চারটি দৃশ্য কল্পনা করি। এই দৃশ্যগুলোর মানেটাও বোঝার চেষ্টা করি।
(১) আমি নিজের গন্তব্যে হেঁটে চলছি। স্বাভাবিক গতিতেই হাঁটছি।
— বোঝা যায়, এ অবস্থায় আমার তেমন কোনো তাড়া নেই। কোনো রকম পৌঁছতে পারলে চলবে।
— বোঝা যায়, এ অবস্থায় আমার তেমন কোনো তাড়া নেই। কোনো রকম পৌঁছতে পারলে চলবে।
(২) কিছুটা জোর কদমে এগোচ্ছি। একটু পর পর দৌড় দিচ্ছি।
— বোঝা যায়, এ অবস্থায় আমি আরেকটু সিরিয়াস। সময়ক্ষেপণ হলেই কিছু একটা হারানোর আশঙ্কা আছে।
— বোঝা যায়, এ অবস্থায় আমি আরেকটু সিরিয়াস। সময়ক্ষেপণ হলেই কিছু একটা হারানোর আশঙ্কা আছে।
(৩) দৌড়াচ্ছি। আবার আশেপাশে যারা দৌড়রত আছে, সবার দিকে নজর রাখছি। আমি যেন কারো থেকে পিছিয়ে না থাকি, সে জন্যে সতর্ক আছি।
— বোঝা যায়, এ অবস্থায় আমার উদ্বেগের মাত্রা একটু বেশি। সামনেই অতি মূল্যবান কিছু অপেক্ষা করছে, যা হাতছাড়া করতে রাজি নই। তাই পাল্লা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি লক্ষ্যপানে।
— বোঝা যায়, এ অবস্থায় আমার উদ্বেগের মাত্রা একটু বেশি। সামনেই অতি মূল্যবান কিছু অপেক্ষা করছে, যা হাতছাড়া করতে রাজি নই। তাই পাল্লা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি লক্ষ্যপানে।
(৪) রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যাচ্ছি। আশেপাশে কারো দিকে তাকানোর বিরাম নেই, সামনে বা পেছনে নজর দেওয়ার ফুরসতও নেই। প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটেই চলছি।
— বোঝা যায়, জীবন ও মৃত্যুর ভাবনা-রেখা এক বিন্দুতে মিলে গেছে। যেদিকে ছুটছি, সেদিকটা ছাড়া আর কোথাও আশ্রয়ের সম্ভাবনা নেই। আশ্রয়স্থলে পৌঁছতে এক মুহূর্ত বিলম্ব করাও বিপদ! পৌঁছে গেলেই আমি নিরাপদ।
...-----------------------------------------------------
এবার কুরআনের কাছে আসি।
প্রিয়তম রব্ব-এর চারটি আদেশ খেয়াল করি। চারটি আদেশ প্রদানে চার ধরণের শব্দচয়ন লক্ষ করি।------------------------------
(১)আল্লাহ আমাদের রিযক অন্বেষণের আদেশ দিয়েছেন। রিযক অন্বেষণের জন্যে আমাদেরকে বলেছেন: فَامْشُوا ‘হেঁটে যাও’। [আল-মুলক, ৬৫:১৫]
(২)
জুমু‘আহর দিন আযান শোনার সাথে সাথে সব ধরণের কাজ বন্ধ করে সালাতের দিকে মনোনিবেশের আদেশ দিয়েছেন। এই আদেশের সময় বলেছেন: فَاسْعَوْا ‘দৌড়াও’। [আল-জুমু‘আহ, ৬২:৯]
(৩)
জান্নাত লাভের জন্যে আল্লাহ আমাদেরকে প্রণোদনা দিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন। জান্নাতের দিকে কিভাবে যেতে বলেছেন? বলেছেন: وَسَارِعُوا ‘তোমরা পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাও’। [আলে ‘ইমরান, ৩:১৩৩]
(৪)
এবার আল্লাহ নিজের ক্ষেত্রে কী বলেছেন, দেখি। فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ ‘অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ছুটে চলো!’ [আয-যারিয়াত, ৫১:৫০]
..
আগের চারটি দৃশ্যের সাথে এই চারটি শব্দ-কে মিলিয়ে দেখি।
কী বুঝলাম?-----------------------
• রিযক অন্বেষণের জন্যে হেঁটে গেলেই যথেষ্ট। পৃথিবীতে জীবনধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় কিছু উপকরণ সংগ্রহ করার জন্যে এত তাড়া নেই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও কিছু নেই।
• সালাতের দিকে মনোনিবেশ করার জন্যে আরেকটু বেশি গতিময় হওয়া চাই। বিলম্ব হলেই বিড়ম্বনা। পুণ্যের খাতায় শূন্য উঠতে পারে।
• জান্নাতের জন্যে আরো বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন আছে। জান্নাত অভিমুখে এগিয়ে যাওয়া অভিযাত্রীদের সাথে নিজের গতির তুলনা করাটাও দরকার আছে। খানিকটা পিছিয়ে গেলেই অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প থাকা নেহায়েৎ জরুরি।
• আল্লাহর দিকে? সেভাবেই ছুটে যেতে হবে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে যেভাবে ভয়ার্ত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছোটে।
فرار এমন এক অর্থের প্রতিনিধিত্ব করে, যেটা চূড়ান্ত পরিণতি থেকে পরিত্রাণের জন্যে উদ্বেগাকুল ছোটাছুটি’র দ্যোতনা-কে প্রকাশ করে।
ভয় থেকে নিরাপত্তার দিকে ছুটে যাওয়া, নিশ্চিত মরণ থেকে নিশ্চিত শরণের দিকে ছুটে যাওয়া।
----পেছনে ধাবমান কোনো নেকড়ের অস্তিত্ব যখন টের পাবো, তখন তার থাবা থেকে বাঁচার জন্যে আমি এক মুহূর্তও এদিক-সেদিক না ভেবে প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটে যাবো। ঠিক সেভাবেই,
শয়তানের ওয়াসওয়াসা আমার ভেতরে অনুভূত হওয়ার সাথে সাথেই আমি প্রাণভয়ে শঙ্কিত হবো, প্রাণ হাতে নিয়ে আল্লাহর কাছেই ছুটে যাবো।
নাফসের চাবুকাঘাতে প্রাণের প্রাণনা ওষ্ঠাগত হয়ে গেলেও আমার হতাশা নেই, কারণ এই মুহূর্তেই আমি আমার শেষ ভরসাস্থল আল্লাহর দিকে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যাবো।
নাফসের চাবুকাঘাতে প্রাণের প্রাণনা ওষ্ঠাগত হয়ে গেলেও আমার হতাশা নেই, কারণ এই মুহূর্তেই আমি আমার শেষ ভরসাস্থল আল্লাহর দিকে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যাবো।
ছুটতে ছুটতে যখন ক্লান্তিতে পেয়ে বসবে, তখন সঞ্জীবনী শক্তি ফিরিয়ে আনতে দুটো বিখ্যাত পঙক্তি আবৃত্তি করবো:------------------------------------------
من وجد الله فماذا فقد؟
ومن فقد الله فماذا وجد؟
من وجد الله فماذا فقد؟
ومن فقد الله فماذا وجد؟
আরবিটা না বুঝলে বাঙলায়ণ করে ফেলবো:------------
“আল্লাহকে যে পেয়েছে, তার কী হারিয়ে গেলো
আল্লাহকে যে হারিয়েছে, কী এমন সে পেলো
“আল্লাহকে যে পেয়েছে, তার কী হারিয়ে গেলো
আল্লাহকে যে হারিয়েছে, কী এমন সে পেলো
এই আবৃত্তি আমাদের প্রত্যাবৃত্তির আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
এই প্রত্যাগমন তো এমন এক সত্তার দিকে, যাঁর দিকে ছুটে যাওয়ার জন্যে তিনি নিজেই আহ্বান করেন।
এই প্রত্যাবর্তন একটি সুনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে।
এই ছুটে যাওয়া একটি নির্ভরতার আশ্রয়ের দিকে।
এই ছুটে যাওয়া একটি নির্ভরতার আশ্রয়ের দিকে।
চলো, ছুটে যাই!
...............................................
...............................................
Abdullah Mahmud Nazi
No comments:
Post a Comment