঈসা (আঃ) ইহুদিদের অত্যাচার, নির্যাতন শূলদণ্ড থেকে মুক্তি লাভের জন্য সশরীরে চতুর্থ আসমানে উপস্থিত হন ১০ মহররম।

হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাঁর হারানো ছেলে হজরত ইউসুফ (আঃ)- কে ফিরে পান এবং দৃষ্টিশক্তি আবার ফিরে পান ১০ মহররম।
ধৈর্য, সহনশীলতার মূর্ত প্রতীক হযরত আয়ুব (আঃ) ১৮ বছর কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত থেকে আল্লাহপাকের ইচ্ছায় ১০ মহররম আকস্মিকভাবে আরোগ্য লাভ করেন।

কাবাঘরের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল এবং ঐতিহাসিক কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা সংগঠিত হয়, যা বিশ্বের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।


এই দিনের নেক আমল:
নামাজ: ------------------------------------

হযরত আলী (রা:) হতে বর্ণিত: রাসুলে পাক (সা:) বলেন যে ব্যাক্তি মহররমের দশম রাত্র জেগে এবাদত করবে, আল্লাহ তাকে উত্তম জীবন দান করবেন।

গাউছুল আজম হযরত আব্দুল কাদের জ্বীলানী (রহ:) বলেন যে ব্যাক্তি মহররমের দশম রাত্র জেগে এবাদত করবে, তার মৃত্যু হবে কষ্টহীন এবং আরামের।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন এক নিয়তে চার রাকাত নফল নামাজ যার প্রত্যেক রাকাতে একবার সুরা ফাতেহা, তিন বার সুরা এখলাস, এবং এক বার আয়তুল কুরসী।এভাবে নামাজ শেষে ১০০ বার সুরা এখলাস পাঠ। এভাবে নামাজ আদায় করলে গুনাহ মাফ হবে এবং জান্নাতের অসীম নেয়ামত হাসেল হবে।রাহাতুল কুলুব গ্রন্থে একবার সুরা ফাতেহা, ১০ বার সুরা এখলাস এবং ৩ বার আয়াতুল কুরসী পড়ার কথা বলা হয়েছে।
 (রাহাতুল কুলুব-পৃষ্ঠা ২২৫)

গুনিয়াতুত ত্বালেবিন গ্রন্থে ১০০ রাকাত নফল নামাজের কথা বলা হয়েছে। দুই দুই রাকাত করে। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা ১ বার এবং সুরা এখলাস ১০ বার। এভাবে ১০০ রাকাত নামাজ আদায় করলে সেই ব্যাক্তির উপরে ৭০টি রহমতের নযর করবেন।যার মধ্যে সর্ব নিম্নটি হলো গোনাহ মাফ।

রোযা: ------------------------------ 

আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন রমজানের রোযার পরে, সবচেয়ে উত্তম রেযা হলো মহররম মাসের (আশুরার) রোযা এবং ফরজ নামাজের পরে সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো রাত্রীকালীন (তাহাজ্জুদ) নামাজ (মুসলিম শরীফ)

কুরআন-হাদীসের আলোকে মহররম মাস: -----------------------------


কুরআন মাজীদে ও হাদীস শরীফে মহররম মাস সম্পর্কে যা এসেছে তা হল, এটা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ মাস। কুরআনের ভাষায় এটি ‘আরবাআতুন হুরুম’-অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম। এ মাসে রোযা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মহররমের রোযা হল সর্র্বশ্রেষ্ঠ।’ -সহীহ মুসলিম ২/৩৬৮; জামে তিরমিযী ১/১৫৭

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোযা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ -সহীহ বুখারী ১/২১৮
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাদীনাহ্তে এলেন, তখন ইয়াহূদীগণ আশুরার দিন সওম পালন করত। তারা জানাল, এ দিন মূসা (‘আ.) ফিরাউন-এর উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সহাবীদের বললেন, মূসা (‘আ.)-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হাকদার। কাজেই তোমরা সওম পালন কর। [২০০৪] (আ.প্র. ৪৩১৯, ই.ফা. ৪৩২০)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৬৮০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রমযান মাসের পর সর্বোত্তম সাওম হল মুহররম মাসের সাওম (আশুরার সাওম) এবং ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাত্রের সালাত।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৬১৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আবূ কাতাদাহ আল-আনসারী (রাঃ) বলেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাহর দিনে সওম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন-এর দ্বারা বিগত ও আগত এক বছরের গোনাহ (পাপ) মোচন হয়। "আশুরাহর দিনের সওম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন-বিগত এক বছরের পাপ মোচন হয়। সোমবারের দিনে সওম পালন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হয়ে বললেন, এটা সেদিন যেদিন আমি জন্মেছি এবং নুবুওয়াত লাভ করেছি আর আমার উপর (কুরআন) অবতীর্ণ হয়েছে।" [৭২৫]
বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ৬৮০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

হযরত আলী (রা:) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমযানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোযা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘রমযানের পর যদি তুমি রোযা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’- জামে তিরমিযী ১/১৫৭

অন্য হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোযার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’- সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭; জামে তিরমিযী ১/১৫৮
আশুরার রোযা সম্পর্কে এক হাদীসে আছে যে, ‘তোমরা আশুরার রোযা রাখ এবং ইহুদীদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে; আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোযা রাখ।’- মুসনাদে আহমদ ১/২৪১
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ তারিখেও অবশ্যই রোযা রাখব।’- সহীহ মুসলিম ১/৩৫৯

মহররম মাসের অপসংস্কৃতি ও বিধি-নিষেধ ----------------

মহররম মাস এলেই এক শ্রেণীর মানুষ তাজিয়া, শোকগাঁথা পাঠ, শোক পালন, মিছিল বের করা, শোক প্রকাশ্যে নিজের শরীরকে রক্তাক্ত করা প্রভৃতি কাজ করে থাকেন। এ ধরনের কোনো রেওয়াজ ইসলামের কোথাও বর্ণিত হয় নি। এসব রসম-রেওয়াজের কারণে এ মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করার একটা প্রবণতা অনেক মুসলমানের মধ্যেও লক্ষ করা যায়।
এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার।


মোটকথা, ---------------------- 

 এ মাসের করণীয় বিষয়গুলো যখা, তওবা- ইস্তেগফার, নফল রোযা এবং অন্যান্য নেক আমল। এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং সব ধরনের কুসংস্কার ও গর্হিত রসম-রেওয়াজ থেকে বেঁচে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক চলাই মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।
বলাবাহুল্য, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই তো শিক্ষা-‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়।’


বলাবাহুল্য, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরই তো শিক্ষা-‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়।’


অন্য হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই যারা মুখ চাপরায়, কাপড় ছিড়ে এবং জাহেলি যুগের কথাবার্তা বলে।’অতএব শাহাদাতে হুসাইন (রা)কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব ধরনের জাহেলি রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।

Wednesday, 20 September 2017

সুরাতুল ফাতিহার প্রথম দুটি আয়াত এবং সংক্ষিপ্ত আলোচনা--

--
-- ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﮧ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﯿﻢ -

- ♡ ﺁﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﮧ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﯿﻦ۔ ♡
ﺍﻟﺮﺣﻢﻥ ﺍﻟﺮﺣﯿﻢ -
অর্থ--1,যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক।
2,যিনি অত্যান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
[1]"আলহামদুলিল্লাহ" যদিও প্রশংসার জন্য কিন্তু এর মাঝে অতি সুক্ষতার সাথে বর্ননা করেছেন যে সকল সৃষ্টি বস্তুর উপাসনা রহিত করা হল।
এবং অতি হিকমতের সাথে তাওহিদ ঈমানের সর্ব প্রথম স্তর তথা আল্লাহর একত্ববাদের পরিপূর্ন নকশাও তুলে ধরা হয়েছে।
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেছেন--
"পৃথিবীতে এমন কোন প্রানি নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত নয়""
(11:6)
তিনি আরো বলেন--
আর পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক জিনিসকে আমি সুপরিমিত ও ভারসাম্য ভারসাম্য সহকারে উদগত করেছি।
(15:19)

আমরা যে দুনিয়াতে বাস করছি এর মাঝে কোটি কোটি আল্লাহর সৃষ্টবস্তু রয়েছে।
এ পৃথিবীতে মানুষের দৃষ্টিগোচরের বাইরেও অনেক সৃষ্টি রয়েছে ইমাম রাযী তাফসিরে কাবীরে লিখেছেন এ সৌর জগতের বাইরেও আরো সীমাহীন জগত রয়েছে।
ঈমাম আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেছেন চল্লিশ হাজার জগত রয়েছে। এ পৃথিবী একটি জগত বাকী গুলো প্রত্যেকটি এর অনূরুপ।

হযরত মাকাতিল রা হতে বর্নিত জগতের সঃখ্যা আশি হাজার। তবে মানুষ বা প্রানী বাসের উপযোগী নয়।
ঈমাম রাযী তার উত্তরে বলেছেন এটি জরুরী নয় যে সেখানে মনুষ্য বাসের উপযোগী হতে হবে বরং এ রকম ই বা হবে না কেন যে সেসব জগতের অধিবাসীর অভ্যাস প্রকৃতি এ জগতবাসির অভ্যাসের সম্পূর্ন ভিন্ন।
আজ হতে সাতশত বছর পূর্বে মুসলিম দার্শনিকগন এসকল তথ্য লিখেছেন যা আজ বৈজ্ঞানিকগন রকেট বৈজ্ঞানিক যানের মাধ্যমে তার কিছু প্রমান পাচ্ছেন।
আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির পরিধি কতদূর বিস্তৃত তা পরিমাপ করে শেষ করা সম্ভব নয় কারো।
কিন্তু এ সকল সৃষ্টির কেন্দ্র বিন্দু একমাত্র মানুষ। আমাদের অস্তিত্ব আমাদের শান্তিপূর্ন ঈমানের সহিত অবস্থানের জন্য সকল কিছুর সুক্ষ প্রতিপালন ব্যবস্থা। 

এ আলোচনা থেকে পরিস্কার বুঝা যায় ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﯿﻦ রাব্বিল আলামিন (বা যিনি সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক) এর প্রতিপালন নীতি পূর্বের বাক্য ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﮧ সমস্ত প্রশংসা কেবল তাঁর যথার্থ।।

[2]_দ্বিতীয় আয়াতে উল্লেখিত
"আররহমান",, "আররাহিম" উভয় শব্দই গুনের আধিক্য বিশেষ যাতে আল্লাহ তায়ালার অসাধারনত্ব পূর্নতার কথা বুঝায়। বিশাল সৃষ্টি জগতের রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ।এতে তাঁর নিজস্ব প্রয়োজন নেই।
যদি সৃষ্টির অস্তিত্ব না থাকে ।সৃষ্টির সকল কিছু তাঁর অবাধ্য হয়ে যায় তাতে তাঁর কোন লাভ ক্ষতি নেই। ।
তিনি আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রতি সব সময় দয়াবান ।।
#মাআসসালাম

Monday, 18 September 2017

নফল_নামাজের_গুরুত্ব

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ পাক বলেছেন----------------------
আমার কিছু বান্দানফল নামাজ পড়তে পড়তে আমার এত আপন হয়ে যায় যে আমি তার চোখ হয়ে যাই যার থেকে সে দেখে,আমি তার জবান হয়ে যাই যার থেকে সে বলে,আমি তার হাত হয়ে যাই যার থেকে সে কাজ করে।সে আমার মর্জির বিরুদ্ধে কোন কাজ করে না।।


নফল নামাজের মধ্যে সর্বোত্তম নামাজ তাহাজ্জুদ নামাজ অতপর ইশরাক,চাশত, আওয়াবীন নামাজ।
প্রতিদিন অল্প কিছু সময় এ নামাজের জন্য ব্যায় করলে কত বড় ফযিলত লাভ করা যায় একবার ভাবুন।।


নফল নামাজ না পরলে অবশ্যয়ই গুনাহগার হয় না।কিন্তু আরো কতিপয় কারনে নফল নামাজ আবশ্যক।।দেখুন
1 ফরজ নামাজ আল্লাহ তায়ালার আদেশে পালন করা হয় কিন্তু নফল নামাজের দ্বারাই আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের প্রকৃত শুকরিয়া আদায় হয় ।


2 আত্বশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুস্টি নফল নামাজে তাছারা বিচার দিবসে মিজানে পাল্লা ভারি করার অন্যতম মাধ্যম নফল নামাজ ।


3 আল্লাহ তায়ালার আদিষ্ট ও অলঙ্ঘনীয় সুন্নত নামাজ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এর উম্মতের মধ্যে থাকার জন্য আদায় করতে হয় ।কিন্তু নফল একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের জন্য আত্মাকে নানা প্রকার কুমন্ত্রনা হতে রক্ষার জন্য নফল বন্দেগী আবশ্যক । 


4 সর্বোপরি ফরয ও ওয়াজিব নামাজের ভুল ত্রুটির ক্ষতিপূরনের জন্য বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া জরুরী।।


ইনশা আল্লাহ সকলেই আমরা নফল নামাজের প্রতিও যত্নবান হবো । কমপক্ষে চার রাকাত করে হলেও রেগুলার আদায় করলে এর ফায়দা লাভ করা যাবে ইনশা আল্লাহ।।

Saturday, 16 September 2017

খুব পরিচিত কিছু স্বভাব-যার কারনে আমরা জাহান্নামী হতে পারি---


১. আমাকে কেউ একজন একটা কথা বলে বললো কাউকে না বলার জন্য। কাউকে না বলার শর্তে আমি সেটা আরেকজনকে বলে দিলাম। এটা আমানতের খিয়ানত। এটা মুনাফেকি করা। জাহান্নামের উদ্বোধন হবে মুনাফিক দিয়ে। কাফের, মুশরিক দিয়ে নয়।


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[সূরা নিসা-৪/১৪৫, বুখারী-৩৩]

.

২. আমি গুলশানে দাঁড়িয়ে কাউকে মোবাইল ফোনে বললাম আমি তো মতিঝিল চলে এসেছি। এটাও মুনাফেকি। 


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[সূরা নিসা-৪/১৪৫, বুখারী-৩৩, ইবনে হিব্বান-৪১৮৭]
.

৩. কিছুদিন আগেও তুই আমার কাছে আসতি একটা চাকরির জন্য। চাকরি দিলাম। আজকে টাকা হয়েছে আর সব ভুলে গেলি? আল্লার রাসুল (সাঃ) বলেছেন-এই জাতীয় কথা বলার (অর্থাৎ, উপকার করে খোঁটা দেয়া) পরিণাম জাহান্নাম। 


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[সূরা বাকারা-২/২৬৪, মিশকাত-২৭৯৫. আবূ দাঊদ-৪০৮৭, নাসাঈ-২৫৬৩, তিরমিযী-১২১১, ইবনু মাজাহ-২২০৮]
.

৪. রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়েটা ইসলামি পোশাক পড়া না থাকলে উভয়েই যিনাকারী। 


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[সূরা নূর-৩০,৩১, বুখারী-৬২৪৩, মুসলিম-৬৫১২]
.

৫. আপনি জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় আপনার স্ত্রী বাজার করে অথবা বেপর্দা ঘুরে। এই পুরুষ দাইয়ূস। এর অবস্থান সরাসরি জাহান্নাম।


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[মুসনাদে আহমাদ-৫৮৩৯, সহিহুল জামে-৩০৫২]
.

৬. সন্তান বড় হয়েছে অথচ তাকে পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা দেননি। সালাতের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন না। এই সন্তান তার বাবার ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে জান্নাতে চলে যেতে পারে। বাবা আটকে যাবে। 


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[আবূ দাউদ-৪৯৫, মুসনাদে আহমাদ-৬৬৮৯]
.

৭. আপনার (পুরুষের) পোশাক পায়ের টাখনুর নীচে থাকে। বিনা বিচারে জাহান্নামে যাওয়ার প্রস্তুতি আজই নিয়ে রাখেন। 


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[আবূ দাঊদ-৪০৮৭, নাসাঈ-২৫৬৩]
.

. কারও হক্ব নষ্ট করেছেন বা দুর্নীতি করে টাকা ইনকাম করেছেন। যদি আখিরাতে বাঁচতে চান তবে যার টাকা বা হক্ব তাকে ফেরত দিন। আখিরাতে সে আপনার সমস্ত নেক আমল ধরে টান দিবে। 


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[ইবনু মাজাহ, হাদিসে কুদসি-১৪২, মিশকাত-৩৭৫৩, তিরমিযী-২৪১৮]
.

৯. বয়স ছিলো, ক্ষমতাও ছিলো। রিক্সাওয়ালাকে বা কাজের লোককে একটা চড় মেরেছিলেন। এর নাম জুলুম। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে তার হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে নিন। একদিন আপনার আমলনামা সে টান দিবেই।


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
 [সূরা আরাফ-৭/৪৪, সূরা শুরা-৪২, ৪৩, হাদিসে কুদসি-১৪২, তিরমিযী-২৪১৮]
.

১০. (মহিলারা) গায়ে সুগন্ধি মেখে পর পুরুষের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছেন। এরকম কাজ জীবনে যতবার করেছেন ততবার আপনি যিনার পাপ করেছেন। 


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল ---
[তিরমিযী-২৭৮৬, সহীহুল জামে-৪৫৪০, মুসনাদে আহমাদ-১৯৩৬]
.

আর যতবার আপনি ভ্রু উঠিয়েছেন ততবার আপনি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর নিকট হতে অভিশাপ পেয়েছেন।


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[বুখারী-৫৯৪৮, মুসলিম-২১২৪, আবু দাউদ-৪১৬৮, তিরমিযী-২৭৮২]
.

১১. যতবার আপনি সুদ খেয়েছেন বা দিয়েছেন বা সুদের কাজে সহযোগিতা করেছেন ততবার আপনি আপনার মায়ের সাথে যিনার পাপ করেছেন।


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[মিশকাত-২৮০৭, ২৮২৬]

.

১২. যতবার আপনি কোনও অমুসলিমকে খাইয়েছেন বা উপকার করেছেন ততবার আপনি দানের ছাওয়াব পেয়েছেন। আর যতবার আপনি তার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছেন বা তাকে এসএমএস দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ততবার আপনি শিরক করেছেন। আখিরাতে বিচার ছাড়াই আপনি জাহান্নামী। তাওবা করলে বেঁচে যাবেন।


 সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল ----------------
[সূরা আলে ইমরান-৩/৮৫, মিশকাত-৪৩৪৭, ৪৬৮৯, তিরমিযী-২৬৯৫, আবূ দাউদ-৪২৫২, মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িলিস শাইখ ইবনে উছাইমীন ৩/৩৬৯]
.

১৩. যতবার আপনি জন্মদিন, মৃত্যুদিন, বিবাহ বার্ষিকী, কুলখানি, চেহলাম বা কোনও দিবস পালন করেছেন ততবার আপনি বিদাত করেছেন। রাসুল (সাঃ) এর সুপারিশ আপনার জন্য প্রযোজ্য নয়।


সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দলিল --
[বুখারী-৫৭৭২, মুসলিম-১৭১৮, মিশকাত-১৪০]
:
.

________________________

উপরোক্ত গুনাহসমূহের মধ্যে যেগুলো আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত সেগুলো তাওবা করলে ক্ষমা হবে ইনশাআল্লাহ। কারন আল্লাহ বলেনঃ
“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। [সূরা নিসা: ৪/১১৬]
:
আর গুনাহ যদি বান্দার সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে তা বান্দার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় আখিরাতে তিনি মহাবিপদে পড়বেন।


.শেয়ার করুন বন্ধুদের সাথে। জাযাকুমুল্লাহ খাইরান,,,

Wednesday, 13 September 2017

একে বলা হয় সিলিকা জেল। এর কাজ হল আর্দ্রতা শুষে নিয়ে নিজের মধ্যে ধারণ করে রাখা।

নতুন জুতো বা প্লাস্টিকের বোতলের ভিতর জিনিসটি অনেকেই পেয়েছেন। অনেক সময়ে ওষুধের শিশিতেও রাখা থাকে এই ধরনের ছোট্ট সাদা একটি থলি। 

উপর থেকে স্পর্শ করলে মনে হতে পারে ভিতরে বুঝি নুন জাতীয় কিছু রয়েছে। গায়ে লেখা থাকে সতর্কবার্তা—খেয়ে ফেলবেন না, কিংবা শিশুদের থেকে দূরে রাখুন। 

কেউ যদি কৌতূহলী হয়ে থলিটি খুলে দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন ভেতরে রয়েছে ছোট ছোট সাদা, কিছুটা স্বচ্ছ একগুচ্ছ দানা। 

একে বলা হয় সিলিকা জেল। 

এর কাজ হল আর্দ্রতা শুষে নিয়ে নিজের মধ্যে ধারণ করে রাখা। আমরা সাধারণত নতুন কেনা কোনও জিনিসের ভেতর সিলিকা জেলের থলি পেলে তা সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিই। আদপে এই সিলিকা জেলের থলি কিন্তু নানা কাজে লাগতে পারে। 

যদি নতুন কেনা জিনিসের সঙ্গে পাওয়া সিলিকা জেলের থলিগুলি জমিয়ে রাখতে পারেন, তাহলে অনেক উপকার পাবেন। ভাবছেন কী ধরনের উপকার? 

আসুন, জেনে নিই ------------------------------------------------

১. পানিতে মোবাইল ফোন পড়ে গেলে: আপনার মোবাইলটি পানিতে পড়ে গিয়েছে? কিংবা মোবাইলেই পড়ে গিয়েছে পানি? চিন্তা নেই। মোবাইলটি অফ করে ব্যাটারি, সিম, মেমোরি কার্ড সব খুলে নিয়ে শুকনো কাপড় বা তুলো দিয়ে যতটা পারেন শুকনো করে মুছে নিন। তারপর ফোনটিকে একটি প্লাস্টিকের বাক্সে রেখে ভিতরে রেখে দিন পাঁচ-ছ’টি সিলিকা জেল ব্যাগ। ব্যাগগুলি মোবাইলের সংস্পর্শে রাখতে পারলেই ভাল। এতে মোবাইলের ভিতরে জমে থাকা জলকণা ও আর্দ্রতা শুষে নিতে পারবে ব্যাগে থাকা সিলিকা জেল।


২. জিনিসপত্রকে মরচের হাত থেকে বাঁচানো: বাড়ির যে ধাতব জিনিসটিকে জং ধরা বা মরচে পড়ার হাত থেকে বাঁচাতে চান, সেটিকে একটি এয়ারটাইট প্লাস্টিকের বাক্সে রেখে ভিতরে রেখে দিন তিন-চারটি সিলিকা জেলের প্যাকেট। জং ধরবে না। দাড়ি কামানোর সেফটি রেজার এইভাবে রাখলে ব্লেডটি অনেকদিন চলবে। রুপো বা অন্য কোনও ধাতুর তৈরি গয়নাও এই কৌশলে রাখতে পারলে সেগুলি একদম নতুনের মতো থাকবে।


. খাবারদাবারকে তরতাজা রাখা: যে পাত্রে খাবার রাখছেন তার ঢাকনার ভেতরের দিকে কয়েকটি সিলিকা জেলের ব্যাগ সেলোটেপ দিয়ে আটকে দিন। এবার ঢাকনা বন্ধ করে দিন। খাবার অনেকক্ষণ তাজা থাকবে। ড্রাই ফুট, বাদামভাজা, ছোলাভাজা ইত্যাদির পাত্রে সিলিকা জেল রাখলে বিশেষ ফল পাবেন। তবে খেয়াল রাখবেন, সিলিকা জেলের ব্যাগ যেন খাদ্যদ্রব্যকে স্পর্শ না করে।


৪. জরুরি কাগজপত্র ও ফোটোগ্রাফকে ঠিকঠাক রাখা: আর্দ্রতার কারণে অনেক সময়েই আমাদের জরুরি কাগজপত্রে একটা স্যাঁতস্যাঁতে আঠালো ভাব চলে আসে। সেক্ষেত্রে যে ড্রয়ার বা আলমারির যে তাকে কাগজ বা ফাইলপত্র রাখছেন সেখানে কয়েকটি সিলিকা জেল ব্যাগ রেখে দিন। সম্ভব হলে ফাইলের ভিতরেও রাখুন একটি কি দু’টি ব্যাগ। দেখবেন আর ওই স্যাঁতস্যাঁতে ভাব আসবে না। ফোটো অ্যালবামের ভিতর সিলিকা জেলের ব্যাগ রাখলে ছবিগুলি একদম ঠিকঠাক থাকবে।


৫. ওষুধপত্রকে ঠিকঠাক রাখা: যে পাত্রে ওষুধ রাখছেন সেই প্লাস্টিকের শিশি বা কৌটোর ভিতরে রাখুন একটি কি দুটি সিলিকা জেল ব্যাগ। ওষুধ নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।কাজেই এবার থেকে নতুন কেনা জিনিসের সঙ্গে পাওয়া সিলিকা জেলের ব্যাগটি ফেলে দেবেন না। এগুলি জমিয়ে রাখুন, অনেক কাজে দেবে। প্রয়োজন বোধ করলে অনলাইন শপিং মারফৎ কিনেও নিতে পারেন সিলিকা জেলের ব্যাগ।

Tuesday, 12 September 2017

সৎআমলের উপর স্থায়ী ও অটল থাকার প্রভাব ও উপকারিতা:

ক্রমাগত আমল ও তার ধারাবাহিকতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত। 

রাসূলে  করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্ল্রা  বলেন: 

    “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হল, যা নিয়মিতভাবে করে যাওয়া হয়, যদিও তা অল্প হয়।” (বুখারী-মুসলিম) 

সৎআমলের উপর স্থায়ী ও অটল থাকার প্রভাব ও উপকারিতা:

আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৎআমলের হেফাযতকারী বান্দাদেরকে বহুভাবে সম্মানিত ও উপকৃত করে থাকেন। যেমন:


১। স্রষ্টার সাথে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ; যা তাকে অগাধ শক্তি, দৃঢ়তা, আল্লাহর সাথে নীবিড় সম্পর্ক ও তার উপর মহা আস্থা তৈরি করে দেয়। এমনকি তার দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তা-ভাবনায় আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। 

যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন-অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।”

 (সূরা তালাক: ৩ )


২। অলসতা-উদাসীনতা হতে অন্তরকে ফিরিয়ে রেখে সৎআমলকে আঁকড়ে ধরার প্রতি অভ্যস্ত করা যেন ক্রমান্নয়ে তা সহজ হয়ে যায়। যেমন কথিত রয়েছে: 

“তুমি তোমার অন্তরকে যদি সৎআমলে পরিচালিত না কর, তবে সে তোমাকে  গুনাহর দিকে পরিচালিত করবে।”


৩। এ নীতি অবলম্বন হল আল্লাহর মুহাব্বাত ও অভিভাবকত্ব লাভের উপায়। 

যেমন হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন: “আমার বান্দা নফল ইবাদতসমূহ দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতেই থাকে, এমনকি তাকে আমি মুহাব্বাত করতে শুরু করি---।” (বুখারী)


৪। সৎআমলে অবিচল থাকা বিপদ-আপদে মুক্তির একটি কারণ। যেমন নবী কারিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে উপদেশ দেন: 

“আল্লাহকে হেফযত কর তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন, আল্লাহকে হেফাযত করত, তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে; সুখে-শান্তিতে তাঁকে চেন। তিনি তোমাকে বিপদে চিনবেন।” 

(মুসনাদে আহমদ)


৫। সৎআমলে অবিচলতা অশ্লীলতা ও মন্দ আমল হতে বিরত রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:অর্থ: 

“নিশ্চয়ই নামায অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবূত: ৪৫ )


৬। সৎআমলে অবিচল থাকা গুনাহ-খাতা মিটে যাওয়ার একটি কারণ। 

যেমন: নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন: “ তোমাদের কারো দরজায় যদি একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তবে তার দেহে কি কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? 

সাহাবাগণ বলেন: না, 

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: এমনই পাঁচ ওয়াক্ত নামায, আল্লাহ যার দ্বারা গুনাহ সমূহকে মিটিয়ে দেন।”

 (বুখারী-মুসলিম)


৭। সৎআমলে স্থায়ী ও অটল থাকা, উত্তম শেষ পরিণামের কারণ। যেমন: আল্লাহ বলেন:অর্থঃ 

“যারা আমার পথে চেষ্টা-সাধনা করবে অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথ দেখিয়ে দিব, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎআমল কারীগণের সাথে আছেন।”

 (সূরা আনকাবূত: ৬৯)


৮। এটি কিয়ামতের দিন হিসাব সহজ হওয়া ও আল্লাহর ক্ষমা লাভের উপায়।

৯। এ নীতি মুনাফেকী হতে অন্তরের পরিশুদ্ধিতা ও জাহান্নামের আগুন হতে পরিত্রাণের একটি উপায়। 

যেমন: নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন: “ যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন (ক্রমাগত) জামাআতের সাথে প্রথম তাকবীর পেয়ে নামায আদায় করবে তার জন্য দু’প্রকার মুক্তির ঘোষণা:

 (১) জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি ও 

(২) মুনাফেকী হতে মুক্তি। (তিরমিযী-হাসান)


১০। এটি জান্নাতে প্রবেশের উপায়: 

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন:  যে ব্যক্তি কোন জিনিস  আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল, তাকে জান্নাতের দরজা সমূহ হতে আহ্বান করা হবে। 

জান্নাতের রয়েছে আটটি দরজা: সুতরাং যে ব্যক্তি নামাযী তাকে নামাযের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে, যে ব্যক্তি জিহাদী তাকে জিহাদের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে, যে ব্যক্তি দান-খয়রাত ওয়ালা তাকে দান-খয়রাতের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে এবং যে ব্যক্তি রোযাদার তাকে রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে।” 

(বুখারী-মুসলিম)


১১। যে ব্যক্তি নিয়মিত সৎআমল করে অতঃপর অসুস্থতা, সফর বা অনিচ্ছাকৃত ঘুমের কারণে যদি সে আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তার জন্য সে আমলের সওয়াব লিখা হবে। 

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: 

“বান্দা যখন অসুস্থ হয় বা সফর করে, তবে তার জন্য অনুরূপ সওয়াব লিখা হয় যা সে গৃহে অবস্থানরত অবস্থায় ও সুস্থ অবস্থায় করত।” (বুখারী) এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “ যে ব্যক্তির রাতে নামায ছিল কিন্তু তা হতে নিদ্রা তার উপর প্রভাব বিস্তার করে, তবে আল্লাহ তার জন্য সে নামাযের সওয়াব লিখে দিবেন এবং তার সে নিদ্রা হবে তার জন্য সাদকা স্বরূপ। 

(নাসায়ী ও মুয়াত্তা মালেক-সহীহ)


কোটিপতি থেকে মুহূর্তেই হয়ে গেলেন পথের ফকির।

মিয়ানমারের টম বাজারের  খালেদা বেগমের ছিল হার্ডওয়্যার, মুদির দোকানসহ বেশকিছু দোকান, যা অন্তত কোটি টাকা মূল্যের। বাড়িও ছিল ওই এলাকার মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন। মুসলিম অধ্যুষিত ওই বাজারে তারাই ছিলেন সবচেয়ে প্রভাবশালী।



সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে সব দোকান, বাড়িসহ সহায় সম্পত্তি ফেলে ১৫ দিনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্টে নাফ নদ ও কাঁটাতারের সীমারেখা পার হয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে। আসার পরপরই জানতে পেরেছেন, দোকান পাট ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, এখনো কোনো তাঁবু পাননি। মেলেনি কোনো ত্রাণও। আশ্রয় জুটেছে খোলা আকাশের নিচে। ফলে কোটিপতি থেকে মুহূর্তেই হয়ে গেলেন পথের ফকির।
কুতুপালং সড়কের কাছে একটি নালার কিনারে কচু বাগানে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন অজানা, অচেনা পথের দিকে। সবকিছুই তার কাছে অপরিচিত। তার কোলজুড়ে ৩ মাসের একটি বাচ্চাকেও কান্না করতে দেখা যায়। গতকাল দুপুরে যখন খালেদা বেগমের সঙ্গে কথা হয় তখন তিনি ছিলেন ক্ষুধার্ত। কিন্তু চেহারায় ছিল আভিজাত্যের ছাপ। ডান হাতে ছিল একটি গোল্ডেন রঙের ঘড়ি। পরনের পোশাকও ছিল অনেকটা মার্জিত। কিন্তু লজ্জায় ত্রাণের জন্য হাত পাততে পারছিলেন না।
খালেদা খানম বলেন, ‘টম বাজার এলাকায় তারা ছিলেন রাজার হালে। কোনো কিছুর অভাব ছিল না। তাদের প্রায় ১২ একর জমি ছিল। ত্রিশটির মতো গরু ছিল। দোকান পাট ছাড়াও আরও কিছু সম্পদ ছিল। সব মিলিয়ে হবে কোটি টাকার। এখন কার কাছে যাব, কি করব কিছুই দিশা পাচ্ছেন না তিনি। যৌথ পরিবারের সদস্য আলেয়া বেগমের কোলেও দেখা যায় এক ছোট্ট শিশু।’
তিনি জানান, ‘বাংলাদেশে আসার পথে দুই লাখ মিয়ানমারের মুদ্রা কিয়াট নিয়ে আসলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে আড়াই হাজার টাকায় তা বিক্রি করে দেন। গত দুই দিন কষ্ট করে এই টাকা দিয়ে পানি আর শুকনো কিছু খাবার কিনে বাচ্চাদের কোনোমতে খাওয়ান। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যরাও না খেয়ে পথেই বসে রয়েছেন।’
ওই পরিবারের পুরুষ সদস্য আবদুল হামিদ ও মৌলভি মাইনুদ্দিন জানান, ‘তাদের পরিবারটি অনেক বড়। ৩০ সদস্যের সবাই বাংলাদেশে কষ্ট করে আসতে পারলেও সব সহায় সম্পত্তি ফেলে আসতে হয়েছে। এখন তারা শূন্য হাতে।’