Wednesday, 25 October 2017

writer atikullah- রেসিডেন্সিয়াল গার্লসস্কুল ইন হারার story part-2



-

অপ্রত্যাশিত মেহমান দেখে দাদু শশব্যস্ত হয়ে অভ্যর্থনা জানালেন। জুমাইমাকে তিনি আগে দেখা তো দূরের কথা, তার নামও শোনেননি। আমি পরিচয় করিয়ে দিলাম। দাদু পরম আদরে তাকে কাছে টেনে বসালেন। আমি আঙ্কল রোনেকে বৈঠকখানায় বসালাম। আঙ্কল জানালেন, বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না। চলে যাবেন। দাদুর পীড়াপীড়িতে একবেলা খেয়ে যেতে রাজি হলেন। 



.চটজলদি যোগাড়যন্ত্রে নেমে পড়লাম। আঙ্কলের সাথে সবার জন্যে আরও কয়েকজনকেও নিমন্ত্রণ করলেন দাদু। আমি বাইরের কাজে দৌড়াদৌড়ি করছিলাম। দাদু ঘরের কাজ একা একা সামাল দিচ্ছেন দেখে, জুমাইমাও সাথে জুড়ে গেল। সে এসব কাজ আগে করেছে কি না, জানি না। তবে বেশ ভালোভাবেই দাদুর সাথে মিশে গেল। দেখে মনে হচ্ছিল, সে কতদিনের আপন! বাইরের কেউ নয়! .


রাতের গাড়িতে আঙ্কল চলে যাবেন বলে ঠিক করলেন। জুমাইমা আব্দার জুড়ল, সে দাদুর কাছে আরও কয়েকটা দিন থেকে যাবে! দাদু ভীষণ খুশি! 

অল্প কয়েকটা ঘণ্টার সঙ্গেই নিজের দেশি মেয়েটাকে বড্ড ভাল লেগে গেছে। দীর্ঘদিন পর, এই প্রথম তিনি বাপের বাড়ির দেশের কারো দেখা পেলেন। মন খুলে ইংরেজিতে কথা বলতে পারলেন। জুমাইমা প্রথমে দাদুকে দেখে আকাশ থেকে পড়েছিল! সে ভেবেছিল আমার দাদুও একজন কালো মানুষই হবেন।

জুমাইমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল আদ্দিস আবাবায় যাওয়ার পর। তখন সে মাধ্যমিকে পড়ে। তাকে পড়ানোর দায়িত্বও পালন করতে হয়েছিল। তারপর সে কানাডা চলে গিয়েছিল। আদ্দিস আবাবায় জুমাইমা পড়তো বিদেশী দূতাবাসগুলোর জন্যে নির্দিষ্ট এক দামী স্কুলে। 

আঙ্কল রোনের বাড়িতে থাকতে শুরু করার কিছুদিন পর, আন্টি একদিন আমাকে বললেন, তার মেয়েকে পড়ার কাজে একটু সহযোগিতা করতে। ভয়ে ভয়ে রাজি হলাম। আমি তাকে পড়াব কি, সেই উল্টো আমাকে পড়াতে শুরু করল। আমি পড়েছি প্রাচীন শিক্ষারীতিতে আর সে পড়ছে বিশ্বের সর্বাধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায়। বয়েসে আমার চেয়ে সে অনেক ছোট, তবুও বিভিন্ন বিষয়ে তার অবাধ জানাশোনা আমাকে রীতিমতো নির্বাক করে দিত। আমার মাঝেমধ্যে মনে হত, জুমাইমাকে পড়ানোর দায়িত্ব দেয়ার পেছনে আঙ্কল-আন্টির অন্য একটা উদ্দেশ্য কাজ করেছিল।


 আমি তাদের বাড়িতে থাকতাম, এর বিনিময়ে তারা কিছুই গ্রহণ করতেন না। কিন্তু এটা নিয়ে আমার মনে গ্লানিবোধ জন্মাতে পারে, সেটা দূর করার জন্যেই এ-ব্যবস্থা। পাশাপাশি এটাও বিচিত্র নয়, মেয়েকে পড়াতে গেলে হয়তো আমারও মৌলিক যোগ্যতায় কিছুটা উন্নতি হবে, তাই এ-সুযোগ। জুমাইমা ছিল অত্যন্ত ডানপিটে। 

আন্টি প্রায়ই বলতেন, তোমাকে দেখে যদি ও একটু শান্তশিষ্ট হতে শেখে, সেটা হবে ও জীবনের অনেক বড় পাওনা। মেয়েটা কথা শুনতে চায় না। চার্চে যেতে চায় না। 

তুমি ওকে বুঝিয়ে বলো একটু! 

আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করতাম,-আমি কিভাবে ওকে চার্চে যেতে উদ্বুদ্ধ করবো? আমি নিজেই তো চার্চে যাই না?

-না গেলেও, ও তোমার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী! তুমি কিছু মনে করো না, সে ইথিওপিয়ায় থাকলেও, তাদের স্কুলের সবাই ইউরোপিয়ান। তোমার আগে, আফ্রিকান কাউকে সে এত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায় নি। সে চঞ্চলমতি হলেও তার মধ্যে একটা ভাবুক মন আছে! বয়েস কম হলেও সে অনেক কিছু ভাবতে র্শিখেছে! -ঠিক আছে, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব!আমার চেষ্টা কতটুকু সফল হয়েছিল জানি না, তবে আমি টের পেতাম, বাবা-মায়ের চেয়েও আমার সাথে কথা বলতে সে বেশি আগ্রহী ছিল। স্কুলের অনেক কথা সে মাকে বলার আগে আমাকে বলত। আমিও তার কথা শুনে বেশ মজা পেতাম।


 ইউরোপিয়ানদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারতাম। বর্তমানের ছেলেমেয়েদের ভাবনাচিন্তা কেমন, সেটার গতিপ্রকৃতি আঁচ করতে পারতাম! বছরখানেক পরেই সে কানাডা চলে গিয়েছিল। দীর্ঘদিন পর আজ দেখা। প্রায় চার বছর পর। সেদিনের ছোট্ট খুকি কতবড় হয়ে গিয়েছে। 

.আঙ্কল চলে যাওয়ার পর, গল্পের আসর বসল। 

জুমাইমার কৌতূহল আর বাধ মানছে না। তার দেশের একটা মানুষ আফ্রিকার এই সুদূরে কিভাবে এলেন? 

নিশ্চয় বড় কোনও ইতিহাস এর পেছনে লুকিয়ে আছে। 

দাদু তাঁর হাতের কাজ গুছিয়ে এসে বসলেন। জুমাইমাকে কী একটা মিষ্টি খেতে দিলেন। মিষ্টান্ন দ্রব্যটা শুধু হারারেই পাওয়া যায় না। 

এখানকার কফি বিশ^বিখ্যাত। কফিবিন মিশিয়ে কিভাবে যেন বানানো হয়। অনেক মহিলা এটা বানিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে! 

দাদু আসার পর, সুলিয়া মানে মিষ্টান্য দ্রব্যটির আকারে ও প্রকারে, গুণে ও মানে অনেক পরিবর্তন এসেছে! তিনি মেধা খাটিয়ে সুলিয়াকে নতুন রূপ দান করেছেন। আগে শুধু বড়রাই খেতে পারত! এখন বড়রা তো বটেই ছোটরাও সুলিয়ার জন্যে পাগল! জুমাইমা সুলিয়া মুখে দিয়ে স্বাদের আস্বাদনে চোখ বুজে ফেলল! সেটা দেখে দাদুর চোখে পরম আদরমাখা দৃষ্টি ফুটে উঠল! তিনি বলে উঠলেন:-তোমাকে আজ একটা সুলিয়া দিয়েছি! প্রথমবারে একটার বেশি খাওয়া ঠিক নয়। আগামী কাল আরও দেব! এটা খেলে একটু ঘুম ঘুম ভাব আসে! অবশ্য একটু পর কেটে যায়! 

-এবার আপনার ঝাঁপি খুলুন দাদু! আমার আর তর সইছে না! 
-কিভাবে যে খুলি, খুললেই সে মানুষটার কথা মনে পড়বে! এতদিনের ভালোবাসা ভুলি কী করে? 

তিনি আমার শরীরের একটা অংশে পরিণত হয়েছিলেন! আমার মন বা আত্মা বলেও আলাদা কিছু আছে, তার থাকাবস্থায় সেটা অনুভব করতে পারিনি! তিনি আর আমি এক দেহ এক আত্মার মতো ছিলাম! আমার কথা মানেই তার কথা! বিলালের দাদুর কথা! তিনি জীবনে এত এত সংগ্রাম করেছেন, আমি তুমি কল্পনাও করতে পারব না! 

এখন যে ঘরে বসে আমরা কথা বলছি, এ-ঘরেই আমার শাশুড়ি থাকতেন! তিনি তার সন্তানদের নিয়ে ঘুমুতেন! তার পূর্বপুরুষ ছিল হারারের রাজা। তারা আরব থেকে এখানে এসে শত বছর হারারকে শাসন করেছেন। 

আফ্রিকা মহাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। 

এখন ইথিওপিয়ার যে রাজধানি, সেটাও তাদের রাজত্বের অধীনে ছিল! কিন্তু ইউরোপিয়ানদের আগ্রাসনে সে রাজপাট একসময় বিলুপ্ত হয়ে গেছে! ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল রাজবংশের লোকেরা। 
.বিলালের দাদু তখন সদ্য কৈশোর পেরুনো টগবগে তরুণ। ইতালির সরকার ইথিওপিয়া আক্রমণ করে। এটা ১৯৩৫ সালের ঘটনা। 

আদ্দিস আবাবায় তখন খ্রিস্টান সরকার। তারা সারা দেশের মানুষকে ইতালিয়ান হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায়। বেনিতো মুসোলিনির সা¤্রাজ্যবাদী চিন্তা আফ্রিকার গহীন পর্যন্ত এসে পৌঁছল। হারার থেকে একদল মুসলিমও ইতালিবিরোধী সংগ্রামে যোগ দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল বিলালের দাদা। মুসোলিনি এখানে তার সর্বশক্তি ব্যয় করেছিল। আদ্দিস আবাবার যুদ্ধে মুসলমানরা বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিল। হারারী মুসলিম স্কোয়াডের দুর্ধর্ষ বীরত্ব যুদ্ধের মানচিত্র বদলে দিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ইথিওপিয়ান বাহিনী পরাজিত হল। ইথিওপিয়া চলে গেল ইতালির অধীনে। 


১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত। স¤্রাটকে আশ্রয় দিল ব্রিটেন। শুরু হল দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ। ১৯৪১ সালে ব্রিটেন পরাজিত করে ইতালিকে। দখল করে নেয় ইথিওপিয়া। 

তারপর আসে আমেরিকা। ব্রিটেনের অধিকার খর্ব করে আমেরিকা এখানে নিজেদের অর্থনৈতিক বলয় তৈরী করে। আমেরিকার সহযোগিতায় ইথিওপিয়ায় গড়ে ওঠে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন্স। ইথিওপিয়া থেকে প্রথম বিমান ওড়ে ১৯৪৬ সালে। 

ইথিওপিয়ায় নানা সমস্যা হয়েছে, কিন্তু ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের উপর এর কোনও প্রভাব পড়েনি। 


.-তারপর কী হল, বিলালের দাদাভাই কোথায় গেলেন?

-দুর্ভাগ্যবশত বিলালের দাদু সে যুদ্ধে ইতালিয়ানদের হাতে বন্দী হল। আরও অনেক সৈন্যকেই বন্দী করা হয়েছিল। খ্রিস্টানদের ছেড়ে দেয়া হল। মুসলিম সৈন্যদের নিয়ে যওয়া হল ইতালিতে। আমেরিকায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়েছিল ১৮৬৫ সালে। আমেরিকার আগে বা পরে ইউরোপের অন্য দেশেও দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অধীনস্থ দেশের জনগনের প্রতি ইউরোপিয়ানদের প্রভুসুলভ মনোভাব এর একশ বছর পরেও বদলায়নি। খোদ আমেরিকাতেই সত্তর আশির দশকেও কালোদের প্রতি বৈষম্য বিদ্যমান ছিল।

 বিলালের দাদার নাম ছিল আজুবা বকর। রোমে তাকে একটা সেনানিবাসে রাখা হয়েছিল। মানুষটাকে দাসের মতো খাটানো হত। দিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করতে হত। সৈনিকদের হেন কাজ নেই, তাকে করতে হয়নি।

 কিছুদিন এভাবে পশুর খাটুনি খেটে শরীর ভেঙে পড়ল। সেনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাল। সেটা ছিল ভ্যাটিকান পরিচালিত একটি দাতব্য হাসপাতাল। .
ডাক্তার নার্স প্রায় সবাই ভ্যাটিকান চার্চের নিয়োগকৃত। হাসপাতালের ইটটা পর্যন্ত খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। এখানে অন্য কোনও রুগি ছিল না। সবই বিভিন্ন দেশ থেকে বন্দী করে আনা কালো মানুষ। 

একটা কথা চালু ছিল, এখানে কেউ একবার ভর্তি হলে, খ্রিস্টান না হলে বের হতে পারে না। আগ্রহে না হলেও ভয়েও অনেকে খ্রিস্টান হয়ে যেত। একটু সুস্থ্য হলে বলা হত, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলে তোমাকে চার্চের অধীনে কোনও দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে। সুখে শান্তিতে চার্চের সেবা জীবন কাটাতে পারবে। নইলে আবার সেনা ব্যারাকে পাঠানো হবে। কোন দিকে যাবে বলো! এমন প্রস্তাবে, অত্যাচারে জর্জরিত কালো মানুষগুলো ধর্মান্তরিত হওয়াকেই শ্রেয় মনে করত। কিন্তু বিলালের দাদা প্রস্তাবটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করল। 


.শুরু হল দ্বিতীয়বারের মত দাসের জীবন। অত্যাচার পরিশ্রম আগের তুলনায় আরও বেড়ে গেল। আগে রাতের বেলা বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হত। এখন তাও দেয়া হয় না। এটা ছিল পরিকল্পিত! যাতে কেউ দ্বিতীয়বার ব্যারাকে না এসে ভ্যাটিকানের কথা মেনে নেয়। অল্প ক’দিন পরই মানুষটা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ল। চার্চ কর্তৃপক্ষ এ-ধরনের ঘটনার সাথে পরিচিত। তারা কৌশলে অগ্রসর হল। বেলালের দাদুর মত যারা পোশ মানতে চাইত না, তাদের জন্য ছিল অন্য ব্যবস্থা। এ-ধরনের লোকদেরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ওয়ার্ডে রাখত। বাইরে থাকত কড়া সামরিক পাহারা। কেউ এখান থেকে পালিয়ে যাবে, সে সুযোগ নেই। 


মানুষটাকে এবার বিশেষ নজরদারিতে রাখল। এখানে ডাক্তার নার্স সেবিকা সবাই মেয়ে। ওয়ার্ডে সব সময় কিশোরী ও তরুণী সেবিকারা থাকত। সবাই সুন্দরী। এদেরকে আনা হতো ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। কারো বাবা যুদ্ধে নিহত! কারো বাবা-মা দু’জনেই প্রথম বিশ^যুদ্ধে নিহত! কারো ঘর বাড়ি নেই। কেউ পরিবারের চাপে নান হতে এসেছে। কেউ স্বেচ্ছায় কুমারী মেরীর মতো হতে এসেছে। কেউ কেউ ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের ধাক্কার চাপ সইতে না পেরে জীবন থেকে পালাতে চার্চে এসে আশ্রয় নিয়েছে। কাউকে গোয়েন্দা সংস্থা নিয়োগ করেছে। শুনতে অবিশ্বাস্য ঠেকলেও, সেই মেয়েদের অনেককে বিভিন্ন শহরের খারাপ জায়গা থেকেও সংগ্রহ করে আনা হত। বেওয়ারিশ মেয়েরাই বেশি কাজে আসত। কারণ তাদের কোনও পিছুটান থাকে না।


 মাঝেমধ্যে সমস্যা যে বাঁধত না, তা নয়। অনেক সময় দেখা যেত, মা খারাপ পাড়ায় থাকলেও, মেয়ের প্রতি দাবী ছাড়ত না। আবার কখনো কখনো মা ও বাবা দু’জনেই বিয়ে করতে সম্মত হয়ে যেত! তখন সন্তানকে ফিরিয়ে নিতে আসত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চার্চ রাজি হত না। বাবা-মা জোরাজুরি করলে চার্চ নিজের অপরিমেয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাদেরকে হাঁকিয়ে দিত! অনেক মেয়ে ছিল, তাদেরকে ছেলেধরাদের হাত থেকে কিনে নেয়া হয়েছে। এদেরকে বিশে^র বিভিন্ন স্থান থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হত। একদম ছোটবেলায়। আরও অসংখ্য ধাঁচের মেয়ে থাকতো চার্চে। তাদেরকে সব ধরনের শিক্ষা দিয়ে জ্ঞানে-গুণে নিপুণা করে তোলা হত। তাদের সব দক্ষতা ব্যয় হতো যিশুর কল্যাণে। খ্রিস্টবাদের প্রচারে। বিধর্মীদেরকে খ্রিস্টবাদে দীক্ষিত করার কাজে। 


.

মুসোলিনির মতো ফ্যাসিস্টের শাসনেও ভ্যাটিকানের ধর্মসাম্রাজ্য নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে কোনও সমস্যা হয়নি। এই মেয়েরা ছিল অত্যন্ত প্রশিক্ষিত। হাসপাতালটা ছিল তাদের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি। চার্চ কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকের গতিবিধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখত। রুগিদের সাথে কে কেমন আচরণ করছে, কেমন অভিনয় করছে, দূর থেকে লক্ষ্য রাখত। কেউ যদি অভিনয়ের অতিরিক্ত কিছু করার দিকে অগ্রসর হতো, শাস্তিস্বরূপ তাকে কিছুদিন হাসপাতালের ডিউটিতে আসতে দেয়া হত না। রান্নাঘর ও বাথরূপ পরিষ্কারের কাজে লাগানো হতো। প্রচণ্ড রোদে বাগানের আগাছা সাফাইয়ে লাগিয়ে দেয়া হত! বড় যাজকদের গৃহকর্মে লাগিয়ে দেয়া হত। তাদের সব ধরনের সেবায় নিজেকে বিলীন করে দিতে হত। 


.বিলালের দাদা যে ওয়ার্ডের রুগি ছিলেন, সেটা ছিল সর্বোচ্চ গুরুত্বপ্রাপ্ত ‘দাস’দের জন্যে নির্দিষ্ট। ওয়ার্ডের গুরুত্বানুযায়ী ‘মেইড’ নির্ধারন করা হত। গুরুত্বপূর্ণ বা মেধাবী কোনও ‘বন্দী’ হলে, তার জন্যে নিয়োগ করা হত চৌকশ ও অতি সুন্দরীদেরকে। সুন্দরীরা নানা ছলাকলায় ভোলানোর চেষ্টা করত রুগিদেরকে। 

রুগিরাও ব্যাপারটা যে বুঝত না তা নয়। কিন্তু না বোঝার ভান করা ছাড়া ভিন্ন উপায় ছিল না। মুখ বুজে পরিণতির অপেক্ষা করতে হত। দুর্বল শরীরে, অবসন্ন মনে কাঁহাতক এতসব আকর্ষণীয় প্রলোভন এড়ানো যায়? সবার মধ্যে দ্বীনি শিক্ষা অতটা প্রবল ছিল না। বেশির ভাগ বন্দীই ছিল পিছিয়ে পড়া আফ্রিকা থেকে আসা। ইতালির উপনিবেশগুলো থেকে তাদেরকে নানা কৌশলে নিয়ে আসা হয়েছে। বিলালের দাদা আর তার সাথের কিছু মানুষ ছিলেন ব্যতিক্রম। তাদেরকে ষড়যন্ত্র করে বন্দী করে নিয়ে আসা হয়েছে। 


.সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণা একটি মেয়ে, নাম ছিল জুলি। সে বিলালের দাদুর ওয়ার্ডে কাজ করার দায়িত্ব পেয়েছিল। একটা ওয়ার্ডে পালাক্রমের অনেক মেয়েই দায়িত্ব পালন করত। প্রতিবারে দশজন করে। জুলির পালা বেশির ভাগ সময় পড়ত রাতের দ্বিতীয়ার্ধে। সকাল পর্যন্ত জুলিদের দল রুগির দেখভাল করত। 

জুলিরা রাত একটায় কাজ শুরু করত। কাওকে ওষুধ খাওয়ানোর পালা থাকলে খাওয়ানো হত। এরপর রুগিদের সাথে সাথে সেবিকারাও এখানে ওখানে বসে বসে ঢুলত। 

কেউ কেউ অতি উৎসাহী রুগিদের সাথে গল্প জুড়ে দিত। গল্প করতে চাইলে সেবিকারা ভীষণ খুশি হত। কথা বলতে পারলেই তাদের লাভ। যে যত বেশি কথা বলতে পারবে, সে তত নাম্বার পাবে। রুগিকে খ্রিস্টবাদের দাওয়াত দিতে পারবে। 

.জুলি সব সময় বিলালের দাদুর আশেপাশে থাকার চেষ্টা করত। তিনি ছিলেন অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তরুণ বয়েসেই তার গাম্ভীর্য আর রাশভারী ধীরস্থির আচরণ অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। তিনি মনেপ্রাণে ধার্মিক ছিলেন। ইসলামের জন্যে কিছু করার জন্যে সব সময় মুখিয়ে থাকতেন। ছেলেবেলা থেকেই ধার্মিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন! তাই ইতালিয়ানদের আগ্রাসনের মুখে বসে থাকতে পারেননি। খ্রিস্টান শক্তির বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। 

যদি খ্রিস্টান রাজা হাইলে সেলাসের পক্ষ হয়েই লড়েছিলেন, কিন্তু সে লড়াই ইসলামী হারারকে রক্ষার লড়াইও ছিল। কারণ আদ্দিস আবাবা ইতালির দখলে গেলে, হারারও যাবে। 

এদিকে লক্ষ্য রেখেই হারারের ওলামায়ে কেরাম খ্রিস্টান সম্রাটের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আর সম্রাট আশ্বাস দিয়েছিল, তার পক্ষ হয়ে লড়লে, হারার সম্পর্কে তিনি ভেবে দেখবেন। 

এ-অঞ্চলকে বাড়তি কিছু অধিকার দেয়া যায় কি না! 

.জুলিকে ধরে আনা হয়েছিল ফ্রান্সের একটা গ্রাম থেকে। তার বাবা-মা দুজনেই মারা গিয়েছিলেন। তারা থাকতো আলজেরিয়াতে। সেখানকার স্বাধীনতাকামীদের হামলায় দু’জনইে নিহত হয়েছিল। তার বাবা একজন সামরিক অফিসার ছিল। বাবা আর মায়ের মৃত্যুর পর তাকে দেখাশোনা করার মত কোনও নিকটাত্মীয় ছিল না।

 প্যারিসের একটা গীর্জা এ-ধরনের বাচ্চাদের দায়িত্ব নিত। সে গীর্জা থেকেই ভ্যাটিকান তাকে সংগ্রহ করে রোমে নিয়ে আসে। একটু বড় হওয়ার পর জুলি ভ্যাটিকান ছাড়তে চেয়েছিল। কিন্তু জোর করে তাকে আটকে রাখা হতো। সে আলজেরিয়া থাকাকালে ছোটবেলাতেই মুসলমান দেখেছে। আরবী ও কালো মানুষ দেখেছে। তাদের প্রতি এক ধরনের ভাল লাগাও বোধ হয় ছিল। 

অফিসে তাদেরকে প্রতিটি পেশেন্টের জীবনবৃত্তান্ত পড়তে হত। সেখানেই সে বিলালের দাদু সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছে। তারপর কাছে থেকে দেখে তার মুগ্ধতার মাত্রা বেড়েই চলেছিল। 

জুলি ভাবত, একটা মানুষ সারাদিন চুপচাপ থাকে কী করে? তার কথা বলতে ইচ্ছা করে না? আর মানুষটার শেখার ইচ্ছাও প্রশংসনীয়। হাসপাতালে শুয়ে-বসেও বিভিন্ন বই পড়ার চেষ্টা করে। ইতালিয়ান ভাষা শেখার চেষ্টা করে। ইংরেজি আগে থেকেই পারত, এখন আরও ভাল করার জন্যে চেষ্টা করছে! বেশ দ্রুত উন্নতিও করছে। আগে একটা বই পড়তে যা সময় লাগত এখন তা চেয়েও কম লাগছে। .


চার্চের পক্ষ থেকে বাইবেল পড়তে দেয়া হতো। চার্চ আগে থেকে ঠিক করে রাখতো, কাকে কোন ভাষাভাষীদের অঞ্চলে পাঠানো হবে! তাকে সে ভাষার বাইবেল দেয়া হত। দীক্ষা ও শিক্ষা যেন একসাথে হয়ে যায়। বিলালের দাদাকে বাইবেল বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্বও ছিল জুলির উপর। তার ভাষা ছিল ফ্রেন্স। তাকেও ভবিষ্যতে ইংরেজী ও ফ্রেন্স ভাষা মিশ্রিত অঞ্চলে পাঠানো স্থির করে রাখা হয়েছিল। এখন পড়াতে গিয়ে, জুলিরও ইংরেজি ভাষাটা আরও সড়গড় হবে। 

নিজের শিক্ষা ও অন্যকে শেখানো একসাথে চলবে। বিলালের দাদা জুলির কাছে বাইবেল পড়তে অস্বীকার করেছিল। কিন্তু না পড়ে উপায় নেই। পড়তেই হবে। চার্চের কথামত না চললে, সোজা ব্যারাকে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অসুস্থ্য হলেও মাফ নেই। তাই বাধ্য হয়েই পড়তে হল। 


.যতই দিন গড়াল, জুলি শিক্ষক থেকে কোন ফাঁকে শিক্ষার্থীতে পরিণত হয়েছিল, সে টেরও পায়নি। খ্রিস্টধর্ম নিয়ে বিলালের দাদারও কম জানাশোনা ছিল না! এই হারার শত বছর ধরে মুসলিম অধ্যুষিত হলেও, আশেপাশের অঞ্চলগুলো খ্রিস্টান অধ্যুষিত ছিল। আফ্রিকার প্রায় সব দেশ ইউরোপিয়ান খ্রিস্টানদের নতুন উপনিবেশ হলেও, সেই প্রাচীন কাল থেকেই ইথিওপিয়াতে খ্রিস্টানদের বসবাস! এ-কারণেই বোধ হয়, ইউরোপিয়ানরা এদিকে খুব একটা লোভাতুর দৃষ্টি দেয়নি। -তাহলে দাদু, ইতালি কেন দৃষ্টি দিয়েছিল?


-ইতালির মুসোলিনি ছিল স্বৈরাচার! সে ইউরোপের অন্য দেশের মতো আফ্রিকায় নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরী করতে চাচ্ছিল! কিন্তু সে বেশিদিন সুবিধা করতে পারেনি। কারণ তাকে লিবিয়াতে মুজাহিদ বাহিনী ঠেকাতে প্রায় সর্বশক্তি ব্যয় করতে হচ্ছিল! আর এখানকার খ্রিস্টান রাজাও মুসলিমদের প্রতি খড়গহস্ত ছিল।

 তুমি কিছু মনে করো না, খ্রিস্টান রাজাদের বদনামি তোমার কাছে খারাপ লাগতে পারে! 

-না না দাদু! ইতিহাস তিক্ত হলেও মেনে নেয়াই যুক্তিযুক্ত! -সম্রাট হাইলে সেলাস হারারের মুসলমানদেরকে অত্যন্ত চাপের মধ্যে রেখেছিল। তোমাকে আগামীকাল নিয়ে যাবো, দেখবে এখানকার বড় মসজিদটিকে খ্রিস্টানরা কিভাবে গীর্জায় রূপান্তরিত করেছে।-সত্যিই?

 -হু, কাল নিজের চোখেই দেখতে পাবে! অথচ মসজিদটা ছিল অনেক পুরনো! এসো, মুল ঘটনায় ফিরে যাই। 

চার্চের পক্ষ থেকে জুলি ও বেলালের দাদুকে পাঠানো হলো কানাডায়। আমি যে স্কুলে পড়তাম সেখানে। 

রেসিডেন্সিয়াল স্কুলগুলোর পক্ষ থেকে ভ্যটিকানে শিক্ষক-শিক্ষিকা চাওয়া হত! এমনকি গীর্জার ফুট-ফরমাশ খাটার জন্যে কাজের লোকও চাওয়া হতো! স্কুলের চাওয়ার প্রেক্ষিতেই জুলিকে শিক্ষিকা হিশেবে পাঠানো হল। সাথে কাজের লোক হিশেবে বেলালের দাদাভাইকে। 

- দাদাভাই ভ্যাটিকানের সব চাওয়া ও দাবী মেনে নিয়েছিলেন? 


-বাহ্যিকভাবে মেনে নিয়েছিলেন। না মেনে উপায় ছিল না। তাকে বলা হয়েছিল, বাড়ি ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। গেলেই সম্রাটকে বলে আবার ধরে আনা হবে। পাশাপাশি বাবা-মা আত্মীয় স্বজন সবাইকে মেরে ফেলা হবে। এমন হুমকি পেলে কেইবা ফিরে যেতে চায়। তিনি অগত্যা ঠিক করেছিলেন, অন্য কোথাও পালিয়ে যাবেন। চার্চ কর্তৃপক্ষ এটাও টের পেয়ে গিয়েছিল। তারা আগাম জানিয়ে রেখেছিল, যেখানে পাঠানো হচ্ছে সেখান থেকে পালালেও একই পরিণতি বরণ করতে হবে! -ইথিওপিয়ার সম্রাট ভ্যাটিকানের কথা মানবেন কেন? 


-সব শেয়ালের এক রা! তলে তলে সবাই এক। আর সম্রাট হাইলে সেলাস নিজেকে সরাসরি নবী সুলাইমান আ.-এর বংশধর মনে করে। তার সাথে খ্রিস্টান ও ইহুদিদের অনেক গোপন সংগঠনের যোগাযোগ আছে! তাকে ঘিরে একটা ধর্মমতই দাঁড়িয়ে গেছে। রাস্তাফারি। ওই যে একজন গায়ক ছিল না, নো ওমেন নো ক্রাই (নারী তুমি কেঁদো না), কী নাম যেন, বাড়ি কারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের জ্যামাইকাতে। -বব মার্লে!-ওমা, তুমি চেন তাকে?-কেন চিনবা না। ভাল করে চিনি। তিনি আমাদের কানাডাতে কনসার্ট করেছেন ১৯৭৯ সালে। আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে পড়ে। ডোনা। সে ববের অন্ধভক্ত। ডোনার বাড়ি ভ্যাঙ্কুবারে। তাদের শহরেও একটা কনসার্ট হয়েছিল। সেই আমাদেরকে ববের কথা বলে। কালো মানুষদের ন্যায্য অধিকারের কথা, রেড ইন্ডিয়ানদের প্রতি বৈষম্যের কথা তার মুখেই শুনেছি। নিপীড়িত মানুষের প্রতি বব মার্লের সংগ্রামকে সে রীতিমতো পূজা করত। বব মার্লের মতো ডোনাও চুলকে জটাদার করে রাখতো। সে আমাদেরকে তার ধর্মমতের দাওয়াত দিত। রাস্তাফারা ধর্ম। 
-ঠিক বলেছ। সম্রাট হাইলে সেলাসি হল সে ধর্মের প্রধান পুরোহিত। ঈশ্বরের পুত্র। কালো মাসীহ। ব্ল্যাক যিশু। রাস্তাফারা ধর্ম খ্রিস্টধর্মেরই নতুন আরেক রূপ। বব মার্লের মাধ্যমে এই ধর্মমত বিশ্বব্যাপী প্রচার পায়। জ্যামাইকা ছিল রাস্তাফারা ধর্মের কেন্দ্রভূমি। আর ইথিওপিয়া তাদের কাছে প্রমিজ ল্যান্ড। ধর্মভূমি। সম্রাট নিজের ভক্তদের দেখা দেয়ার জন্যে তৎকালীন ব্রিটিশশাসিত জ্যামাইকা সফরেও গিয়েছিলেন। 
-আচ্ছা, তারপর কী হল?-জুলি রোমে থাকতেই বিলালের দাদুর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সে ছোটবেলায় আলজেরিয়া থাকাকালে আরবী শিখেছিল। তাদের বাসায় এক মুসলিম দম্পতি থাকত। কাজের লোক হিশেবে। সে দম্পতিই তাকে লালন পালন করেছিল। জুলির মা ছিল অত্যন্ত রোগা! এজন্য তার বাবা দিনে মুসলিম স্বাধীনতাকামীদের হত্যা করত, রাত মদ আর পরনারী নিয়ে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থাকত। এদিকে জুলি বেচারা একা একা! তখন মুসলিম সেই দম্পতি তার দিকে স্নেহের হাত বাড়িয়ে দিল। অবশ্য তাদের প্রধন দায়িত্বই ছিল জুলির দেখাশোনা করা। সেই মুসলিম মহিলা তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। 
মায়ের অসুস্থতার সুযোগে তাকে আরবী শিখিয়েছে। আদব-লেহাজ শিখিয়েছে। আরও বহুকিছু। জুলি চার্চের কাছে আবেদন করেছিল, তাকে যেন আলজেরিয়াতে পাঠানো হয়। সেখানে চার্চের কাজ এখনো জোরাল না হওয়াতে পাঠানো গেল না। জুলি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল, জীবনে একবার হলেও তার পালক মায়ের সাথে দেখা করবে। পারলে তাকে কাছে এনে রাখবে। তার সুযোগ সুবিধা দেখবে। তাকে না পেলে তার ছেলেসন্তানকে। বেলালের দাদাভাইকেও বলে রেখেছিল, সে যদি কোনও কারণে যেতে না পারে, তার বদলে বিলালের দাদাভাই যেন পালক মাকে খুঁজে বের করে। কানাডায় বিলালের দাদাভাইয়ের কাজ ছিল চার্চ ও স্কুলের যাবতীয় ব্যবস্থাপনা তদারক করা। চার্চের প্রার্থনা সভা প্রস্তুত রাখা। স্কুলের ছেলেমেয়েদের উপর গোপন নজর রাখা। তাদের আচার-আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখা। কাজটা পছন্দ না হলেও করতে হত। এখানে আসার পর বাড়তি সুবিধা এটুকু হয়েছে, আগের মত বন্দী হয়ে নির্দিষ্ট একটা চৌহদ্দীর ঘেরাটোপে অন্তরীন হয়ে থাকতে হয় না। চার্চের কাজ করলেও নিজের একান্ত কিছু সময় থাকে। গোপনে কিছু করতে চাইলে সুযোগ আছে। .


কানাডা আসার পর, জুলির সাথে দেখা-সাক্ষাত কমে গেছে। শুধু রোববারে চার্চে দেখা করা সম্ভব হয়। তাও একটুখানি সময়ের জন্যে। বাকি দিনগুলো দু’জন বিচ্ছিন্ন। অল্প যেটুকু সময় পাওয়া যায়, সেটাওবা কম কি! জুলি বারবার বলছে, দু’জন মিলে কোথাও পালাতে! সেটা সম্ভব নয়। পালালেই হারারের মানুষগুলোকে কষ্ট দেয়া হবে। এখানেই থাকতে হবে। কোথাও যেতে হলে এখানকার অনুমোদন ক্রমেই যেতে হবে। এক রোববারে বেলালের দাদাভাইয়ের কাছে জুলি বলল:-------


-আমাকে একজন ফাদার খুব বেশি উত্যক্ত করছে! তিনি স্কুলে অংক পড়ান! তার অনেক দাপট। আমাকেও তার সহকারী হিশেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি রেড ইন্ডিয়ান মেয়েদের উপর অসমিচীন আচরণ করেন। আমি এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। তিনি রেগেমেগে আমার উপরই চড়াও হতে উদ্যত হয়েছেন। তার সাথে আরও সহযোগী আছে। তারাও ফাদারকে পাপকার্যে সহযোগিতা করে! -তুমি সাহস হারিও না জুলি! আমি দেখি কী করা যায়! এখানে আসার পর থেকেই অনেক কিছু চোখে পড়ছে! এর তুলনায় ভ্যাটিকানকে নিষ্পাপ বলা যায়! এভাবে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের উপর নির্যাতন করা যায়? কোনও মানুষ করতে পারে? এরা নাকি ফাদার! এরা নাকি নান! 
-দাদু তুমি তখন ও স্কুলে পড়তে না?


-জি¦ পড়তাম! -বিলালের দাদার সাথে কিভাবে পরিচয়? -রোববারে চার্চে পুরো স্কুলের ছাত্র-শিক্ষক সবাই প্রার্থনা সভায় উপস্থিত হত। আমিও সে রোববারে হাজির হয়েছিলাম। ফাদার মূল প্রার্থনা শুরু করার পর আমার একটু বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিল। আমি সন্তর্পণে বের হলাম। তাড়াহুড়ার কারণে ভুলে আরেক দরজায় দিয়ে ঢুকে পড়লাম! অবাক হয়ে দেখি সিস্টার জুলিকে কী যেন লিখে লিখে শেখাচ্ছেন মি. জ্যাকব! -মি. জ্যাকবই বুঝি বিলাল ভাইয়ার দাদাভাই?-জি¦। আমাকে দেখেই মি জ্যাকব ধড়মড় করে কাগজটা লুকিয়ে ফেললেন! সিস্টার দৌড়ে এসে আমাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলেন। আমার দু’হাত চেপে ধরে ভীত স্বরে বললেন,-তুমি এখানে যা দেখলে, তা কারো কাছে বলো না! তোমার কাছে মিনতি করছি! 


.সিস্টার জুলিকে এমনিতেই আগে থেকে ভালবাসতাম। পুরো রেসিতে একমাত্র তিনিই আমাদের প্রতি সদয় নরম আচরণ করতেন। অন্য সবার মতো জুলুম করতেন না। কথায় কথায় পিটুনি লাগাতেন না। খুবই মমতা দিয়ে অংক শেখাতেন। সেদিনের ঘটনার পর থেকে তার প্রতি কৌতূহল আরো বেড়ে গিয়েছিল। তিনিও আমার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতেন। আড়ালে-আবডালে ডেকে কথা বলতেন। তার ফরমাশ খাটানোর ছলে তার কক্ষে ডেকে নিতেন। দরজা বন্ধ করে গল্প করতেন। কিন্তু আমি শত চেষ্টা করেও তারা সেদিন কী পড়ছিলেন, তা বের করতে পারিনি। অনেক পরে বিলালের দাদা ভাইয়ের কাছে জেনেছিলাম! -কী করছিলেন?


-সূরা ফাতিহা পড়ছিলেন। বিলালের দাদু নিজের হাতে লিখে মিস জুলিকে শেখাচ্ছিলেন। তাদেরকে দেখলে পাক্কা খ্রিস্টান ছাড়া আর কিছু মনে হত না! তাদের বিয়ের কথা জানতে পেরেছিলাম আরও বহু পরে। এখানে চলে আসার পর। আমি তখনো ইসলাম কী, মুসলমান কী কুরআন কী, কিছুই জানতাম না। আমরা জানতাম যিশুর কথা। বাইবেলের কথা। খ্রিস্টবাদের কথা। মেরির কথা। বিশে^ আর কোনও ধর্মের অস্তিত্ব আছে, সেটা প্রথম জেনেছি মিস জুলির কাছে।

 মি. জ্যাকবকে আমরা বোকাসোকা একজন কালো মানুষ বলে ধারনা করতাম। থাকতেনও অমন করে। পরে বুঝেছিলাম, সেটা ছিল তার অভিনয়। ভেতরে ভেতরে তিনি আমাদের অনেক সহযোগিতা করতেন। সেটা আমরা কিছুতেই টের পেতাম না। তার দায়িত্ব ছিল আমাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করা। তিনি আমাদেরকে মার খাওয়ানোর হাজারো সুযোগ পেয়েও কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করতেন না। আমরা আস্তে আস্তে তার মমতাপূর্ণ হৃদয়ের সন্ধান পেয়েছিলাম। কিন্তু বাইরে বাইরে তিনি আমাদের প্রতি অত্যন্ত কঠিন আচরণ করতেন। 


.সিস্টার জুলির সাথে আমার সম্পর্ক এমন হল, প্রতিদিনই তার সাথে কোনও কোনও ছুতায় গল্প করতে যেতাম। বিকেলে আমরা বাগানে পানি দেই। মিস জুলি সাথে থাকেন। একদিন আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তার দেখা নেই। তারপর দিনও দেখা নেই। আমরা ভেবেছি তিনি অসুস্থ। তার ঘরে গেলাম। তালা ঝুলছে। টনক নড়ল। কী ব্যাপার? কোথায় যেতে পারেন? কোথাও গেলে আগে থেকে একটু আভাস তো দিবেন। 

আমি তখন রেসির শেষ ক্লাসে পড়ি। আগামী বছর বের হয়ে যাবো। মুক্ত পৃথিবীতে। অন্যদের তুলনায় আমাদের কিছু চলাফেরার স্বাধীনতা ছিল। আমি এক ফাঁকে মি. জ্যকবের কাছে গেলাম। তিনি আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। তিনিও জানেন না। সেই গত রোববারে চার্চের সময় দেখা হয়েছিল। 

এরপর আর দেখা বা কথা কোনওটাই হয়নি। তিনি ব্যকুল হয়ে পড়লেন। কিন্তু কারো কাছে সেটা প্রকাশও করতে পারছিলেন না। একদিন দু’দিন করে সপ্তাহ কেটে গেল। মিস জুলির দেখা নেই। কর্তৃপক্ষেরও এ-ব্যাপারে কোনও হেলদোল দেখা গেল না। পরে চাপা ফিসফাস থেকে জেনেছিলাম, আমাদের অংকের টিচার ফাদারই মিস জুলির সাথে দুর্ব্যবহার করে তাকে গুম করে ফেলেছিলেন। এমন গুমের ঘটনা একটা দু’টো নয়। রেড হাজারো ইন্ডিয়ান ছাত্র-ছাত্রীকে নির্যাতন করে গুম করে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু তাই বলে ভ্যাটিকান থেকে পাঠানো শিক্ষিকাকেও? আমরা আর কোও খবর জানতে পারিনি। স্কুল থেকে বের হওয়ার পরও আমি চেষ্টা করেছিলাম। কোও সূত্র বের করতে পারিনি। তবে ঘটনাটার কথা উর্ধতন মহল বিলক্ষণ জানতেন। পরে তার প্রমাণ পেয়েছি। 


.এ ঘটনার পর মি. জ্যাকব ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমি ও কয়েকজন ছেলেমেয়ে গোপনে তার সেবা করতাম। তখন আমি তাকে আরও ভাল করে চিনতে পারি। তার সুন্দর মনের পরিচয় পাই। আমি একদম বাচ্চাকাল থেকেই রেসিতে বন্দী। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে কোনও খবর জানতাম না। চার্চের বর্বর ফাদার ও পশুহৃদয় শিক্ষকদের দেখে দেখে মনে হয়েছিল, সব পুরুষই বুঝি এমন? শুধু পুরুষই কেন, সব শাদা নারীও বুঝি এমন হিংস্র আর জানোয়ার স্বভাবের হয়ে থাকে? 

মি. জ্যাকবকে দেখে ভুল ভাঙল। তখন আমি সদ্য কৈশোর পার হয়ে এসেছি। মনে অনেক রঙিন কল্পনা। একজন ব্যতিক্রমী পুরুষ দেখে মনের অবস্থা অন্যরকম হয়ে গেল। হোক না কালো! হোক না মানুষটা আমার চেয়ে বয়েসে অনেক বড়। 
.আমার স্কুলের পাঠ চুকল। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলল চার্চের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে। আমি রাজি হলাম না। পরে মনে হল, এখান থেকে বেরিয়ে গেলে মি. জ্যাকবকে হারাতে হবে। আবার থাকলেও বদচরিত্র ফাদারদের হাতে সবকিছু হারানোর ভয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একবছর থাকার শর্তে রাজি হলাম। দেখতে দেখতে বছরটা কেটে গেল। মি. জ্যাকবকে সব সময় কাছে পেয়েছি। তার সহযোগিতা পেয়েছি তাই সময়টা কাটাতে কষ্ট অনুভব হয়নি। মিস জুলি গুম হওয়ার পর, চার্চের সেবিকাদের সাথে দুর্ব্যবহারের মাত্রা কমে এসেছিল। ভ্যাটিকান থেকে নাকি প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল। মিস জুলির অন্তর্ধানরহস্য উদঘাটন করতে। তাদেরকে কী বুঝ দেয়া হয়েছিল জানিনি, তবে রেসি কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়ে গিয়েছিল। ভালোয় ভালোয় সময়টুকু কেটে গেল। .


মুক্ত দুনিয়াতে বের হয়ে এলাম। মি. জ্যাকব অনেক সাহায্য করলেন। তিনি স্কুলের কাজে প্রায়ই শহরে যেতেন। তার সাথে অনেক কালো মানুষের পরিচয় ও সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাদের সূত্রে আমার থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্ত হলো। পড়াশোনার ব্যবস্থা হল। নির্যাতিত রেড ইন্ডিয়ানদের বিভিন্ন সংগঠনের সাথেও যোগাযোগ গড়ে উঠল। আমরা বাইরে বেরিয়ে আসলেও, কেন্দ্রীয় চার্চের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হত। অনেকটা আদালতে হাজিরা দেয়ার মত। চার্চের পক্ষ থেকে আমার কাছে জানতে চাওয়া হল, আমি আফ্রিকার গরীব কোনও দেশে সেবার জন্যে যেতে আগ্রহী কি না! মি. জ্যাকবের সাথে পরামর্শ করলাম। তিনি সম্মতি দিলেন। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম.


-আফ্রিকার কোন দেশে কাজ করতে পারি?
-তোমাকে বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিয়েছে?
-পরিষ্কার করে কিছু না বললেও, মনে হয় বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।
-আমার মনে হয়, মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতেই তোমাদেরকে পাঠানো হবে। কোনওভাবে চেষ্টা করে দেখবে, গন্তব্যের তালিকাতে ইথিওপিয়ার হারার অঞ্চল আছে কি না। যতদূর জানি থাকার কথা। কারন সেখানে বড়সড় একটা চার্চ খোলা হয়েছে। একটা মসজিদকে জোর করে গীর্জায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। গীর্জার পক্ষ থেকে একটা স্কুলও খোলা হয়েছে। 
-তোমাকে বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিয়েছে?-পরিষ্কার করে কিছু না বললেও, মনে হয় বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। -আমার মনে হয়, মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতেই তোমাদেরকে পাঠানো হবে। কোনওভাবে চেষ্টা করে দেখবে, গন্তব্যের তালিকাতে ইথিওপিয়ার হারার অঞ্চল আছে কি না। যতদূর জানি থাকার কথা। কারন সেখানে বড়সড় একটা চার্চ খোলা হয়েছে। একটা মসজিদকে জোর করে গীর্জায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। গীর্জার পক্ষ থেকে একটা স্কুলও খোলা হয়েছে। 


.আমার আবেদন মঞ্জুর করা হল। আমি পরিচিত এক প্রভাবশালী নানের মাধ্যমে আবেদন করলাম, আমার ওখানে কাজ করার সুবিধার্থে একজন লোকাল গার্জেন প্রয়োজন।-তুমি ওখানে গিয়ে কাজ শুরু করলে, এমনি এমনি অনেক গার্জেন তৈরী হয়ে যাবে। -একজন লোককে সাথে নিতে পারলে, চার্চ ও স্কুলের অনেক কাজ হবে। তিনি যিশুর একনিষ্ঠ অনুসারী। তাকে পেলে কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তিনি ওখানকর প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে। তিনি যিশুর অনুসারী হয়েছেন দেখলে, মানুষ দলে দলে তার অনুসরণ করবে! 


.কাজটা সহজ ছিল না। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দী হয়ে লেগে থাকলাম। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর চার্চ রাজি হল। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমে কিছুতেই মি. জ্যকবকে ছাড়তে রাজি হয়নি। ব্যাপারটা ভ্যাটিকান পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু ভ্যাটিকান তখন অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত ছিল বিধায় এদিকে মনোযোগ দিতে পারেনি। এদিকে মি. জ্যাকবও কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, তাকে সুন্দরভাবে ছাড়পত্র না দিলে, ব্যাপারটা কোর্ট পর্যন্ত গড়াবে! ব্যস অমনি কাজ হয়ে গেল। আমরা চলে এলাম হারার। মি. জ্যকব অল্প বয়েসী কেউ হলে, মানুষ অন্যরকম কিছু সন্দেহ করতে পারত! তিনি কালো তার উপর তিনি আমার বাবার বয়েসী। হিশেব করলে দেখা যাবে, আমার বাবার চেয়েও বড়। তাই তাকে সাথে নিয়ে আসার আবেদনে লোকজনের মনে ভিন্ন কিছু জাগল না। 


.বিলালের দাদার বাবা-মা কেউই বেঁচে ছিলেন না। বাবা শহীদ হয়েছিলেন ইতালিয়ানদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে। মা মারা গিয়েছেন স্বামী-পুত্রের শোকে ধুঁকতে ধুঁকতে। তিলে তিলে। তবে জমিজমা সব ঠিকঠাক ছিল। এখানকার মানুষ বেশ সৎ আর ধার্মিক। শত বছর ধরে তাদের মধ্যে নিষ্ঠার সাথে ধর্ম পালনের ব্যাপারটা চলে আসছে। আমি হারার আসার পর ইসলাম নিয়ে একমনে পড়াশোনা শুরু করলাম। চার্চে থাকাকালে আমি ধার্মিক খ্রিস্টান হয়ে থাকতাম। বাইরে বের হয়ে এলে স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ ছিল। এখানে একটা লাইব্রেরী ছিল। আফ্রিকার এতটা ভেতরে এমন লাইব্রেরির প্রচলন অবিশ্বাস্য। অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক লাইব্রেরি। সেখানে নিয়মিত পড়াশোনা করতে যেতাম। লাইব্রেরির পরিচালকও ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। তার সাথে কথা বলে, ইসলাম, আফ্রিকা, উপনিবেশ, শাদাদের নিপীড়ন সম্পর্কে অনেক অজানা ইতিহাস জানতে পেরেছি। 


.শুরু হল স্কুলের কাজ। আগে থেকেই কার্যক্রম চালু ছিল। আমরা এসে নতুন করে ঢেলে সাজালাম। এখানে আগে নারীশিক্ষার ব্যাপক প্রচলন ছিল। হারার আসার আগে আমাকে ইসলামের ইতিহাস, ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো সম্পর্কে ভাল করে ধারনা দেয়া হয়েছিল চার্চের পক্ষ থেকে। সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছিলাম। কাজের সুবিধা হবে, এই ছুতা দিয়ে চার্চের কাছে আরবী শেখার বায়না ধরেছিলাম। তারা রাজি হয়ে ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কারণ, হারারের মানুষের মধ্যে আরবী জানা লোককে শ্রদ্ধা করার মানসিকতা ছিল। .
গরীব দেশগুলোতে আমরা সাধারণত দেখি, পুরুষরা শিক্ষাদীক্ষায় নারীদের তুলনায় এগিয়ে থাকে। হারার ছিল তার সম্পূণ উল্টো। এখানে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি এগিয়ে ছিল। বড় বড় মহিলা মাদরাসা ছিল। সেই শত শত বছর আগে থেকে ঘরোয়াভাবে এই মাদরাসাগুলোর কার্যক্রম চলে আসছে। সম্রাট হাইলে সেলাস ক্ষমতায় বসেই মাদরাসাগুলো বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিল। কয়েক দশক ধরে মহিলা মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে ছিল। তা সত্ত্বেও ঘরোয়াভাবে শিক্ষার ধারা অবিরত বহমান ছিল। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে না হলে, কাজের গতি কমে একসময় যতি পড়ে যায়। এখানেও তাই হয়েছিল। চার্চ কর্তৃপক্ষ বুদ্ধি করে মেয়েদের জন্যে আবাসিক স্কুল খুলেছিল। কিন্তু খ্রিস্টবাদ শিক্ষা দেয়ার অপবাদে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে এখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন করে শুরু করতে সমস্যা হচ্ছিল। তবুও দু’জনের অক্লান্ত পরিশ্রমে কাজ শুরু হল। আমরা বুদ্ধি করে স্কুলটা শুরু করলাম আগের স্কুলভবনকে বাদ দিয়ে নতুন আরেক স্থানে। 


.আমি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রী সংগ্রহ করতে শুরু করলাম। বিলালের দাদাভাই তখনো নিজেকে সবার কাছে খ্রিস্টান হিশেবেই দেখাচ্ছিল। নইলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। মানুষ আমাদের প্রচারণায় কিছুটা আস্থার পরিচয় দিল। একজন দু’জন করে ছাত্রী দিতে শুরু করল। না দিয়ে আসলে উপায় ছিল না। মেয়েদের পড়াশোনার ভাল কোনও ব্যবস্থা ছিল না। সরকারের কঠিন নজরদারির চাপে, মেয়েদের মাদরাসাগুলো বন্ধ থাকার কারণে, কিছু পরিবারে মেয়েদের লেখাপড়া ভাল করে হলেও বেশির ভাগ পরিবারের অবস্থা ছিল শোচনীয়। মেয়েদের মাদরাসা নিষিদ্ধ করার মাত্র বিশ বছরের মধ্যেই অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে গেল। মেয়েদের ধর্মীয় চেতনা কমে গেল। পরিবারগুলোতে ধর্মীয় মূল্যবোধে ধ্বস নামল। আমি দেখেছি, মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগে মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত মযবুত। এজন্য পুরুষরাও যোগ্য হয়ে বেড়ে উঠতে পেরেছিল। চারপাশে খ্রিস্টানদের এত শক্তিমত্তা সত্বেও হারারেতে শত বছর ধরে ইসলাম এত গভীর প্রভাব নিয়ে বিদ্যমান থাকার প্রধান কারণও ছিল এখানকার অনন্য সাধারণ মহিলা মাদরাসাগুলো। 


.আমি অভিজ্ঞ ও বয়স্কদের সাথে কথা বলে, আগের শিক্ষাব্যবস্থাটা ভাল করে জেনে নিয়েছিলাম। সত্যিই অবাক করার মতো ঈর্ষণীয় একটা ব্যবস্থা ছিল। হারারে ইসলাম টিকে থাকার প্রধান ভূমিকা মহিলাদেরই ছিল। -কিভাবে? আমি তো শুনেছি, মুসলিম সমাজে মেয়েরা খুব পিছিয়ে থাকে! 


-নাহ, এটা সর্বৈব সত্য নয়। তবে এটা সত্য, ধর্মীয় পরিবারগুলোতে মেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে থাকে! তার মানে এই নয়, মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে কম শিক্ষিত বা কম যোগ্য! ধর্মীয় পরিম-লে মনে করা হয়, মেয়েদের দায়িত্ব হল ঘর সামলানো! ভাল মা হওয়া! ভাল স্ত্রী হওয়া। এসব হতে গেলে একজন মেয়েকে অনেক বেশি যোগ্য হতে হয়। এই যোগ্যতা স্কুল-কলেজ-মাদরাসার চার দেয়ালের মধ্যে পাওয়া যায় না। এটা অর্জন করতে হয় ঘরোয়া আবহে। তুমি যদি কাগজের সার্টিফিকেট দিয়ে ধর্মীয় ঘরানার নারীদের যোগ্যতা বিবেচনা করো, তাহলে এক কথায় তাদেরকে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে আছে বলে ঘোষণা দিয়ে বসবে। কিন্তু একটা সুন্দর পরিবার গড়ে তোলা, সন্তান লালন-পালন করা, একজন ভাল আদর্শ স্ত্রী হওয়ার দিকটা বিবেচনা করলে, পুরুষকে নারীর তুলনায় রীতিমতো মূর্খই মনে হবে। কারণ একজন আদর্শ মুসলিম স্ত্রী একসাথে এতগুলো দিক সামাল দেয়, একজন মুসলিম পুরুষ কল্পনাও করতে পারবে না! 
একজন আদর্শ মুসলিম নারী ও মুসলিম পুরুষের যোগ্যতাকে হিমশৈলের সাথে তুলনা করা যায়! একটা হিমশৈলের বেশির ভাগই পানির তলে ডুবে তাকে। সামান্য একটু অংশ পানির উপরে ভেসে থাকে। তোমার বোঝার জন্যে বলছি, একটি মুসলিম পরিবারে একজন নারীর পরিশ্রম ও ভূমিকা পানির নিচে ডুবে থাকা হিমশৈলের মতো। 

-আর পুরুষের ভূমিকা ভেসে থাকা অংশের মতো?-ঠিক তাই। তার মানে এই নয়, মুসলিম পরিবারে পুরুষের ভূমিকা একেবারেই গৌণ! -হিমশৈলের তুলনা কি তাহলে ভুল?-নাহ, ভুল নয়। একটু ভেবে দেখ, একটা সন্তানকে গর্ভে ধারন থেকে শুরু করে প্রায় তিন কি চার বছর পর্যন্ত শিশুকে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে বাবার ভূমিকা কেমন? একদম হিমশৈলের মতোই নয় কি?-জি¦ দাদু! এবার ঠিক বুঝেছি! হারারের মুসলিম নারীদের শিক্ষাব্যবস্থাটা কেমন ছিল?



-সে এক অনন্য শিক্ষাব্যবস্থা। মোটা দাগে কয়েকটা দিক তুলে ধরলে বুঝতে পারবে!

☛ ১: আমি হারারে এসে প্রথমে যে লাইব্রেরিতে পড়তে যেতাম, সেটা ছিল ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা। তোমাকে আগামীকাল নিয়ে যাব ওখানে। ওই লাইব্রেরিতে বেশির ভাগ পুঁথি-পুস্তক, কেতাবপত্রই মেয়েদের হাতে লেখা। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, হাতে লেখা হলেও, ছাপার অক্ষরের মতো গোট গোট আর পরিচ্ছন্ন! প্রতিটি পা-লিপিই পরিকল্পিত আর গোছালো। পাঠকের পড়তে কোনও সমস্যাই হয় না। আরও অবাক করা বিষয় হয়, লিপিকর মেয়েটি আ-ারলাইনে কঠিন স্থানগুলো সম্পর্কে নিজের বক্তব্যও যোগ করে দিয়েছে। ☛ ২: হারারের প্রতিটি মুসলিম মেয়ে জন্মের পর থেকেই বিশেষ তত্তাবধানে বেড়ে উঠতো। সন্তানসম্ভবা মাকে সব সময় বিভিন্ন আমল, কুরআন তিলাওয়াত, দ্বীনি আলোচনার মধ্যে রাখা হতো। তার ঘরের কাজ কমিয়ে দেয়া হতো। আশেপাশের প্রতিবেশিনীরা এসে তাকে সাহায্য করতো। 


☛ ৩: নবজাতক দেখাশোনার জন্যে প্রতিটি মহল্লায় দু’টি সম্মিলিত ঘর থাকতো। একটা ছেলে সন্তানের জন্যে আরেকটা মেয়ে সন্তানের জন্যে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন সেই সূতিকাগার নবজাতকের যাবতীয় দায়িত্ব বহন করত। মা প্রসবজনিত ধকল কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত শিশুকে সূতিকাগারই দেখাশোনা করত। 


☛ ৪: পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় কিছু ঘর নির্দিষ্ট করা ছিল। কোনও বাড়ি ছিল এক নাম্বার বাড়ি, কোনওটা দুই নাম্বার বাড়ি! এভাবে দশ পর্যন্ত থাকত। এক নাম্বার বাড়ি মানে, ও বাড়িতে একজন বা একাধিক অভিজ্ঞ মহিলা আছেন, তারা একবছর বয়েসী শিশুদের বিষয়ে যাবতীয় পরামর্শ দেবেন। পাড়ার সমস্ত এক বছর বয়েসী শিশুদের খোঁজখবর রাখবেন। বিশেষ করে মেয়েদের। দুই নাম্বার বাড়ি মানে দুই বছর বয়েসী শিশুদের দায়িত্বপ্রাপ্তা। 


☛ ৫: এই বাড়িগুলোর অভিজ্ঞ মহিলারা শুধু খোঁজ-খবরই রাখতেন না। শিশুদের লেখাপড়া-শিক্ষাদীক্ষার দিকটাও দেখতেন। একটু বুঝ হওয়ার পর থেকেই শিশুদেরকে তাদের কাছে দিনের কিছু সময়ের জন্যে রেখে আসা হত। শিশুরা সমবয়েসীদের সাথে খেলাধূলা করত। পাশাপাশি টুকটাক মৌখিক শিক্ষাও চলত। শিক্ষাটা কিছুতেই গৎবাঁধা পদ্ধতিতে হত না। খেলাধূলা আর হৈ-হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে হত। 


☛ ৬: একটা অদ্ভুত কাজও করা হতো, মাঝেমধ্যে দিনের কিছু সময় তিন বছর বয়েসীদেরকে দুই বছর বয়েসীদের সাথে রাখা হত! কখনো তিন বছরের শিশুকে চার বছর বয়েসীদের সাথে রাখা হতো। মানে ছোটদেরকে বড়দের সাথে, বড়দেরকে ছোটদের সাথে রাখা। -এটা কেন করা হতো?-বড়রা গত বছরগুলোতে যা শিখেছে, ছোটদেরকে সেটা খেলাধূলার ছলে শিখিয়ে দেবে। ছোটরা বড়দের কাছ থেকে শিখে নেবে। ছোটরা বড়দেরকে শ্রদ্ধা করবে। বড়রা ছোটদেরকে  করবে। 


☛ ৭: মেয়েদেরকে পাঁচ বছর বয়েস থেকেই ছেলেদের থেকে আলাদা করে ফেলা হতো। শিক্ষা থেকে শুরু করে সবই পৃথক। তবে ব্যতিক্রমী নিয়মও ছিল। -সেটা কী?-এখনো পর্দা ফরয হয়নি, দেখা দেয়া জায়েজ, এমন ছেলেমেয়েকেও সপ্তাহের একটা সময় একসাথে রাখা হতো। -কেন? -ছেলেরা বাইরে ঘোরার সুযোগ পায়। মেয়েরা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। ছেলে মেয়ে একদম পৃথক শিক্ষা-ব্যবস্থা হলে, পুরুষের কিছু অভিজ্ঞতা থেকে মেয়েরা বঞ্চিত থেকে যায়। আবার একটা মেয়ের সাথে কেমন আচরণ করবে এটাও ছেলেদের শেখা উচিত। সুস্থ সুন্দর গড়ে তোলার জন্যে নারী ও পুরুষের পারস্পরিক এই লেনদেনটা জরুরী। হারারেতে এটা ছিল সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মতভাবে। পর্দা করার বয়েস হয়ে গেলে, আর মিশতে দেয়া হত না। 


☛ ৭: আরেকটা নিয়মও বিস্ময়কর ছিল। এখানে বিয়ের বয়েস হলেই বিয়ে করিয়ে দেয়া হত। দেখা যেত ছেলে ও মেয়ে দু’জনেই এখনো পড়াই শেষ করেনি, অথচ তাদের সন্তান হয়ে গেছে। এ-পদ্ধতির কারণে হারারী সমাজে গুনাহের পরিমাণ ছিল না বললেই চলে। 


☛ ৮: ছয় সাত বা আট বছর থেকেই মেয়েদেরকে আলাদা মাদরাসায় দেয়া হত। আবাসিক অনাবাসিক দুই পদ্ধতির মহিলা মাদরাসাই ছিল। মাদরাসা বলতে প্রচলিত স্কুল সিস্টেমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো ছিল না সেগুলো। 


☛ ৯: মাদরাসাগুলোকে বলা হত, ‘মাদরাসাতুল উম্ম’। মায়েদের মাদরাসা। আসলেও মায়েদের মাদরাসাই ছিল। বইপত্র পড়ানোর চেয়ে মৌখিক ও ব্যবহারিক শিক্ষাই ছিল প্রধান। আর মাদরাসার পড়াশোনা শ্রেণীভিত্তিক ছিল না, ছিল বিষয়ভিত্তিক। পড়ার বিষয়ও খুব বেশি ছিল না। কুরআন কারীম। হাদীস শরীফ। নারী বিষয়ক ফিকহ। আকীদা। সীরাত। মহীয়সীদের জীবনী। 


☛ ১০: পরীক্ষা খুব বেশি গুরুত্ব পেত না। একটা বিষয়ে দক্ষ হয়েছে কি না, সেটা যাচাই হয়ে যেত, নিজের চেয়ে ছোটদেরকে পড়াতে গিয়ে। প্রতিটি ছাত্রীই একই সাথে শিক্ষার্থী ও শিক্ষিকা। তাদের পড়ার বিষয় ছিল কম। তাই প্রতিটি বিষয় খুবই ভালভাবে আয়ত্ত হয়ে যেত। একটা বিষয় ভাললাগে আয়ত্ত না হলে, আরেকটা বিষয়ে জোর দেয়া হত না। মাদরাসাতুল উম্মে গ্র্যাজুয়েশন পদ্ধতি ছিল না। মানে এসএসসি, অনার্স, মাস্টার্স এমন পরিভাষা ছিল না। তাদের মধ্যে ছিল কুরআনের হাফেজা। বুখারী শরীফের হাফেযা। এ-ধরনের পরিভাষাতেই তাদের শিক্ষা আর যোগ্যতাকে সংজ্ঞায়িত করা হত। 


☛ ১১: সংসারে কাজে লাগবে এমন বিষয়গুলোর প্রতি বেশি জোর দেয়া হত স্কুলে। সেলাই। রান্নাবান্না। রাগদমন। ধৈর্য-সবর। পর্দাপুশিদা। স্বামীভক্তি। শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধা। সন্তান লালনপালন ইত্যাদি। 


☛ ১২: মাদরাসাতুল উম্ম-এর ছাত্রীরা নির্দিষ্ট একটা সময় কাটাতো নাম্বারধারী বাড়িগুলোতে। অভিজ্ঞ মহিলাদের সাথে থেকে ছেলে-মেয়েদেরকে পড়াতো। কিছু সময় কাটাতো ‘সূতিকাগারগুলোতে’। নবজাতকের প্রতিপালন পদ্ধতি হাতেকলমে শিখতে। 


☛ ১৩: হারারি মুসলিম সমাজে একাধিক বিয়েরও বেশ প্রচলন ছিল। মেয়েরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে স্বামীকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করত। তাদেরকে মাদরাসা থেকেই এ-ব্যাপারে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে দেয়া হত। তাদের মন-মানসিকতা তৈরী করে দেয়া হত। সব পুরুষই একাধিক বিয়ে করত এমন নয়। বহু বিয়ের প্রথা সচল থাকার কারণে, ঘরে নারীরা সাংসারিক কাজ, সন্তান লালন পালন ও স্বামীর সেবায় চাপমুক্ত থাকতে পারত। পাশাপাশি পুরুষরাও পাপচিন্তা থেকে বেঁচে থাকতে পারত। এক বিবি সংসারের কাজে থাকলে বাকি বিবিরা শিক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকত। 


☛ ১৪: হারারী মুসলিম মেয়েদের উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল, তাদের হস্তলিখিত কুরআন শরীফ, হাদীসের কেতাবাদি ও অন্যান কিতাব। হারারে যত কিতাবাদি পড়ানো হত, সবই আসত মেয়েদের পক্ষ থেকে। প্রতিটি ঘরেই মেয়েরা দিনের একটা অংশ কাটাত কুরআন কারীম লিখে। মেয়েদের হাতের লেখার শিল্পটা উৎকর্ষের চরম শিখরে আরোহণ করেছিল। হারারের বিভিন্ন লাইব্রেরী দেখলে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। 


-আচ্ছা দাদু, আপনাদের গার্লস স্কুলটাও কি এমন ছিল? -প্রথম প্রথম ছিল না। পরের দিকে প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহনের পর আমরা চেষ্টা করেছিলাম পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু সম্রাটের বিধিনিষেধের কারণে হয়ে উঠছিল না। চার্চও বিষয়টাকে ভালভাবে নিতো না। তাই আমরা মধ্যমপন্থা ধরে এগুচ্ছিলাম। ...

(আগামীকাল শেষপর্ব। ইনশাআল্লাহ)

No comments:

Post a Comment