Wednesday, 6 September 2017

তাবেয়ীদের ঈমানদীপ্ত জীবনকথা -


মহান তাবেয়ী তাউস ইবনে কায়সান রাহিমাহুল্লাহ--

------------------------------------------------------------------------------------

এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে একজন মহান তাবেয়ীর জীবনের কিছু আলোকোজ্জ্বল অংশ তুলে ধরছি। নাম তাউস ইবনে কায়সান।

সাহাবী ছিলেন না, তবে ইলম ও আমলে, আদর্শ ও চরিত্রে ছিলেন সাহাবীগণের উত্তম নমুনা। দীনের জন্য ত্যাগ ও মুজাহাদায় সাহাবী রা.থেকে পিছিয়ে ছিলেন না কোন অংশে।
তাবেয়ী তাউস ইবনে কায়সান ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.এর একান্ত শিষ্যদের একজন। ইয়েমেনে যে সকল তাবেয়ী ছিলেন তাঁদের মাঝে প্রথম সাঁড়িতে ছিল তাঁর অবস্থান। সাহাবা রা.এর বড় একটি জামাতের সাক্ষাৎ ও সোহবত লাভে ধন্য হয়েছিলেন তাউস রহ.। এজন্য তাঁর চলাফেরায় ছিল সাহাবায়ে কেরাম রা.এর পূর্ণ প্রতিচ্ছবি।


তাবেয়ী তাউস ইবনে কায়সানের জীবনের কিছু আলোকিত অংশ
তাবেয়ী তাউস ইবনে কায়সানকে বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, তাঁর ইলম ও প্রজ্ঞা জগদ্ব্যাপী সুপ্রসীদ্ধ। 


অনেক সাহাবি রা. থেকে হাদিস বর্ণনার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন তিনি।
তাঁর সম্পর্কে বিখ্যাত তাফসীর শাস্ত্রজ্ঞ ইবনে কাসির রহ. বলেন- তাবেয়ী তাউস ইবনে কায়সান ছিলেন মনীষী ইমামদের অন্যতম।


ইমাম নববী রহ. বলেন, ইলম ও আমলের দিক থেকে তিনি ছিলেন অত্যুচ্চ স্তরের অধিকারী। ইমাম নববী বলেন, তাউস সবচেয়ে বেশি ফয়েজ ও ইলম হাসিল করেছেন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে, যদিও তিনি ছিলেন হযরত ইবনে আব্বাস রা.এর বিশেষ শাগরেদদের অন্যতম।
আল্লামা ইবনে খাল্লিকান বলেন, অত্যন্ত উঁচু মর্যাদার অধিকারী ফকীহ ছিলেন তাবেয়ী তাউস রহ,। স্বপ্ন ব্যাখ্যায় তাঁর এতোই অবিজ্ঞতা ও জ্ঞান ছিল যে, তাঁকে বলা হতো ইয়েমেনের ইবনে সিরীন।


মুহাদ্দিস ইবনে হিব্বান রহ. বলেন, তাউস ছিলেন ইয়েমেনের ইবাদগুজার বুযুর্গদের শীর্ষস্থানীয়। নামাজের প্রতি তাঁর এতোটাই ইশক-মুহাব্বত ছিল যে, মৃত্যুশয্যায় শায়িত হয়েও দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন। চল্লিশ বার হজ্জ করেছেন, তাওয়াফের সময় ধীর স্থীর নিশ্চুপ থাকতেন। কারো কথারও কোন উত্তর দিতেন না। তিনি বলতেন, তাওয়াফ তো নামাজতুল্য ইবাদত।


ইবাদত ও যাহাদত, আনুগত্য ও দুনিয়ার প্রতি নির্মোহতা, গভীর ইলম ও নিষ্ঠাপূর্ণ আমল ইত্যাদি দীনী বিষয়ে তিনি ছিলেন সাগরসদৃশ। ইবনে আব্বাস রা.থেকে অধিকাংশ বর্ণনা আমরা তাউস রহ.এর কল্যাণে লাভ করেছি। বিশিষ্ট তাবেয়ীদের অনেকেই তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। 

যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুজাহিদ, আতা, আমর বিন দিনার, ইবরাহীম ইবনে মায়সারাহ, আবু যুবাইর, মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির, যুহরি, দাহহাক, ওয়াহহাব ইবনে মুনাব্বিহ প্রমুখ বিজ্ঞ তাবেয়ীগণ।
দুই, ইবাদত-মুজাহাদা


=============
তাউস ইবনে কায়সান ছিলেন গভীর ইলমী যোগ্যতার অধিকারী। তাকে আল্লাহ যতটুকু ইলম দান করেছেন তার চেয়েও বেশি দান করেছিলেন আমলের শওক ও জযবা। সর্বদা তিনি ছিলেন সওয়াব লাভের প্রত্যাশী। আল্লাহমুখিতা ছিল তাঁর সর্বক্ষণের আমল।
ইবনে কাসির তাঁর সম্পর্কে বলেছেন- তাউস রহ. হজ্জরত অবস্থায় পবিত্র মক্কা মুকাররামায় ইন্তিকাল করেন। ইবনে শাওযাব বলেন, আল্লাহ তাউসের উপর রহম করুন। তিনি চল্লিশবার হজ্জ পালন করেন।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. তাউস সম্পর্কে বলেন, তাউস ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা আসর নামাজ আদায় করে কিবলামুখী হয়ে বসে পড়তেন। এসময় কারো সাথে কথা বলতেন না, শুধুই দোয়া করতে থাকতেন মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে।


তিনি উদাসীন ব্যক্তিদের মোটেও পসন্দ করতেন না। একবার প্রভাতে তাউস বিন কায়সান একজন লোকের সাথে দেখা করতে আসলেন। এসে শুনলেন লোকটা ঘুমুচ্ছে। তখন তিনি মন্তব্য করলেন, এমন ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাতের প্রয়োজন নেই যে সকালে ঘুমায়।
তাবেয়ী তাউসের দু‘চোখ থেকে যেন ঘুম একেবারে বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছিল। ইবনুল জাওযি রহ. বলেন, তাবেয়ী তাউস কখনো কখনো বিছানা বিছিয়ে গা এলিয়ে দিতেন। খানিকবাদে গা ঝেড়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়তেন, ও কিবলামুখী হয়ে এবাদতে রাত কাটিয়ে দিতেন। তিনি প্রায়ই বলতেন, জাহান্নামের স্মরণ আবেদদের ঘুম নিঃশেষ করে দিয়েছে।


তিনি প্রায়ই একথা বলতেন যে, বনি আদম যে কথাই বলুক সব কথার হিসাব হবে, এমনকি অসুস্থাবস্থায় সে যে, কাতর স্বর তার মুখ থেকে বের হয় সে জন্যও জবাবদিহি করতে হবে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ, অসুস্থ হয়ে কিছুটা কাতরাচ্ছিলেন, তাউস রহ.এর কথা শুনে একেবারে চুপ হয়ে গেলেন।
ইবনে কাসির রহ. বলেন, তাউস বলতেন- আল্লাহকে এমন ভয় করো যে, অন্য কারো ভয় তোমার মাঝে না থাকে। আর আল্লাহর প্রতি এতো বেশি আশাবাদি হও যা তাঁর প্রতি ভয় থেকেও বেশি। এবং তুমি অপরের জন্য তাই পসন্দ করো যা নিজের জন্য পসন্দ কর।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না

No comments:

Post a Comment